ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনা করা রিপোর্ট প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গত নভেম্বরে বাংলাদেশ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে কমনওয়েলথের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি)। সেই রিপোর্টে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা হয়। তবে রিপোর্টটি প্রকাশের পর অভিযোগ ওঠে, এটি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এবং এর তথ্যগুলো সঠিক নয়। এমন সমালোচনার পর ওই রিপোর্ট প্রত্যাহার করেছেন ব্রিটিশ এমপিরা।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, লেবার দলের একজন এমপি হাউস অব কমন্সে এই রিপোর্টের বিষয়ে আপত্তি তুলে ধরেন। এরপর ব্রিটিশ এমপিরা প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের পক্ষে মতামত দেন। রিপোর্টটি এখন পর্যালোচনাধীন একটি অভ্যন্তরীণ নথি হিসেবে রয়ে গেছে এবং এটি আর প্রচার করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা।

‘দ্য অনগোয়িং সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টটি নভেম্বরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর তিন মাস আগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকে দমনে সর্বোচ্চ নৃশংসতা দেখায় নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয় এবং হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তবে হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে অন্তত ১,০০০ মানুষ নিহত হয়।

গার্ডিয়ান লিখেছে- এপিপিজির ওই প্রতিবেদনে হাসিনার উত্তরসূরি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ধারাবাহিক সমালোচনা করা হয়। ওই রিপোর্টে ড. ইউনূস প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ইউনূস প্রশাসন। একই সঙ্গে কট্টর ইসলামপন্থিদের ক্ষমতায়ন করছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, নেতা, এমপি, সাবেক বিচারপতি, পণ্ডিতজন, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং এসব হত্যায় জড়িত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এক্ষেত্রে তারা নয়া দিল্লিভিত্তিক রাইটস অ্যান্ড রিস্ক এনালাইসিস গ্রুপের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার কথা বলে।

রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অর্থাৎ জুলাই আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বেশিরভাগ মানুষ অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু আগস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার যে রিপোর্ট প্রকাশ করে এই রিপোর্ট তার বিপরীত।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার তার রিপোর্টে বলেন, বেশির ভাগ মৃত্যু এবং আহতের ঘটনা ঘটেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠনের কারণে। এপিপিজির রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকায় নতুন সরকার নিরপরাধ এক লাখ ৯৪ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, সম্ভাব্য অপরাধে জড়িত বলে পুলিশ তার রিপোর্টে যে সংখ্যা উল্লেখ করেছে, এই সংখ্যা সেটার মতোই।

মিথ্যা তথ্য থাকা এবং ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট দাবি করে বিশেষজ্ঞরা এই রিপোর্টের সমালোচনা করেন। ব্রিটিশ লেবার দলের এমপি রূপা হক সম্প্রতি বাংলাদেশে সময় কাটিয়েছেন। তিনি এ সপ্তাহে হাউস অব কমন্সে এই রিপোর্টের সমালোচনা করেন।

লন্ডনে স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের প্রফেসর নাওমি হোসেন বলেন, এপিপিজির ওই রিপোর্ট মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ। জবাবদিহিতার হাতিয়ার হিসেবে এটা পুরোপুরি ব্যর্থ। এপিপিজির একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা কমনওয়েলথ অব নেশন্স-এর দিকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশি মনোনিবেশ করবে। তারা দেশভিত্তিক আর রিপোর্ট প্রকাশ করবে না।

SHARE THIS ARTICLE