সৈয়দ আতিকুর রবঃ করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দা সহ সরকারের বাড়তি ব্যয়ের চাপ সামলাতে নাগরিকদের ওপর নতুন করে ট্যাক্সের বোঝা চাপাতে পারে আইরিশ সরকার। যদিও এপ্রিলে উপপ্রধানমন্ত্রী লিও ভার্দাকার এই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি আইরিশ টাইমসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কলামিস্ট ক্লিফ টেইলর তার এক নিবন্ধে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এবং কোন কোন পদ্ধতিতে সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে পারে তারও একটি ধারণা দিয়েছেন। ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার আগে আয়ারল্যান্ডে ট্যাক্স কমানো হয়েছিল; কিন্তু ঐ মন্দার প্রভাব কাটাতে এরপর বৃদ্ধি করা হয় ট্যাক্স। এরপর থেকে বাড়তি খরচ সামলাতে কর্পোরেট ট্যাক্সও বাড়ানো হয়। যদিও ২০১৩ সালের পর থেকে ট্যাক্সের হার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিলো। কিন্তু এবার করোনা মহামারীর ধকল সামলাতে আবারো ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হতে পারে। আর বৃদ্ধির পরিমানটি হতে পারে ধারণা চেয়ে অনেক বেশি। বৈশ্বিক সংস্কারের কারণে আইরিশ সরকারের কর্পোরেশন ট্যাক্স আদায়ের হার কমতে পারে। এছাড়া যানবাহন যান্ত্রিকীকরণের ফলেও প্রায় ৩ বিলিয়ন ইউরো ট্যাক্স কমার ঝুঁকি রয়েছে। গত সপ্তাহে ইকোনমিক এন্ড সোশ্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট(ইএসআরআই) এক রিপোর্টে বলেছে, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর- এই দুটি খাত থেকে সরকার বড় অংকের রাজস্ব পেতে পারে। ক্লিফ টেইলর তার নিবন্ধে বলেছেন, সরকার যেভাবেই আয় বাড়ানোর চেষ্টা করুক, জনগের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে সেটি সম্ভব নয়। আগামী বাজেটেই যে সেটি হবে তা নিশ্চিত হয়, তবে কিছু দিনের মধ্যেই ট্যাক্স বাড়বে সেটি নিশ্চিত। ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে প্রতিদিন সরকারের খরচ বাড়ছে। মহামারী ছাড়াও বিভিন্ন কারণে যে খরচ বাড়ছে সেটি আয় বৃদ্ধির নতুন কোন রাস্তা খোঁজা ছাড়া সরকারের পক্ষে জোগান দেয়া সম্ভব নয়। এছাড়া স্বাস্থ্যখাতের ওপর মহামারীর প্রভাব এবং সমাজসেবামূলক খরচ কর বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। এছাড়াও সরকারের ওপর খরচের অন্যান্য চাপ রয়েছে। আইরিশ ফিসক্যাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল জানিয়েছে, এবারের বাজেটে বাড়তি আরো ৫ বিলিয়ন ইউরো খরচ যোগ হবে, যেটি সরাসরি করোনা মহামারীর সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এছাড়া চলতি বছর বয়স্ক নাগরিকদের পেছনেও বাড়তি খরচ হবে। আর এই বাড়তি খরচ জোগাতেই সম্ভবত নতুন ট্যাক্স আরোপ করা হবে। ইএসআরআই তাদের রিপোর্টে বলেছে, ট্যাক্স যদি ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২১ শতাংশ করা হয় বা ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪১ শতাংশ করা হয় তবে এই খাত থেকেই প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো রাজস্ব আসবে সরকারের। এই বাড়তি ট্যাক্সের চাপটা উচ্চ আয়ের পরিবারগুলোর ওপরই বেশি প্রভাব ফেলবে। আর মূল্য সংযোজন কর ১ শতাংশ বাড়নো হলে সরকারের আয় বাড়বে ৬৯০ মিলিয়ন ইউরো। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আয়কর, স্থাবর সম্পত্তির কর, উত্তরাধিকারী করসহ আরো কিছু খাতে কর বৃদ্ধি করে সরকারের আয় বাড়ানো যেতে পারে। যদিও রাজনীতিকরা এসব বিষয়ে একমত হতে পারবেন না বলে মনে করা হয়। তবে আইরিশ সরকার বিষয়টি নিয়ে তড়িঘড়ি কোন সিদ্ধান্ত নিতে চায় না বলে জানা গেছে। ট্যাক্স ও সমাজকল্যাণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নতুন একটি কমিশন গঠন করে তাদের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিতে চায় সরকার। অর্থমন্ত্রী পাসচাল দোনোহো’র নেতৃত্বে এ বিষয়ক একটি কমিশন গঠনের কাজ চলছে। ২০২২ সালের গ্রীষ্মে এই কমিটির রিপোর্ট আসতে পারে। সরকার আরো চাইছে পুরো বিষয়টি একটি প্যাকেজ আকারে জনগনের সামনে তুলে ধরতে। যাতে বলা হবে আপনি কি পাবেন এবং এর বিনিময়ে আপনাকে কি দিতে হবে।
