ডিপোর্ট কার্যকরে নতুন আইন আনছে ইউরোপীয় কমিশন

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বসবাসরত অনিয়মিত অভিবাসীদের ডিপোর্ট বা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে নতুন একটু আইন করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন

কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লেয়েন সোমবার (১৪ অক্টোবর) ব্রাসেলসে এ ঘোষণা দিয়েছেন। জোটের ২৭টি দেশকে অবহিত করতে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, “কমিশন শিগগিরই একটি নতুন আইনি প্রস্তাব উপস্থাপন করবে৷ যেখানে আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করে প্রত্যাবাসন বা ডিপোর্ট কার্যকর করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে৷’’

উরসুলা ফন ডেয়ার লেয়েন বলেন, ‘‘আমাদের কর্মক্ষমতা জোরদার করার জন্য একটি নতুন আইনি কাঠামো দরকার৷’’

চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় শীর্ষ সম্মেলনের আগে অভিবাসন ইস্যুতে এমন প্রস্তাবনা দিলেন কমিশনের প্রধান৷

নতুন আইনের মাধ্যমে যেসব সদস্য দেশে অনিয়মিত অভিবাসীরা আছেন সেই দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার এবং যৌথ সিদ্ধান্তে মাধ্যমে দ্রুত ‘বহিষ্কার’ বাস্তবায়ন করতে চায় ব্রাসেলস৷

উরসুলা ফন ডেয়ার লেয়েন বলেন, ‘‘আমাদেরকে অবশ্যই একটি সমন্বিত এবং পারষ্পরিক বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে হবে৷ এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা হবে যে, অভিবাসীরা একটি দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর প্রত্যাবাসন এড়াতে যেন সিস্টেমের ফাঁকফোকর ব্যবহার করতে না পারেন৷’’

তিনি বলেন, অনিয়মিত পরিস্থিতিতে থাকা অভিবাসীদের বহিষ্কার কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ইইউ দেশগুলোতে ২০ শতাংশেরও কম৷

তিনি সংশ্লিষ্ট তৃতীয় দেশগুলোর সাথে আরো শক্তিশালী সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যেসব দেশ কনস্যুলার পাস ইস্যু করতে অসহযোগিতা করবে সেসব দেশে ভিসা প্রক্রিয়াকে কঠোর করা৷

অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করার কৌশল একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান৷ এক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ও ঘানার কথা৷

অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত নিতে বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশের উপর ইইউ চাপ প্রয়োগ করে আসছিল৷ বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় ২০২১ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সাময়িক কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করেছিল ইউরোপীয় কমিশন৷ এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ছাড়া ইরাক এবং গাম্বিয়াকেও ওই সময় যুক্ত করা হয়৷

বার্তা সংস্থা এএফপি অবশ্য জানিয়েছে এখন পর্যন্ত ইইউ শুধু গাম্বিয়ার উপরই ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করেছে৷ এতে দেশটির নাগরিকদের জন্য শেঙেন ভিসা পাওয়া কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়েছে৷ বাংলাদেশ ও ইরাকের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হলেও তা কার্যকর হয়নি৷

২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরকালে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সাবেক ইইউ কমিশনার ইলফা ইয়োহানসন বলেছিলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকির পর ঢাকা অনিয়মিত অভিবাসীদের গ্রহণে ‘রাজনৈতিকভাবে আরো উদারতার’ পরিচয় দিয়েছে৷

২০১৭ সালের আগস্টে বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তি হয়৷ তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময়ে চাপ দিয়ে এসেছে ইইউ৷

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট তার চিঠিতে লিবিয়া বা টিউনিশিয়ার সাথে যেসব চুক্তি করা হয়েছে সেগুলোর মতো অনিয়মিত অভিবাসীদের মূল দেশ ও ট্রানজিট দেশগুলোর সাথে ‘কৌশলগত’ সম্পর্ক গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন৷

টিউনিশিয়া এবং লিবিয়ার সাথে হওয়া ইইউর চুক্তিগুলো সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অভিবাসীদের অনিয়মিত প্রবেশ প্রায় ৬৬ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব করেছে৷

অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক হয়ে স্পেনে আসা অভিবাসীর হার চলতি বছরে ৫৬ শতাংশ বেড়েছে৷ তিনি মৌরিতানিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারত্ব জোরদার করার সুপারিশ করেছেন৷ যাতে এসব দেশ থেকে ইউরোপমুখী যাত্রা কমানো যায়৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত বৃহস্পতিবার লুক্সেমবুর্গে ব্লকের অভিবাসন নীতিকে আরো কঠোর করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন৷ তারা অনিয়মিতদের প্রত্যাবাসনের নির্দেশিকা সংশোধন এবং আলবেনিয়ার মতো তৃতীয় দেশে অভিবাসীদের স্থানান্তর নিয়ে আলোচনা করেছেন৷

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস।

SHARE THIS ARTICLE