
লেখক-রহমান ফাহমিদাঃ ২য় পর্ব- মায়াবীদের বাড়িটি একতলা। পাঁচটি বেডরুমসহ, ড্রয়িংরুম, কিচেন, তিনটি বাথরুম ও তিনটি বড় বড় টানা বারান্দাসহ গেটের সামনে ফুলেরবাগান নিয়ে সাতকাঠার মধ্যে বাড়িটি তৈরি।বাড়িতে দুইটি পেয়ারা,বেল,নারিকেল,কুলবরই ও কয়েকটি সুপারি গাছও আছে।ফাহিম মাঝে মাঝেই মায়াবীদের বাসায় যে পেয়ারা গাছ আছে,সেই পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা পেড়ে এনে বলে-নাও তোমার জন্য এনেছি।
মায়াবী তখন ঠোঁট ফুলিয়ে ভেংচি কেটে বলে-ইস! আমাদেরই গাছের পেয়ারা,আমার জন্যে এনেছে!খুব বাহাদুরীর কাজ করেছে।
ফাহিম তখন হো হো করে হেসে উঠে উল্টো বলে-হলোই বা তোমাদের পেয়ারা গাছ!নিজের পয়সায় কিনে না আনলেও তোমাদের গাছ থেকে তো কষ্ট করে পেড়ে এনেছি,এটাই কি কম বাহাদুরীর কাজ নয়!
মায়াবী তখন ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বলে-“কচু”যে কোন কথায় কচু বলা মায়াবতীর মুদ্রাদোষ বা অভ্যাস।তারপর ফাহিমের সাথে যুক্তিতে পারবেনা দেখে মায়াবী চুপ করে গালফুলিয়ে বসে থাকে।শেষ পর্যন্ত ফাহিমকেই ঐ রাগ ভাঙাতে হয়।
ফেসবুকের নেশাটা হয়েছে ফাহিমের জন্য।ও সকালে উঠে শুভ সকাল দিয়ে শুরু করে, রাত্রে শুভ রাত্ত্রি দিয়ে শেষ করে।ফাহিম,যখন তখন নানান রকম মজার মজার পোস্ট শেয়ার করে।কখনো কখনো এমন হয়,পোস্টগুলো দেখে মায়াবীর হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়।তাইতো ও ঘুম থেকে উঠেই অপেক্ষা করে,ফাহিম কখন ঘুম থেকে উঠবে আর গুডমর্নিং এর সাথে সাথে একটি ভালোবাসার স্টিকার পাঠাবে!যখন কলেজ থাকেনা তখন সারাদিনই বাসায় মায়াবী নেট ওপেন করে রাখে কখন ফাহিম মেসেঞ্জারে বসবে।এ কেমন অনুভূতি মায়াবী নিজেও জানেনা।ওর সমস্ত ভাবনায় ফাহিমকে জড়িয়ে আছে।ফাহিমের,প্রতি ওর অনেক বিশ্বাস!মায়াবীর ধারণা ফাহিম কখনো মায়াবীকে কষ্ট দিবেনা।দিনে দিনে ফাহিমের প্রতি ওর ভালোবাসা বেড়েই চলেছে।তাই তো ইদানিং ফাহিম কোন মেয়ের কথা বললে মায়াবী সহ্য করতে পারেনা।বারবার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে,ও ফেসবুকে কার ছবিতে বেশী লাইক দিচ্ছে,কাকে বেশি প্রশংসা করছে, এমনকি ওর ছবিতে কোন্ মেয়ে বেশি লাইক দিচ্ছে এবং কে প্রশংসা করছে সব সব খেয়াল করে।মাঝে মাঝে যখন ও অনলাইনে গিয়ে দেখে ফাহিমের অনলাইন ওপেন মানে সবুজ বাতি জ্বলছে কিন্তু ও কিছু লিখে পাঠালেও ফাহিম কোন উত্তর দিচ্ছেনা!তখন ও ফাহিমকে মোবাইলে কল করে বলে তুমি উত্তর দিচ্ছ না কেন?
ফাহিম তখন রেগে গিয়ে বলে-আমি তো ফেসবুকে ছিলাম না!উত্তর দিব কি ?
মায়াবী ওর কথা মানতে পারেনা,তাই মায়াবী, আরও রেগে গিয়ে বলে-আমি তো তোমার অনলাইনে সবুজবাতি জ্বলতে দেখেছি।
ফাহিম বলে-কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা!আমি থাকলে তো উত্তর দিব?সবুজবাতি জ্বললেই ধরে নিবে আমি ফেসবুকে আছি!আমার নেট তো সারাক্ষণই অন থাকে তাই বলেকি আমি ওখানেই বসে থাকি!আমার আর কোন কাজ নেই?নেট ওপেন করে মানুষ মরেও যেতে পারে,তাহলে কি তুমি সবুজবাতি দেখে বলবে,সে ফেসবুকে বসে আছে?এখনো বলছি,আমাকে অবিশ্বাস করো না!তাহলে নিজেই কষ্ট পাবে।আমি এমন কিছু করবো না,যেজন্যে তুমি কষ্ট পাবে!আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি,তা বুঝার চেষ্টা কর,জান।বিকেলে আসছি,তোমাদের বাসায়।এখন আব্বার,সাথে একটু কাজে যাব।তাড়াতাড়ি কিছু বল!কারণ কলটা রাখতে হবে।
মায়াবী বল্ল-কি বলবো?
ফাহিম-তুমি জানো কি বলবে!তাড়াতাড়ি কর।
মায়াবী বল্ল-আই লাভ ইউ।
ফাহিম-উম-ম-মাহ!লাভ ইউ,মাই গুড গার্ল।বাই।
মায়াবী বল্ল–বাই।ফাহিমের এই ধরণের কথা শুনে মনে হয়,আসলেই ফাহিম সত্যি কথাই বলছে।তারপরেও ওর ভেতরে কেন জানি একটি ভয় কাজ করে!
মাঝে মাঝে ভাইয়া ও মিলা আপুর সাথে ওরা দুজনও এদিকওদিক ঘুরতে যায়।তখন খুব মজা হয় কারণ ওদের দুজনের মধ্যে যে,বন্ধুত্ত্ব ছাড়াও একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারেনি!এটাই ওদের প্লাস পয়েন্ট।আজকেও ওরা ভাইয়া আর মিলা আপুর সাথে ঘুরতে এসেছে আশুলিয়াতে।নৌকাতে চড়ে ঘুরবে।
ফাহিম,মায়াবীকে বল্ল-আজকে কিন্তু আমি নৌকাতে তোমার হাত ধরে বসবো।যে যাইই ভাবুক।
মায়াবী বল্ল-তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে!ভাইয়া আপু কি ভাববে!কেউ জানে না তোমার আমার সম্পর্কের কথা,এটাই তো ভাল।জানলে পরে কি হবে কে জানে?
ফাহিম-তুমি কি মনে কর তারা জানে না বা বোঝে না?সব বোঝে।তা নাহলে আমাদের দুজনকে সবসময় একসাথে নিয়ে আসে কেন?আমি জানি আপুনি তোমাকে খুব পছন্দ করে।ভাইয়াও হয়তো আমাকে।ঠিক আছে আজকে না হয় তোমার হাত না ধরলাম কিন্তু পরে আর শুনবো না।আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তাই ইচ্ছেটা বেশি হচ্ছে।
মায়াবী এ কথার আর কি উত্তর দিবে!তাই চুপ করে থাকাই সমীচীন মনে করল।ফাহিম,যখন ওকে সুন্দর বলে তখন ওর খুব ভালো লাগে তারপরেও মনে মনে ভাবে ওতো মিলাআপুর মত ওইরকম সুন্দর না!কারণ মিলাআপুর গায়ের রঙ অনেক ফর্সা।ফাহিমও মোটামুটি ফর্সা।আর ওতো শ্যামলা।ভাইয়াও ফর্সা,ভাইয়া মায়ের গায়ের রঙ পেয়েছে আর ও ওর বাবার।বাবা অবশ্য ওর চেয়ে অনেক কালো।তাই ও মাঝেমাঝে ভাবে,আল্লাহ ভাইয়াকে ফর্সা না বানিয়ে ওকেই তো বানাতে পারত!
আশুলিয়ায় এসে মায়াবী দেখল ছোট নদীটির তীর ঘেঁষে অনেক প্রেমিক প্রেমিকার জুটি বসে আছে।কেউ কেউ একজন আরেকজনের হাত ধরে কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। আবার কোন মেয়ে হয়তো ওড়না দিয়ে চোখ মুছছে আর তার সঙ্গী তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে,হয়তো মান অভিমানের পালা চলছে।কোন কোন জুটি আবার ছোট ছোট নৌকায় চড়ে নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।সেখানেও দেখা যাচ্ছে অন্যরকম দৃশ্য!প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে প্রেমিক হয়তো গল্প করছে আর প্রেমিকা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ঢাকায় প্রেমিক প্রেমিকার জন্য টাইম পাস করার তেমন জায়গা নেই বলেই হয়তো সবাই এখানে রিলাক্সে ঘুরতে আসে।মায়াবী ভাবল ভাইয়াও মনে হয় সেজন্যেই এসেছে!ক্লাসের পড়ার চাপে হয়তো ভাইয়া আর মিলা আপু গল্প করার স্কোপ পায়না।আবার এটাও ভাবল!তাই যদি হয় তাহলে ‘কাবাব মে হাড্ডির” মত ওদের দুজনকে সাথে করে নিয়ে আসলো কেন?ধেৎ এতকিছু ও কেন ভাবছে!বেড়াতে নিয়ে এসেছে তাই বেড়িয়ে চলে যাবে।ভালই তো হল,ও আর ফাহিম নিজেদের জন্য কিছু সময় পেল।মনে মনে বল্ল,থাঙ্কস ভাইয়া।কিন্তু ফাহিমের মোটিভ ভাল মনে হচ্ছে না।আল্লাহই জানেন!ওর মনে কি চলছে।ভাইয়া আর মিলা আপুর কাছে না আবার ধরা পড়ে যায়!
নৌকায় উঠতে যাবে,এর মধ্যে ছোট একটি মেয়ে অনেকগুলো বেলি আর গোলাপ ফুল নিয়ে এসে ভাইয়াকে বলছে-সাহেব সাহেব,মেম সাহেবের জন্য(মিলা আপুকে দেখিয়ে)মালা আর ফুল নেন্না।
ভাইয়া মিলা আপুর দিকে ফিরে বল্ল-ফুল নিবে?ভাইয়াটা এত্ত বোকা,মিলা আপু কি বলবে, হ্যাঁ নিব।আপু লজ্জা পেয়ে গেল দেখে মায়াবী বলল তার ভাইয়াকে-ভাইয়া তুমি এত বোকা কেন!মিলা আপুকে ফুল কিনে দিবে তা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়!কিনে দেও।
ভাইয়া বেলিফুলের মালা আর কয়েকটি গোলাপ ফুল কিনে দিলে,আপু তার চুলের মধ্যে লাগিয়ে নিল।আপুকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল।মিলা আপু মায়াবীকে একটি বেলি ফুলের মালা দিলে মায়াবী তা হাতে পড়ে নি্ল।এই সুযোগে রূপম মায়াবীকে বল্ল-দেখি দেখি তোমার হাতটা,একটু ফুলের ঘ্রাণ নেই।মায়াবীকে না বলার সুযোগও দিলনা!মায়াবীর হাতটি ধরে নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ শোঁকার নামে হাতে চুমু দিয়ে দিল।মায়াবী,মনে মনে বল্ল,পাজি কোথাকার!রাগ দেখালেও,মায়াবীর সেই মুহূর্তটা অনেক ভাল লেগেছিল।সেদিন সারাদিন ঘোরাঘুরি করে রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে তারপর ফাহিম আর মিলা আপুকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে,ওরা ভাইবোন বাসায় ফিরল।ভাইয়া,মাকে বলে গিয়েছিল আজ বাইরে খাবে, তাই মা বাবা ওদের জন্য অপেক্ষা না করে খেয়েদেয়ে টিভি দেখছে।
রাতে ফাহিম মায়াবীকে কল করে বল্ল-দেখলে তো, আমি যা বলি তা করি!
মায়াবী বল্ল-হুম!তা তো দেখলাম।ভাইয়া আর মিলা আপু নিজেদের নিয়ে বিজি ছিল বলেই আপনি তা করতে পারলেন,জনাব।তা নাহলে।
ফাহিম বল্ল-বাদ দেও,কি হতো তা ভেবে লাভ নেই।তবে আপসোস রয়ে গেল একটা!তোমার টসটসে ঠোঁটে আমার ঠোঁটের পরশ বুলাতে পারলাম নাহ।
মায়াবী বল্ল-কি যে বলো না!
ফাহিম বল্ল-ঠিকই বলেছি।আপনার কি ভালো লাগেনি সেই মুহূর্ত,জনাবা?আপনি অবশ্য স্বীকার করবেননা!আমি তা ফিল করেছি।
মায়াবী বল্ল-কিভাবে?
ফাহিম-কারণ আপনি আমার ঠোঁটের পরশ পেয়ে কেঁপে উঠেছিলেন,বুঝেছেন!আমাকে মিথ্যে কথা বলে ফাঁকি দিতে পারবেন না।এই বলে ফাহিম হাসতে লাগলো।
মায়াবী বুঝল ধরা পড়ে গেছে ওর কাছে!তাই আর কি বলবে সেজন্যে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল বল্ল-তোমার কালকে কি কাজ?
ফাহিম-কলেজ আছে পাঁচটা পর্যন্ত তারপর যদি লাইব্রেরিতে যাই হয়তো বাসায় ফিরতে দেরি হবে।কেন? তোমার কি দরকার?
মায়াবী-নাহ!আমিও কালকে একটু বিজি থাকব কারণ জেরিনের কালকে জন্মদিন।সবাই ওর বাসায় যাবে।তাই হয়তো বাসায় আসতে রাত হবে।তাই ভাবলাম,তুমি যদি আসো আমাদের বাসায় তাহলে তো আমাকে পাবেনা।
ফাহিম-তুমি যাও,তোমার ক্লোজ ফ্রেইন্ড,আর তুমি যাবেনা!আমি একদিন না আসলে আর কি হবে।রাতে তো কথা হবেই। তোমার সুন্দরী বান্ধবীকে আমার তরফ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিও।
মায়াবীর খুব রাগ হল ফাহিমের কথা শুনে কিন্তু মুখে কিছু বল্ল না।শুধু বল্ল,ঠিক আছে জানিয়ে দিব।
ফাহিমের এইসব ব্যাপারে ওকে,ওর প্রতি সন্দিহান করে তুলে।মাঝে মাঝে মায়াবী ফাহিমকে একদম বুঝতে পারেনা।ফাহিমের ছটফট ভাব মায়াবীর একদম ভালোলাগেনা।যেদিন জেরিনের সাথে প্রথম আলাপ করিয়ে দিয়েছিল সেদিনও ফাহিম খুব আগ্রহ নিয়ে জেরিনের সাথে কথা বলছিল।জেরিন দেখতে অনেক সুন্দর এবং অনেক লম্বা।ওর গায়ের রঙ ফর্সা এবং খুব কথা বলে সবার সাথে, চিনুক আর না চিনুক।ফাহিমের মতই খুব চঞ্চল।যে কোন ছেলেই প্রথম দেখাতে ওকে পছন্দ করে ফেলবে।জেরিনও অনেক সময় বন্ধুদের ফেসবুক চ্যাটের সময় ফাহিমের কথা জানতে চায়।এসব মায়াবীর ভালো লাগেনা তাই অন্ন কথা বলে এড়িয়ে চলে।জেরিন জানে ফাহিমের সাথে মায়াবীর সম্পর্ক আছে তারপরেও কেনরে বাবা!প্রথম দিনই ফাহিমকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।ফাহিম যখন ওকে বলেছে-তোমার বান্ধবি আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে ।
মায়াবী বলেছে–আমার কোন বান্ধবিকে তুমি একসেপ্ট করবেনা কারণ আমি চাইনা আমার আর তোমার মাঝে অন্য কেউ থাকুক।যদি কারো রিকোয়েস্ট গ্রহণ কর তাহলে তুমি আমাকে বাদ দিতে পার।
ফাহিম বলেছে-তোমাকে বাদ দিব!মাথা খারাপ হয়েছে আমার।আপনি হলেন আমার ময়নাপাখি।তাই আপনার উপদেশ শিরোধার্য,জনাবা।এইবলে হাসতে লাগলো।ফাহিম,মাঝে মাঝেই দুষ্টুমি করে মায়াবীকে আপনি বলে।অবশ্য মায়াবীও তাই।
জেরিন ফাহিমকে রিকোয়েস্টে পাঠানোর ব্যাপারটা জানার পর থেকেই মায়াবী ফাহিমের আইডি ঘনঘন চেক করে।কারণ ছেলে মানুষের মন!বলা তো যায়না।বেনু হলো মায়াবীর সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী।বেনু বলেছে,সাবধানে থাকবি কারণ মানুষ খুব খারাপ!ওর এই কথার পেছনে যুক্তিযুক্ত কারণ আছে।
আজকাল নাকি ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক মেয়ে এবং ছেলেরা নানান ভাবে একজন আরেকজনকে আকৃষ্ট করে তারপর দেখা করে।তার ফলশ্রুতিতে বেডরিলেশন পর্যন্ত গড়ায়।সেই কারণে সুইসাইডসহ নানান ক্রাইম হচ্ছে সমাজে।সেইক্ষেত্রে ভারতীয় টিভির সিরিয়ালও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী বলা যায়।মাঝে মাঝে সিরিয়ালগুলোতে এমন সব কাহিনী দেখায় যা টিনএজদের মনে প্রভাব পড়ে।তবে সব সিরিয়াল বা অনুষ্ঠানগুলো খারাপ তা নয়!তাছাড়া ফেসবুকে ইদানিং অনেকেই বাটপারি করে আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে অনেকের টাকা পয়সাও হাতিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।তাছাড়া নতুন একটি ট্রেডও নাকি এসেছে যেমন-কিছু ছোট ছোট ছেলেরা বড়বড় বিত্তশালী মহিলাদের সাথে পরকিয়া প্রেমে জরিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সর্বস্ব লুটেপুটে খাচ্ছে।দু’দিন পর পর আবার আরেকজনকে ধরছে,নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য।তেমনি কিছু বয়স্ক মহিলারাও ছোট ছোট ছেলেদের নাচাতে কম জানে না।তাছাড়া ফেক আইডিরও একটা ব্যাপার আছে,তা হোল অনেক ছেলে মেয়ে সেজে মানে মেয়েদের নানান সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে প্রোফাইল খুলে এবং সেই সাথে বিদেশের ঠিকানা দিয়ে আইডি খুলে ছেলেদের রিকোয়েস্ট পাঠায় আর এ্যাড হয়।এইসকল কুরুচিপূর্ণ ছেলেদের কথা শুনে মায়াবী অবাক হয়ে যায় এই ভেবে যে,এদের কি বিবেকবুদ্ধি এতটাই লোপ পেয়েছে যে মেয়ে সেজে আরেকটি ছেলের সাথে এ্যাড হতে হবে!ইদানিং ইন্টারনেট ব্যাবহারে অনেক কড়াকড়ি আইন হয়েছে।যে কেউ যা ইচ্ছে তাই করতে পারেনা।তবে যারা এসব ব্যাপারে এক্সপার্ট তারা তো তাদের দুইনাম্বারি চালানোর জন্য নানান রকম ফাঁকফোকর ঠিকই বের করে ফেলে!যা কিনা অনেকসময় অনেকের বিপদ ডেকে আনে।
তবে ফেসবুকে যে,শুধু খারাপ দিক আছে তা নয়!মায়াবীদের এক বান্ধবী তো ফেসবুকে লেখালেখি করে অনেক নাম করেছে।তাছাড়া এখন ফেসবুকে অনেকেই গল্প,কবিতা,ছড়া ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালেখি করছে এবং অনেক আপডেট খবরও ফেসবুকের মাধ্যমে আগেই জানা যাচ্ছে।তার মধ্যে অনেক আনন্দ ও দুঃখের সংবাদও থাকে।যে সবকিছু বুঝে চলতে পারে তার জন্য ভাল আর যে না বুঝে চলে, তাহলেই ধরা!
বেনুর কাছে এসব শোনার পর মায়াবীর মনে হল ফাহিমও কি এরকম!ফাহিম এরকম হতেই পারে না।কারণ ফাহিমের প্রতি ওর অঘাত বিশ্বাস।তারপরেও মনে যে ওর ছেলেদের প্রতি সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করেছে তা থেকে ফাহিমকেও বাদ দিতে পারেনা।সেই সন্ধেহের বশবর্তী হয়েই ও ভয় পায় ফাহিমকে নিয়ে।সেজন্যে ঘন ঘন ওর প্রোফাইল চেক করে।
একদিন ডিনারের সময় মায়াবীদের পরিবারের সবাই যখন একসাথে ডিনার করছিল তখন মায়াবীর বাবা মায়াবীর মাকে বললেন-মেঘের তো ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার বেশি দেরী নেই!আমি ভাবছি পাশ করার পর ওকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিব।পিএইচডি করতে।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে বল্লেন-মেঘ তুমি কি বল?
মেঘ বল্ল-বাবা,আমি দেশেই জব করতে চাই।ভাল একটি ভার্সিটিতে পড়ে নিজের দেশেই যদি না থাকলাম তাহলে এত লেখাপড়া করে কি লাভ হল!দেশকে কিছু দেয়ার জন্যে ত আমাদের তৈরি করা,তাইনা বাবা?আমরা যদি নিজের মেধা অন্য দেশে কাজে লাগাই তাহলে আমাদের দেশের উন্নতি কিভাবে হবে,বাবা।
মায়াবীর মা বাবা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মায়াবীর মা হঠাৎ করে বলে উঠল-কিরে বাবা,তুই আবার রাজনীতিতে ঢুকে পরিসনি তো!এমনভাবে দেশ নিয়ে চিন্তা করছিস?
মেঘ বলল,রাজনীতি করলেই দেশের কথা ভাবতে হবে!শুধু কি রাজনীতিবিদরাই দেশের কথা ভাববে!আমরা মানে সাধারণ মানুষ দেশের কথা ভাববো না।তুমি আমার মা হয়ে এটা কি বললে মা?
মায়াবীর মা জানে তাঁর ছেলে অনেক বাস্তববাদী।এখনো পর্যন্ত এমন কিছু করেনি! যেজন্যে তাদের বাবা মা দুজনের মাথা হেঁট হয়ে যায়!মা তাই হেসে বল্ল- তোর মা বলেই ত স্বাধীনভাবে স্বাধীনদেশে মতামত প্রকাশ করলাম।
ওর বাবা হেসে বলল,গ্রেট!যেমন ছেলে তেমন মা।
মেঘ আপত্তি করে বলল,বাবা বল,যেমন মা তেমন ছেলে।সবাই একসাথে হেসে উঠল।
তারপর মা বলল,কিন্তু বাবা,মিলা কি তোর সাথে একমত?ও কি ভাবছে!পড়ালেখা শেষ করে কি করবে?
মেঘ একটু লজ্জা পেয়ে বলল,আমি কি জানি!তবে যতদুর জানি ও দেশেই থাকতে চায়।
মা বলল, আমি ভাবছি, তোদের ফাইনাল পরীক্ষার পর দুজনের আকদ করে রাখব।
বাবা আপত্তি করে বললেন,আকদ-টাদ কিচ্ছু হবেনা।এই কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে মায়াবীর বাবার দিকে তাকাল।মায়াবীর ভাইয়া,অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
মায়াবীর মা অবাক হয়ে বলল,মানে?তুমি এতদিন পর এসব কি বলছ?
বাবা বললেন-আমি বলতে চাই,ডাইরেক্ট বিয়ে।এসব আকদ-টাদ আমি বিশ্বাস করিনা।দেখতেও ভাল লাগেনা।
সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।মায়াবী চিৎকার করে উঠল-হুড়রে!বাবা,তুমি ঠিক বলেছ।মিলা আপু আমাদের বাসায় আসলে খুব মজা হবে।
মা ধমক দিয়ে বলল,আপু কিরে!ভাবি বল।এখন থেকে প্রাকটিস শুরু কর,তানাহলে ত আপুই ডাকতে থাকবি।
ভাইয়া শুনে লজ্জা পেয়ে বলল, মা,আমার খাওয়া হয়ে গেছে,আমি এখন উঠছি।
ভাইয়া উঠে যাবার পর বাবা,মাকে বললেন, ওদের বাসায় একদিন গিয়ে ফয়েজ আর ওর বউয়ের সাথে বলতে হবে।ফয়েজ হল মিলা আপুর বাবা,ডাক্তার।স্কুল লাইফ থেকে মায়াবীর বাবা আর মিলা আপুর বাবা, দুজনে বন্ধু। কিন্তু মায়াবীর বাবা পারিবারিক বিজনেস ধরে রাখার জন্য মার্কেটিং-এ পড়ালেখা করেছেন।আর মিলা আপুর আব্বা,ডাক্তারি পড়েছেন।
মায়াবীর মা বলল, ঠিক বলেছ।
মায়াবীর বাবা বললেন, দেখি,ফয়েজকে কল করে,আজকেই ডেট ফিক্সড করব কবে যাব ওদের বাসায়।
(চলবে–)