
রহমান ফাহমিদা- (৩য় পর্ব)ঃ ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে মায়াবী খুব এক্সাইটেড! তাই কখন ফাহিমকে জানাবে,সেই ভাবনায় অস্থির হয়ে পড়ল।ও এত করে বলা সত্ত্বেও ফাহিম যেহেতু ওদের বাসায় এলনা!তাই মায়াবী ঠিক করল, ও আগে ফাহিমকে কল করবেনা।অপেক্ষা করবে,ফাহিমের কলের জন্য।রাতে একটি গল্পের বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছিল হঠাৎ মোবাইলের রিংটোন শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ফাহিম কল করেছে।মায়াবী হ্যালো বলতেই,ফাহিম ঝাড়ি মেরে বলল,কি ঘুমিয়ে গেছো?এত তাড়াতাড়ি!আমার জন্য অপেক্ষাও করলেনা।
মায়াবী বলল,অপেক্ষা তো করছিলাম।কিন্তু তুমি তো এত দেরি করলে!আমি কি করব?
ফাহিম বলল,সরি সরি!আজকে অনেক রাত হয়ে গেছে,বাসায় ফিরতে ফিরতে।লাইব্রেরি থেকে নোট করে সব বন্ধুরা মিলে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম খেতে।তাই আড্ডা দিতে দিতে দেরি হয়ে গিয়েছিল।তারপর বলো,তোমার কি অবস্থা!এখন,জ্বর আছে?বান্ধবীর জন্মদিনে যাওনি কেন?
মায়াবী বলল,থামো থামো,রেলগাড়ির মত গড়গড় করে একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করলে উত্তর দিব কিভাবে?
ফাহিম বলল,ঠিক আছে আমি থামলাম।এবার এক এক করে উত্তর দাও।
মায়াবী বলল,আমার শরীরটা ভালো লাগছিল না।মনে মনে ভাবল,শরীরের চেয়ে মনের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল,তাতো ফাহিমকে বলা যাবে না।তাই বলল,আমার জ্বর জ্বর লাগছিল তাই যাইনি।বাসায় একা একা বোর লাগছিল,তাই তো তোমাকে আসতে বলেছিলাম।কিন্তু তুমি তো আর এলেনা।তাই আর কি করা!
ফাহিম বলল,দুঃখিত!ক্ষমা করে দাও।আজকে এমন একটা পরিস্থিতে পড়ে গিয়েছিলাম কারণ ঢাকার বাইরে থেকে আমাদের কিছু বন্ধু দেখা করতে এসেছিল তাই সবাই মিলে বাইরে খাওয়াদাওয়া করলাম।লক্ষীটি,তুমি আমার জান না!প্লিজ বুঝতে চেষ্টা কর।আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো,তাই তুমি আমার সাথে টাইম পাস করতে পছন্দ কর!আমিও তোমার সাথে থাকতে পছন্দ করি।তুমি তো জানো আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
মায়াবী বলল,ভালোবাসো নাহ কচু!তবে ঠিক বলেছ,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে তুমি,শুধু তুমি।আর সেই কথাটি জেনে গিয়েছ বলেই তো আমার সাথে এমন করো!
ফাহিম রেগে গিয়ে বলল,আবারও!ক্ষমা তো চাইলাম বাবা!তারপরেও?যাক এবার মান অভিমান থামিয়ে বলো,কালকে তোমার কি কাজ?যদি তোমার কোন কাজ না থাকে তবে বিকেলে দুজনে ঘুরতে যাব।কারণ কালকে আমার ক্লাস একটা পর্যন্ত।বাকি ক্লাস অফ।তার আগে বলো,তোমার শরীর ভালো আছে তো!জ্বর কেমন?
মায়াবী বলল,জ্বর তেমন নেই এখন,দুপুরের দিকে এসেছিল।
ফাহিম হেসে বলল,এটাকি জ্বর? আমার মনে হয় তোমার জ্বর তো জ্বর নাহ!ভাল্লুকের জ্বর।এই বলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
মায়াবী বলল,রাখো তো ওসব!শোন তোমার সাথে ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।
ফাহিম বলল,কি আর ইম্পরট্যান্ট কথা বলবে?হয়তো কেউ ফেসবুকে এ়মন কোন পোস্ট দিয়েছে যা দেখে তুমি মজা পেয়েছ অথবা তোমার কোন বান্ধবী নতুন কারো প্রেমে পড়েছে নয়তো ছ্যাকা খেয়েছে।এম আই রাইট?
মায়াবী বলল,নো ইউ আর রং।ব্যাপারটা হল, ভাইয়া আর মিলা আপুর বিয়ে।
ফাহিম এমনভাবে চিৎকার করে উঠল মায়াবীর ফোনের মধ্যে কান ফেটে যাবার যোগার!
ফাহিম বলল,কি!কবে?কখন?আমি জানলাম না!বাসার কেউ তো আমাকে এখনও কিছু বলেনি!
মায়াবী রেগে গিয়ে বলল-তুমি একটা গাধা!তাই তোমাকে কেউ জানায়নি।
ফাহিম বলল,কি আমাকে গাধা বললে?
মায়াবী বলল,হ্যা,বললাম।না শুনে,না জেনে চিৎকার করলেই হল!আজকে বাবা মা ভাইয়ার সাথে আলাপ করছিল,ওদের দুজনের ফাইনাল পরীক্ষার পর বিয়ে দিবে।তাই হয়তো বাবা মা,তোমাদের বাসায় যাবে।
ফাহিম দুষ্টুমি করে বলল,ইস!সাথে যদি আমাদের দুজনেরটাও আলাপ করে আসতো তাহলে কত মজা হতো।আমার তো আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছেনা।
মায়াবী বল্ল,ধেৎ!কাকে কি বলি।গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।এখন পর্যন্ত লেখাপড়াই শেষ করল না,সে এসেছে বিয়ে করতে।যাও নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও।
ফাহিম বলল,ঘুমাব কি!আজকে তুমি আর আমি সারারাত গল্প করে ভোর করে দিব।তার আগে আমি তোমাকে ভিডিও কল করে দেখতে চাই।কারন আজকে সারাদিন তোমার মুখটা দেখা হয়নি!
মায়াবী বলল,না,আজকে যেহেতু আমার কথা রাখনি এবং আমাদের বাসায় আসনি তাই আমাকে দেখা লাগবেনা!আমি এখন ঘুমাব।তুমিও ঘুমাবে।কালকে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ!
ফাহিম বলল,মাফ চাইলাম,তাতেও ভুললেনা!আজকে আমি তোমাকে দেখব,কথা বলব,গান শোনাবো এবং তোমার গান শুনব আর অনেক মজার মজার গল্প করব।
মায়াবী বলল,না জনাব,আজকে আর না।আজকে ঘুমাব।
ফাহিম কপট রেগে বলল,ঠিক আছে,আপনি ঘুমান জনাবা,আমি দেখি ফেসবুক চেক করে একটু কাজে বসি।মায়াবী ফেসবুকের কথা বললে চিন্তায় পড়ে যাবে এই ভেবে ফাহিম আরও মজা পেল।এত রাতে কার সাথে কথা বলবে।ফাহিম সব বুঝে যে ,মায়াবী ফাহিম কারো সাথে কথা বলুক এটা চায়না।ফাহিমকে ও আসলেই অনেক ভালোবাসে।ফাহিম তা জানে।
মায়াবী এদিকে চিন্তায় পড়ে গেল!ফাহিম এত রাতে কার সাথে কথা বলবে।মায়াবী, ফাহিম কারো সাথে কথা বলুক এটা সে চায়না।ফাহিমকে ও আসলেই অনেক ভালোবাসে।তাই মায়াবী বলল,এত রাতে কার সাথে কথা বলবে,ঘুমাও।আমি ঘুমাতে গেলাম।
ফাহিম রেগে গিয়ে বলল,আমি কি বলেছি,কারো সাথে কথা বলব?আমি বলেছি ফেসবুক দেখে কাজে বসব।ঠিক আছে আমি কাজে বসবোনা,তুমিও ঘুমাতে পারবেনা।যতক্ষণ আমার ঘুম না আসে,ততক্ষণ তুমিও আমার সাথে জেগে থাকবে।দুজনে কথা বলব।
মায়াবী বলল,শুধু শুধু এমন করছ কেন?
ফাহিম বলল,বাইদা ওয়ে! তোমার তো দুপুরের দিকে জ্বর ছিল কিন্তু বিকেলে জেরিনদের বাসায় গেলেনা কেন?
মায়াবীর ভীষণ রাগ হল বলল,আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি যাইনি,তোমার কোনো অসুবিধা আছে?
ফাহিম বলল,তা নেই,তবে তোমার বান্ধবীরা সবাই গেল আর তুমি গেলেনা!তাই অবাক লাগছে।অবশ্য এটা তোমাদের ব্যাপার।আমার নাক গলানো ঠিক হচ্ছেনা!
মায়াবী বলল,ঠিক তাই,তোমার নাকটা সবসময় সুযোগ বুঝে লম্বা না করলেই পারো!
ফাহিম হেসে দিল-আমি যেই বললাম আর ঝোপ বুঝে কোপ দিলে!
মায়াবী বলল,ইস!এসেছে আমার বুঝদার মানুষ।
ফাহিম বলল,বুঝদার না হলে কি তুমি আমাকে এত ভালোবাসো!
মায়াবী হেঁয়ালি করে বলল,ভালোবাসি,না ছাই ভালোবাসি।
ফাহিম রেগে গিয়ে বলল,ঠিক আছে ফোন রাখো,আমার সাথে আর কথা বলতে হবেনা।
মায়াবী জানে ফাহিম একটুতেই রেগে যায়।তাই বলল,সরি!আমি তোমাকে আমার নিঃশ্বাসের চেয়েও বেশী ভালোবাসি।
ফাহিম বলল,আর বলতে হবেনা,কেউ কি তার নিঃশ্বাসের চেয়েও কাউকে বেশি ভালবাসতে পারে?নিঃশ্বাস না থাকলে তো মানুষ নিজেই মরে যায়,জীবনই থাকেনা। ভালোবাসবে কি?
মায়াবী বলল,আমি তো তাই তোমাকে বলতে চাইছি,মানে আমি তোমাকে জীবন দিয়েও ভালোবেসে যাব।
ফাহিম ধমক দিয়ে বলল,রাখো তো এসব!যত্তসব ফিল্মি ডায়লগ।আজকাল কি বাংলা সিনেমা বেশি দেখছ?আমি কি চাইবো,তুমি আমাকে তোমার জীবন দিয়ে ভালবেসে যাবে?এত স্বার্থপর ভাবো আমাকে?
মায়াবী বলল,তা ভাববো কেন!কিন্তু মনে মনে ফাহিমকে তো ও সন্দেহ করে।তা বুঝতে দেয়া যাবেনা।
ফাহিম বলল,অনেক রাত হয়েছে,সকালে ক্লাসে যেতে হবে।এখন ঘুমাতে যাই।তুমিও ঘুমাও।লাভ ইউ,গুড নাইট।কাল দেখা হবে,এই বলে ফোন কেটে দিল।
মায়াবীর খুব খারাপ লাগে এভাবে কল কেটে দিলে।ও এপাশওপাশ করে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে রইল।মাঝখানে নেট অপেন করে দেখল ফাহিমের নেট তখনও অপেন কিন্তু ও জানতে চাইলেই রেগে যাবে।বলবে অয়াইফাই অপেন থাকে সারারাত তারমানে এই নয় যে,ও নেট ইউজ করছে।ওর সাথে কথায় পারা যায়না।যে কোন যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেলে।মায়াবী ভাবতে লাগলো,ও এখনো ফাহিমকে ঠিকভাবে বুঝতে পারেনা! তাহলে কি ও ভুল করেছে ওকে ভালোবেসে!আবার ভাবে ধেৎ!ফাহিমকে নিয়ে এসব কি ভাবছে!ফাহিম ওরকম না।কত ছোটবেলা থেকে ওর সাথে বন্ধুত্ব।আসলে আজকে জেরিনের শুভ জন্মদিনটা কেন যেন ওর জন্য অশুভ মনে হচ্ছে।ঐ যে ফাহিম জেরিনকে সুভেচ্ছা জানাতে বলল,তখন থেকেই যত ওলটপালট চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।মায়াবী ফাহিমের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল।ফ্রেস হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে দেখে মামা এসেছে।মায়াবী চিৎকার করে উঠে বলল,মামা তুমি কখন এলে?
মামা বলল,যখন তুই তোর রাজকুমারের সাথে পরীর দেশে বেড়াতে গিয়ে ফুচকা খাচ্ছিলি তখন।মামা সবসময় এরকম মজা করে কথা বলে।মায়াবী ভেংচি কেটে বলল,তোমাকে বলেছে কে,পরীর দেশে ফুস্কা পাওয়া যায়?
মামা বলল,স্বপ্নে সবই পাওয়া যায়।
মামার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।মামা মঞ্চে নাটক করে তাই সবসময় নাটক নিয়ে মজার মজার কথা বলে।বিয়েসাদি করে নেই এখনো।তাছাড়া মামার বয়স তেমন নয়।মায়া্বীর ভাইয়ার চেয়ে দুই বছরের বড়।মামা আর মায়াবীর ভাইয়া দুজনে বন্ধুর মত।মায়াবীর বাবাকে সবসময় খেপায়।আজকেও যেমন বাবাকে বলছিল-দুলাভাই,আপনি তো আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন!যেমন সিরাজ-উদ-দৌলার সাথে মীরজাফর করেছিল!বাবা কিছু বলতে যাবে সেই মুহূর্তে বাবাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে,মামা যাত্রাপালার মত করে বলে উঠল-না না না,আর এ হতে দেয়া যায়না!বাংলার আকাশে বাতাসে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা,কে কাকে আশা দিবে?কে দিবে ভরসা!কে কথা দিয়ে কথা না রেখে করবে বিশ্বাসঘাতকতা!
ভাইয়া বলে উঠল-মামা,শেষের লাইনটি কোথায় পেলে?
মা হেসে বলল,কোথায় আর পাবে!পুরাতন সিরাজ গিয়ে নতুন সিরাজের আবির্ভাব হয়েছে।তাই তো বাবা,ওর নাম সিরাজ হায়দার রেখে গিয়েছেন।
এবার মায়াবীর বাবা বলল,কিন্তু আমি কি বিশ্বাসঘাতকতা করলাম!তা তো বুঝতে পারছিনা?
মামা বলল,দুলাভাই,এত তাড়াতাড়ি সব ভুলে যান!গতবার যখন এসেছিলাম তখন তো বলেছিলেন যে,আমাদের যে কোন নাটকে স্পন্সর করবেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন খবর নাই!
মায়াবীর বাবা বলল,ওহ!সেই কথা।তুমিও তো আমাকে মনে করিয়ে দেওনি?আমি অফিসের কাজে এত ব্যস্ত থাকি,একদম মনেই ছিলনা।তুমি তো তোমার কোন কাগজপত্র শো করনি!কারণ এটা তো আমার একার না!অফিসের আরও লোকজন আছেন,তাদের সাথে কথা বলতে হবে তোমাদের প্রজেক্ট নিয়ে,তারপর না হয় দেখা যাবে।
মামা বলল,ঠিক আছে আমি আমাদের নাটকের পরিচালকে নিয়ে আগামী সপ্তাহে দেখা করব।
মায়াবীর মা বল্ল-এগুলো করে কি হবে?বিয়েসাদি করে সংসার কর।মা আর বাবা বাড়িতে একা একা থাকেন,বউ আসলে তো গল্প করার মানুষ পাবেন।
মামা তখন মাকে থামিয়ে বলল-আপা,বউ যদি হিন্দি সিরিয়ালের খল নায়িকা কমলিকার মত হয় তবে সারছে!বাবা মার জিনা হারাম করে ছারবে।আমি এর মধ্যে নাই,যেমন আছি তেমনই ভালো আছি।
মা বলল,তোর আছে শুধু অলুক্ষুনি কথা!
মামা বলল,আরে না!অলুক্ষুনি কথা না।এরকম হচ্ছে।তুমি তো ঘরে বসে কোন খবর রাখনা,আজকাল ডিজিটাল বউরা সংসার চালাতে ডিজিটাল পন্হা অবলম্বন করে।মা বলল,মানে কি!
মামা বল,মানে কিছুনা।পরে বলবো।
মা বলল,তোর যত্তসব নাটকীয় কথা।
এরি মাঝে কলিংবেল বেজে উঠলো মা বুয়াকে ডেকে দরজা খুলতে বলল।বুয়ার পেছনে পেছনে মিলাআপু ঘরে ঢুকল।মিলা আপুকে খুব সুন্দর লাগছিল।হাল্কা বেগুনি রঙের শাড়ি পরেছে।গোসল করে এসেছে,ভেজা চুলগুলো ছাড়া।চোখে কাজল আর গোলাপি কালারের লিপস্টিক দিয়েছে,ঠোঁট দুটি খুব সুন্দর লাগছে,কানে ছোট দুটি টপ পড়েছে।
মামা মিলা আপুকে দেখিয়ে মাকে বলল,ঐ দেখ!আমাদের রোমিওর জুলিয়েট এসে গেছে।ভাইয়া আর মিলাআপু লজ্জা পেল।
মা মিলা আপুকে দেখে হেসে বলল,আসো মা।তারপর মামাকে বল্ল,তুই কি আরেক কাপ চা খাবি?
মামা বলল,অবশ্যই খাবো।মামা মিলাআপুকে নিজের পাশের চেয়ার দেখিয়ে বলল,মিলা বসো।তারপর মাকে বলল,আপা মিলাকে নাস্তা দেও।
মিলাআপু বলল,না না,নাস্তা খাবনা মামা।নাস্তা করে এসেছি।
মা বলল,চা খাবে তো?
মিলাআপু বলল,হ্যাঁ,তা খেতে পারি।
মামা বলল,চা তো খায়না পান করে।
বাবা বলল,মিলা,তোমার বাবা মা ভালো আছেন?
মিলা আপু বলল,জী আঙ্কেল,ভালো আছেন।
বাবা বললেন,আলহামদুলিল্লাহ!তারপর মাকে বললেন,আমি উঠলাম কারণ অফিসে মিটিং আছে।
মা বলল,ঠিক আছে যাও।
বাবা চলে গেলে ভাইয়া মিলাআপুকে বলল,তুমি বস,আমি রেডি হয়ে আসছি।এই বলে মামার দিকে ফিরে বলল,মামা,তুমি আজকে আছো তো?আমি ক্লাস শেষ করে আসছি।
মামা বলল,আছি।তোরা যা,নিশ্চিন্তে ক্লাস করে আয়।তারপর মিলাআপুর দিকে ফিরে বলল,লেখাপড়া কেমন চলছে?
মিলাআপু বল্ল,ভালই চলছে মামা।
মামা বলল,ভাল হলেই ভাল!আজকাল লেখাপড়ার যে অবস্থা!তোমার পিচ্চি ভাইটা কেমন আছে?
মিলাআপু বলল,আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছে।
এমন সময় আবার কলিংবেল বেজে উঠলো বুয়া দরজা খুলে দিলে ফাহিম হন্তদন্ত হয়ে ঢুকেই সবাইকে ডাইনিং টেবিলে দেখে থমকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।তারপর নিজেকে সংবরণ করে বলল,কি ব্যাপার সবাই একসাথে কিসের গোলটেবিল বৈঠক হচ্ছে?তারপর মামার দিকে তাকিয়ে বলল,মামা,আপনি কখন এলেন?ভালই হল এসে,আপনাকে পেয়ে গেলাম।অনেক মজার মজার ঘটনা জানা যাবে।
মামা বলল,তুমি একশো বছর বাঁচবে।
ফাহিম বলল,কেন মামা,এইরকম বদদোয়া কেন করছেন!অসুস্থ হয়ে এত বছর বাঁচতে চাইনা,সুস্থভাবে চলে যেতে চাই।
মামা বল্ল,কি সাংঘতিক!এ দেখি নাটকের ডায়লগ মারছে।এইমাত্র মিলার কাছে তোমার কথা জানতে চাইছিলাম,তাই ঐ কথা বলছি।
ফাহিম বলল,ওহ! তাই বলেন।
এমন সময় মিলা আপু বলল,তুই এখানে এত সকালে কেন এসেছিস?
ফাহিম বলল,মামাকে দেখে সেই কথাই তো ভুলে গেছি!মনে পড়ছে,মা আমাকে এই টাকা দিয়ে বল্ল,তোমাকে যেন দেই কারণ তোমার নাকি টাকা দরকার।ভুলে রেখে এসেছ তাই তো আমাকে ঘুম থেকে টেনে তুলল।এবার আমার বকশিশ দেও।
মিলাআপু বলল,কিসের বকশিস?
ফাহিম-বারে!আমি নিজের ঘুম নষ্ট করে আর কষ্ট করে এনে দিলাম,আমাকে বকশিশ দিবেনা?
মিলাআপু বলল,যা ভাগ!আমার থেকে নিয়ে তো আবার মার কাছ থেকে নিবি।
এমন সময় ভাইয়া রেডি হয়ে এসে বলল,কিসের বকশিস?
মিলা আপু সব ঘটনা ভাইয়াকে খুলে বলার পর,ভাইয়া বলল,ওতো ঠিকই বলেছে,এত কষ্ট করেছে ওকে তো বকশিস দিতেই হবে।এই বলে নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে দিল।
ফাহিম বলল,থ্যাংক ইউ,মাই ডিয়ার দুলাভাই।
ফাহিমের এই কথা শুনে সবাই হেসে উঠল,ভাইয়া আর মিলা আপু আবারো লজ্জা পেল।ভাইয়া তাড়াতাড়ি মাকে বলল,মা আমরা যাই,আজকে বাসায় আসতে দেরি হবে কারণ ক্লাস শেষে লাইব্রেরী ওয়ার্ক করব।মা বলল,যাই বলতে নেই!বল আসি।
ভাইয়া তারপর মামার দিকে তাকিয়ে বলল,মামা,তুমি আজকে আছ তো?তাহলে রাতে দেখা হবে।সরি!মামা,আজকে তোমাকে বেশি সময় দিতে পারছিনা কারণ সামনে এক্সাম।
মামা বলল,অসুবিধা নেই ভাইগ্না,তুমি তোমার কাজ সেরে আসো।
ভাইয়া বলল,আসি,আল্লাহ হাফেজ।
ওরা চলে যাবার পর মা বলল,ফাহিম নাস্তা করেছো?নাস্তা কর।বুয়াকে বলল নাস্তা দিতে।
ফাহিম বলল,নাস্তা করবোনা আন্টি কারণ বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে কলেজে যেতে হবে।তারপর মায়াবীকে বলল,কি ব্যাপার!তুমি আজকে কলেজ যাবেনা?
মায়াবী বলল,যাব।
মা বলল,মায়াবী,আজকে তাড়াতাড়ি গোসল করে ফেলিস,নয়তো আবার জ্বর আসবে।
এমন সময় ফাহিম হাসতে হাসতে বলল,আন্টি ওর তো ভল্লুকের জ্বর,এই আসে এই যায়।
মায়াবী রাগে কটমট করে ওর দিকে তাকায়ে নিজের রুমে চলে গেল।ফাহিম বুঝতে পেরেছে মায়াবী রাগ করেছে তাই ও দেরি না করে,আন্টি আমি আসি বলে হাসতে হাসতে চলে গেল।
মামা চিন্তিতভাবে বলল,কি ব্যাপার আপা,ওর তো প্রায়ই জ্বর আসে দেখছি।যখনি আসি তখনি শুনি ওর জ্বর!ভাল করে ডাক্তার দেখাচ্ছ তো?জ্বর নিয়ে খামখেয়ালী করোনা,আজকাল এই জ্বর থেকেই তো নানান রকম অসুখবিসুখ ধরা পড়ছে।
মা বলল,হুম!আমরাও চিন্তায় আছি।কত ডাক্তার কবিরাজ দেখালাম কিন্তু কিছুই ধরা পড়ছেনা!
মামা বলল,ব্লাড টেস্ট করিয়েছ?
মা বলল,হ্যাঁ, করিয়েছি কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায়নি!
মামা বলল,আলহামদুলিল্লাহ!চিন্তা করোনা,সব ঠিক হয়ে যাবে।
মা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,তাইই যেন হয়!তোর কথাই যেন সত্যি হয়।চল ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসি।তুই ইচ্ছে করলে মেঘের রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে পারিস,কোন সকালে এসেছিস!
মামা বলল,তাই করি।ফ্রেস হয়ে একটু ঘুমিয়ে নেই।তুমি তোমার কাজ শেষ কর তারপর দুই ভাইবোন মিলে জব্বর একটা আড্ডা দেওয়া যাবে,কি বল?
মা বলল,তাইই হোক।যা তাহলে।মামা চলে গেলে মায়াবীর মা,নিজের কাজে চলে গেল।
এদিকে ফাহিম বাসায় ফিরেই মায়াবীকে কল করল কিন্তু মায়াবী ফাহিমের কল রিসিভ করল না।যেহেতু মায়াবী কল ধরছেনা তাই ফাহিম নাস্তা খেয়ে কলেজের জন্য রেডি হয়ে কলেজ যাবার আগে আবার মায়াবীকে কল করল।এবারো মায়াবী কল ধরল না দেখে ফাহিম নেট অন করল,দেখল মায়াবীর নেট অফ।তারপর আরও কয়েকবার কল করে দেখল মায়াবী ওর কল ধরছেনা তখন মেজাজ খারাপ হয়ে গেল!মনে মনে বলল,কি এমন বলেছি যে মায়াবী এত রাগ করলো!এরকম তো ও সবসময়ই বলে। হয়তো ওর অন্যায় হয়ে গেছে সবার সামনে এভাবে বলেছে বলে কিন্তু ও তো সরি বলার জন্য ওকে এতবার কল করল!কল না ধরলে সরি কেমন করে বলবে।ফাহিম ভাবল নিশ্চয়ই আজকে দেখা করতে বলেছে বলেই মায়াবী বাড়তি ভাব নিচ্ছে।দেখা করতে বললেই ও এরকম করে।ওকে ফাহিম বুঝতে পারেনা!অথচ ওর বন্ধুদের লাভারেরা বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে থাকে,তা ফাহিম বন্ধুদের মুখেই শুনেছে।ফাহিম ভাবল,ঠিক আছে ও আর মায়াবীকে কল করবেনা।দেখা যাক,মায়াবী কি করে?তবে ফাহিম জানে মায়াবী ওর সাথে কথা না বলে থাকতে পারেনা,তারপরেও হয়তো ও নিজের জেদ বজায় রাখবে।ফাহিম সাতপাচঁ ভাবতে ভাবতে কলেজের দিকে রওনা হল,ওর বাইক নিয়ে।বাইকে বসে ভাবতে লাগলো, আজকে মায়াবীকে নিয়ে বাইকে করে অনেকদূরে ঘুরতে যাবে তাই ভেবে রেখেছিল কিন্তু মায়াবী ওর মনটা খারাপ করে দিল,মায়াবী ওর কল না রিসিভ করে।কখন তো মায়াবী এত রাগ করেনা তবে আজকে কেন এত রাগ করল!ফাহিম ভেবে ভেবে কোন কূলকিনারা পেলনা!
অন্যদিকে মায়াবী ফাহিমের ওপর রেগেমেগে ঘরে গিয়ে কেঁদে ফেলল কারণ ফাহিম তো ঠিকই বলেছে সব সময় তো ওর জ্বর হয়। আবার জ্বরটা এমন,এই আসে এই যায়!তবে যখন জ্বর আসে মায়াবীর খুব শারীরিক কষ্ট হয় কিন্তু মায়াবী কারো সাথেই শেয়ার করেনা কারণ মা,বাবা ও ভাইয়ার অনেক টেনশন হবে।ওরা খুব চিন্তা করবে।মায়াবীর কিছু হলেই ওরা তিনজন অস্থির হয়ে যায়।
অনেক সময় মায়াবীর সারারাত ঘুম হয়না!কোনো কোনো সময় ফাহিম ওকে সঙ্গ দেয়।ফাহিমের সাথে সারারাত কথা বলে কাটিয়ে দিতে ওর একটুও বোর লাগেনা!ফাহিমের গলার স্বরে এমন একটা মাধুর্য আছে যা কিনা মায়াবীকে আচ্ছন্ন করে রাখে!অবশ্য বেনু একথা শুনে বলেছে,ধুর!এসব মাধুর্য তাধুর্য কিচ্ছুনা,তুই ওকে অনেক ভালবাসিস তাই।তার মানে হল,প্রেম রোগ।মায়াবী বেনুর কথা শুনে,মনে মনে ভাবে,তাইই হয়তো!আবার কখনো কখনো ফাহিম কথা বলতে বলতে হাই তুলতে থাকে তখন মায়াবী বুঝতে পারে ও ঘুমে ঢুলছে!
মায়াবী বলে-কি,তোমার ঘুম আসছে?তাহলে ঘুমাও।
ফাহিম তখন নিজেকে সামলে নিয়ে বলে-কই নাতো!
মায়াবী বলে-আমি বুঝতে পারছি,আমার কথা শুনতে শুনতে তোমার ঘুম এসে পড়ছে,কিন্তু কি করবো বোলো!তোমাকে আমার মনের সব কথা বলতে ইচ্ছে হয়।তাই তো বকবক করি।ঠিক আছে ঘুমাও,আর জেগে থাকতে হবে না।
ফাহিম তখন বলে-সরি!জান।আজকে অনেক টায়ার্ড।কালকে কথা হবে।তুমিও ঘুমিয়ে যাও,তানাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে!গুডনাইট।
মায়াবীও বলে গুডনাইট।
ফাহিম তখনি বলে –শোন!আমাকে একটি পাপ্পি দেও।তারপর রাখো।
মায়াবী বলে-এসব কি? যাও ঘুমাও।
তখন ফাহিম বলে-না,আমি যা বলছি তা কর।আমার কথার অবাধ্য হবেনা।আমি চাইনা,তুমি আমার কথার অবাধ্য হও!
মায়াবী জানে ফাহিম এখন এই অন্যায় আবদার করেই যাবে,যতখন ও পাপ্পি না দেয়।তাই মায়াবী বল্ল-উম-ম-মাহ!
ফাহিমও বলল,উম-ম-মাহ!এই তো আমার লক্ষ্মী বউ।তো ঠিক আছে,ঘুমাই।বাই।
ফাহিম যখন ঘুমিয়ে পড়ে,তখন ওকে রাজ্যের একাকীত্ব পেয়ে বসে।ও তখন পুরো ঘর অন্ধকার করে টিভিটা অন করে রাখে আর মোবাইলে ফেসবুকে গিয়ে অন্ধকার নিয়ে নানান কথা লিখে পোস্ট দেয়। যেমন-
ভালোবাসি অন্ধকার
জানিনা আমি কার!
এইরকম নানান কথা।এই লেখা পড়ে অনেকেই জানতে চায়,এত হতাশা কেন?কার জন্য ওর এই হতাশা?এই ধরনের নানান রকম প্রশ্ন।ও প্রশ্নগুলো এ্যাভোয়েড করে যায়।কারণ ও নিজেও জানেনা ওর অন্ধকার কেন এত ভাল লাগে।মাঝেমাঝে মোবাইল খুলে ফাহিমের আর ওর ছবি দেখে।
ফাহিম অবশ্য বলে-যেহেতু আমরা আমাদের সম্পর্কটা কাউকে জানবোনা,সো মোবাইল থেকে সব ডিলিট করে দিবে।যেমন-মেসেজ,ছবি ইত্যাদি।
মায়াবী এই সকল ভাবতে ভাবতে নিজের কান্না সংবরণ করে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকল তারপর বাথরুমের শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে অনেকক্ষণ ভিজল।মা ডাকাডাকি করলে বের হয়ে এল।মা ওর চোখমুখ লাল দেখে বলল,কিরে এতক্ষণ বাথরুমে কি করিস?চোখমুখ লাল হয়ে আছে।বললাম না,বেশি ভিজবিনা!এমনেতেই গায়ে জ্বর তারপর এত ভিজছে।
মায়াবী রেগে বলল,মা,এত জ্বর জ্বর করোনা তো! আমি ঠিক আছি।
মা বুঝল,মায়াবী ফাহিমের কথায় কষ্ট পেয়েছে তাই জ্বর নিয়ে আর কিছু বলল না।বলল,তুইকি একা যাবি কলেজে,না বেনুও তোর সাথে যাবে?
মায়াবী বলল,আমি একা যাব।বেনু ওর বাবার সাথে যাবে।তুমি ড্রাইভারকে বল বাবাকে নামিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে।
মা বলল,ঠিক আছে তুই রেডি হ।আমি যাই।
মায়াবী রেডি হয়ে এসে মাকে বলল,মা, ড্রাইভার এসেছে?
মা বলল,আবুল তো কখনই এসেছে!
মায়াবী বল্ল-তাহলে আমি যাই।মা,মামা কই?
মা বলল,সিরাজ মনে হয় মেঘের ঘরে ঘুমাচ্ছে।কেন?
মায়াবী বলল,না এমনেই।ঠিক আছে আমি কলেজ থেকে এসে মামার সাথে গল্প করব।
মা-হুম!সিরাজ এমন সময় এল যখন সবাই যার যার কাজে বাসার বাইরে।তবে অসুবিধা নেই,আমি তো আছি।
মা তাকিয়ে দেখল মায়াবীর মুখটা কেমন যেন শুকনো শুকনো লাগছে।মা মায়াবীকে ডেকে বলল,মায়া এদিকে আয় তো!
মায়াবী বলল,কেন?
মা বলল,আয় না দেখি।
মায়াবী মার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।মা ওর কপালে হাত দিয়ে দেখে বলল,নাহ জ্বর তো নেই!তারপর মায়াবীকে বলল,তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?
মায়াবীর মনটা খুবই খারাপ হয়ে ছিল ফাহিমের কথার যদিও ফাহিম অনবরত কল করেছে।ও একবারও রাগে ফাহিমের কল রিসিভ করেনি।মায়াবী মাকে বলল,এমনেই মন ভালো লাগছেনা।মা,বাবাকে বলবে আমার কলেজের ছুটিতে কয়েকদিন নানার বাড়ী গিয়ে ঘুরে আসব।মায়াবীর দাদাদাদি মারা গেছেন আর এক চাচা আর ফুফু আছেন তাঁরা দেশের বাইরে থাকেন।তাই দাদার বাড়ী যাওয়া হয়না।
মা বলল,ঠিক আছে।
মায়াবী বলল,তাহলে আমি যাই,আল্লাহ হাফেজ।এই বলে মায়াবী বের হয়ে গেল।
মায়াবী গাড়ীতে উঠে পেছনের সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বসে ভাবতে লাগল।আজকে যত কষ্টই লাগুক না,ও আর ফাহিমের কল ধরবেনা। ঠিক তখনি ফাহিমের আবার কল আসলো কিন্তু মায়াবী আর কল ধরল না।মায়াবী জানে ফাহিম একবার না পেলে পরপর কয়েকবার কল করবে,তাই ও মোবাইল মিউট করে রাখল।কারণ আবুল বারবার রিং টোন শুনলে খারাপ ভাববে।রাস্তায় অনেক জ্যাম কারণ এই সময়টা সব স্কুল কলেজ শুরু হয়।রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখল অনেক ছেলে মেয়ে হাত ধরাধরি করে ওদের কলেজের পাশে ব্রাদার এন্ড সিস্টার কফি হাউসে ঢুকছে।আসলে ওরা একেকজন একেক কলেজে পড়ে।বেনু ওর সাথে থাকলে এই ব্যাপার নিয়ে অনেক কমেন্ট করত।ওর আজকে খুব একা একা লাগছে।যেদিনই ফাহিমের সাথে ও রাগ করে তখন ওর সবকিছু শুন্য শুন্য লাগে আর কিছু ভালো লাগেনা।ফাহিমের জন্য ওর ভালোবাসা মনে হয় বেঁচে থাকার নিঃশ্বাসের মত।নিঃশ্বাস ছাড়া যেমন জীবন চলেনা তেমনি ফাহিমের ভালোবাসা ছাড়াও ও বাঁচবে না।ফাহিমকে মায়াবী বুঝতে পারেনা!অনেক সময় ফাহিম এমন সব কথা বলে মনে হয়,ফাহিম মায়াবীকে ছাড়া কিছু বুঝেনা আবার মাঝে মাঝে ফাহিমকে খুব অচেনা মনে হয়।
অন্যদিকে ফাহিম এতবার কল করল কিন্তু মায়াবী একবারও কল রিসিভ করলো না দেখে ফাহিম বুঝল মায়াবীর রাগ দু’একদিন বজায় থাকবে।ও আর কি করবে,যেহেতু আজকে অফ টাইমে মায়াবীকে নিয়ে ঘুরতে চেয়েছিল তা তো আর হবেনা তাই একবন্ধু অফার করল, বন্ধুরা সব মিলে কনসার্ট দেখতে কুমিল্লা যাচ্ছে দুদিনের জন্য ফাহিম যাবে কিনা!ফাহিমও সবকিছু ভেবে বন্ধুদের সাথে কুমিল্লা যাওয়ার প্লান করল।মনে মনে ঠিক করল মায়াবীকে এখন আর কল দিবেনা যতক্ষণ মায়াবী কল না করে।বাসায় যেয়ে ফাহিম গোছগাছ করে মাকে বলে বন্ধুদের সাথে কুমিল্লা চলে গেল।ফাহিমের মা অবশ্য বাধা দিয়েছিল এইকারণে যে কলেজ ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়াবে এটা কেমন কথা!কিন্তু ফাহিম যখন বল্ল কলেজ এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে সেই কারণে বন্ধ তখন ফাহিমের মা যেতে দিল।
মায়াবী কলেজ শেষ করে সোজা বাসায় চলে এল।বুয়া দরজা খুলে দিতেই মায়াবী দেখল মামা বসে পেপার পড়ছে।মামা ওকে দেখেই বলে উঠল-কিরে ভাগ্নি,আমাকে না বলে চলে গেলি যে! এদিকে আমি আর তোর মা একা একা বোর হচ্ছিলাম।চারিদিকে অন্ধকার দেখছি তোদের ছাড়া।
মায়াবী বলল,মামা তোমার সাথে দেখা করবো কি!তুমি তো তখন ঘুমে পরীর রাজ্যে বেড়াতে গিয়েছিলে।মামা,সকালে মায়াবীকে যা বলেছিল তা ফেরত দিল।
মামা বলল,কি!আমার কথা আমাকে ফেরত দেয়া হচ্ছে।
মায়াবী বলল,আরও আছে।তা হল,তুমি আর মা দুজনে মিলে একা একা কিভাবে হও?তাছাড়া বাড়ীতে বুয়া,দারওয়ান ,আবুল সবাই আছে।আর দিনের বেলায় অন্ধকার কোথায় পেলে?
মামা বলল,হয়েছে।তোর সাথে কথায় পারা যাবেনা।
মায়াবী বলল,তোমরা ছেলেরা কখনই হার মানতে চাওনা!যখন কথায় ধরা খাও তখন সব কিছু এড়িয়ে যাও।
মামা অবাক হয়ে বলল,এখানে তো আমি একা,সব ছেলেরা কোথার থেকে আসলো?
মায়াবী বুঝল-মামা,এখন ফাহিমের কথা বলে খেপাবে তাই তাড়াতারি বলল,মা টেবিলে বুয়াকে ভাত দিতে বল আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে।
মা বলল,দিচ্ছে।তুই ফ্রেস হয়ে আয়।মায়াবি ফ্রেস হয়ে মামাকে ডেকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো।টেবিলের অপর সাজানো হাসের মাংস,ভুনা খিচুড়ি,ডিমের করমা,কাবাব,বেগুন ভাজি,তেতুলের চাটনি,সালাদ আর মায়ের হাতের তৈরি বোরহানি। মায়ের হাতের বোরহানির টেস্টই আলাদা।মায়াবী টেবিলে খাবারের মেন্যু দেখে ওয়াও! করে একটি চিৎকার দিল।তারপর মাকে ফোড়ন কেটে বলল,কি মা,আজকে মামা এসেছে বলে এত কিছু রান্না করেছো তাইনা?
মা মামাকে বলে-দেখেছিস!মনে হয় ওদের কখনো এতকিছু রান্না করে খাওয়াইনি।তারপর বল্ল,ওদের খাওয়ালেও কিচ্ছু হবেনা,হাত মুখ মুছে বলবে খাইনি।
মায়াবী বলল,মামা দেখলে,মা কেমন করে কথা বলে?আমি আর খাবইনা।এই বলে মায়াবী উঠে যেতে নিলে ওর মামা ওর হাত টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিল।তারপর মায়াবীর মাকে বলল,আপা তুমিও ছেলেমানুষি শুরু করলে?ও না হয় দুষ্টুমি করে বলেছে তাই বলে তুমিও!দুজনে এমনভাবে ঝগড়া কর মনে হয় মা মেয়ে না,দুজন বান্ধবী।
মায়াবির মা বুঝল এভাবে বলা ঠিক হয়নি!এমনেই মায়াবীর মন আজকে ভীষণ খারাপ হয়ে আছে সকালবেলা ফাহিমের কথা শোনার পর থেকে।তাই পরিবেশ সহজ করার জন্য বলল,আমরা দুজন তো বান্ধবীই।আমাদের মধ্যে সারাদিন কতবার যে ভাব আড়ি হয়,তা কি তুই জানিস!তাই আমিও ওর সাথে মজা করেছি।
মামা বলল,জানি, জানি।এখন আর অপেক্ষা করতে পারছিনা।ক্ষিধেয় পেটের মধ্যে চুহা দৌড়োদৌড়ি শুরু করছে।
মা বলল,নে শুরু কর।তারপরে মায়াবীকে বলল,মায়া প্লেট নে আর তোর মামাকে খাবার বেড়ে দে।মার কথা শুনে মায়াবীর রাগ কমে গিয়েছিল।তাই মামাকে প্লেটে খাবার বেড়ে দিল।মামা খেতে খেতে অনেক গল্প করল।ফেসবুক নিয়ে মায়াবীকে অনেক উপদেশ দিল।
খাবার শেষ করে ওরা মায়ের ঘরে গিয়ে বসলো।মামা মাকে বলল,আপা,এক কাপ চা দাও।দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এক কাপ চা না খেলেই নয়।মা বুয়াকে চা দিতে বলল।বুয়া সবার জন্য চা বানিয়ে আনার পর মামা হঠাৎ মায়াবীকে বলল,কিরে তুইকি সবসময় ফেসবুক চালাস?মা মায়াবীকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলল,চালায় না আবার!পারলে গিলে খায়।সারাদিনই তো যখনি সুযোগ পায় তখনি ফেসবুক খুলে বসে।মায়াবী রাগে কটমট করে মার দিকে তাকিয়ে বলে তোমাকে বলছে।
মা বলল,বলছি কিরে!তুই তো সারাক্ষণ নেট অন করেই থাকিস।
মায়াবী মাকে ফাহিমের কথা রিপিট করে বলল,নেট ওপেন থাকলেই যে আমি ফেসবুকে থাকি তোমাকে কে বলেছে?আমি ইউটিউবে দেশবিদেশের নানান খবর দেখি,গান শুনি,নাটক মুভি সব দেখি।শুধুকি ফেসবুকে বসে থাকি।
মামা বলল,তা থাকিস না,ভাল কথা।কিন্তু প্রেম ট্রেম করিস না তো?
মায়াবী ফাহিমের কথা আড়াল করে বলল,কি যে বলনা মামা।
মামা বলল,না করলেই ভাল।কারণ ফেসবুকের বেশির ভাগ মানুষ ফেক।তারপর মামা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,জানো আপা,সেদিন আমার এক বন্ধু এনজিওতে জব করে ওর কাছে সব জানতে পারলাম-ফেসবুকে চিটাগাঙ্গের এক মেয়ে রাজশাহীর এক ছেলের সাথে প্রেম করছিল।সেই কি প্রেম লাইলি মজনুকেও হার মানায়।
মা বলল,মানে কি?
মামা বলল,আপা,কথার মাঝখানে এত মানে মানে করনা তো!পুরো ঘটনা আগে শুনবে তারপর প্রশ্ন করবে কারণ ঘটনার ক্লাইমেক্স নষ্ট হয়ে যায়।
মা বলল,ঠিক আছে আর নাটক করতে হবেনা।নাটক করতে করতে এমন অবস্থা হয়েছে যে,সব কথাতেই নাটুকে ডায়লগ।এবার বল।
মামা বলল,শোন!ছেলেটি মেয়েটিকে এ্যাড পাঠাইছে কারণ মেয়েটি অপরুপ সুন্দরী।ছেলেটি যখন মেয়েটিকে এ্যাড পাঠাইছে তখন মেয়েটি ছেলেটির প্রোফাইলে গিয়ে ছেলেটির বিভিন্ন ছবি দেখে।ছবিতে ছেলেটি কোনোটায় বাইকে বসা,কোনো ছবিতে গাড়িতে বসা এবং চোখে দামী রেবনের সানগ্লাস,ব্যাকব্রাশ করা চুল,দামি ঘড়ি ব্রেসলেট হাতে,দেখতেও মন্দ নয়,লম্বা আছে।বাবা বিজনেস করে।এসব দেখে মেয়ে তো ফিদা!কারণ মেয়ের বাবাও একজন শিল্পপতি।যেই বাড়ির সামনে ছেলেটি ছবি তুলেছে তা অনেক সুন্দর।মেয়েটি না বুঝে ছেলেটিকে একসেপ্ট করে নিয়েছে ফলে যা হবার তাইই হয়েছে।মেয়েটি ছেলেটির প্রেমে এতই হাবুডুবু খাচ্ছিল তাই ছেলেটি যা বলেছে মেয়েটি তাইই বিশ্বাস করেছে।যাকে বলা যায়,অন্ধ ভক্ত।
মা বলল,এখন একটা কথা বলতে পারি?
মামা বলল,কি কথা?
মা বলল,ফিদা মানে কি?
মামা বলল,ইস!তোমাকে নিয়ে আর পারা গেলনা আপা।ফিদা মানেও বুঝনা।এটা হিন্দি ভাষা।ফিদা মানে মুগ্ধ হয়ে যাওয়া।
মা রেগে গিয়ে বলল,তুই বাংলা বলতে পারিস না!আমি অতশত হিন্দি বুঝিনা।
মামা বলল,আমি তোমাকে হিন্দি বাংলা শেখাতে আসিনি।একটা ঘটনা বলছি তা চুপ করে শুনতে পারোনা মায়াবীর মত।ওতো কোন প্রশ্ন করছেনা।
মায়াবী সুযোগ বুঝে বলল,দেখেছ মামা,এজন্যেই মা’র সাথে আমার ঝগড়া লাগে।
মামা বলল,আপনিও তো কম যান না!সুযোগ পেয়ে ঝেড়ে দিলেন।
মা বলল,এখন তোরা বকবক করবি না ঘটনা বলবি?যদি না বলিস তবে আমি যাই আমার অনেক কাজ আছে।
মামা বলল,আপা শোন!মেয়েটি সারাদিন ছেলেটির সাথে চ্যাটিং করে আর ছেলেটি যত প্রকার মিথ্যা কথা বলে তার সব বিশ্বাস করে।এর মধ্যে ছেলেটি মেয়েটির সব খবর সংগ্রহ করে ফেলেছে,মেয়েটিকে কথার যাদুতে ফেলে।ছেলেটি জানে মেয়েটি চিটাগাঙ্গের নামকরা বড় ব্যাবসায়ীর মেয়ে।একটি বড় ভাই আছে।বাবার সাথে অফিসে বসে।মা গৃহিণী।অনেক সময় ছেলেটি যখন ভিডিও চ্যাট করতে বসে তখন মেয়েটি সারা বাসায় ঘুরে ঘুরে কথা বলে।কোনটা কার রুম সব দেখায় এমনকি বাসার কুকুরও বাদ যায় না।ছেলেটা খুব মজা পায়।একসময় ছেলেটির জন্মদিন আসে।মেয়েটি ছেলেটিকে অনেক দামী গিফট পাঠায়।একদিন মেয়েটি ছেলেটিকে কল করলে ছেলেটি মেয়েটিকে বলে ওর মানিব্যাগ হারিয়ে গেছে।মানিব্যাগে দশ হাজার টাকা ছিল তা হারিয়ে ফেলে ওর মন খারা্প,সেজন্যে এখন কথা বলতে পারবেনা।মেয়েটির ছেলেটির জন্য খুব কষ্ট হয়,তাই বিকাশে ছেলেটিকে টাকা পাঠিয়ে দেয়।এইভাবে ছেলেটি মেয়েটির কাছ থেকে নানান ভাবে টাকা নেয়।এদিকে পরিচয়ের ছয় মাস পেরিয়ে গেলে মেয়েটি বলে ওর খুব ছেলেটিকে দেখতে ইচ্ছে করছে।কেন যেন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা।ছেলেটি ভাবল এবার রাজকন্যা আর রাজত্ব একসাথে পাওয়া যাবে।ছেলেটি বলে চলে আসো রাজশাহীতে।মেয়েটি বলে আমি চলে আসলে,আমাকে বিয়ে করবে?ছেলেটি বলে অবশ্যই।তখন মেয়েটি বলে ঠিকানা দাও,আসছি।ছেলেটি দুষ্টুমি করে ওর আসল বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দিল।কারণ ছেলেটির মনে তো অন্য চিন্তা।তারপরেও ভাবল এতদুর কি মেয়েটি আসবে!তারপর চিন্তা করলো আসলে ভালো না আসে যদি তাতেও ক্ষতি নেই।
মায়াবীর মা বলল,কি সর্বনাশ!মেয়েটি কি করল?গেল?
মামা বলল,বলছি,শোন।মেয়েটি বাড়ীর কাউকে না জানিয়ে বাসের টিকেট কেটে রাজশাহী রওনা হল। চিটাগাং থেকে রাজশাহী যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।মেয়েটি বাসের ওয়েটিং রুমে এসে ছেলেটিকে কল করল।মেয়েটি যে রওনা হয়েছে তা ছেলেটিকে আগে জানায়নি!কারণ সারপ্রাইজ দিবে তাই।ভেবেছিল ছেলেটির বাড়ি সরাসরি যাবে কিন্তু রাজশাহীতে এই প্রথম এসেছে তাই পথঘাট চিনেনা এজন্নে ছেলেটিকে কল করল।তাছাড়া রাত্রি হয়ে যাচ্ছে।ছেলেটি যখন জানতে পারল মেয়েটি চলে এসেছে তখন ঘাবড়ায়ে গেল।কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা কারণ ওতো মেয়েটিকে সব মিথ্যা কথা বলেছে।মেয়েটি জানে ও সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু ও তো লেখাপড়া তেমন একটা করে নাই।বাড়ির অবস্থাও খারাপ।ফেসবুকের ছবিগুলো এক বন্ধুর সাহায্যে কম্পিউটারের মাধ্যমে আর কিছুটা বন্ধুবান্ধবের জিনিস ব্যাবহার করে তুলেছে।সব কিছুই ভোগাস।তাই ভয়ে ও মোবাইল বন্ধ করে রাখল।
এদিকে মেয়েটি ছেলেটি আসছেনা দেখে কান্নাকাটি শুরু করল।টহল পুলিশ মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে বুঝল বিপদে পরেছে তাই এগিয়ে গেল।মেয়েটিকে পুলিশকে জিজ্ঞেস করল কোথায় থেকে এসেছে?মেয়েটি কিছুতেই বলতে চাচ্ছিলনা পরে বলল,অনেক বিপদে পড়েছে রাজশাহীতে একা এসেছে।একটি ছেলের কথায়,এখানে কাউকে চিনে না।এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে।তখন টহল পুলিশ বলল থানায় যাওয়ার জন্য তার সাথে কিন্তু মেয়েটি রাজি হচ্ছিলনা।পুলিশ বুঝল মেয়েটি তাকে বিশ্বাস করতে পারছেনা তাই একজন মহিলা পুলিশকে খবর দিয়ে নিয়ে আসল।সেই মহিলা পুলিশ মেয়েটিকে অনেক বুঝিয়ে থানায় নিয়ে গেল।মহিলা পুলিশ বলল,থানায় গিয়ে সব বললে সেই ছেলেকে খুঁজে বের করা যাবে,যার কথায় মেয়েটি এখানে এসেছে।মেয়েটি ভেবে দেখল,এখানে একা বসে থেকে কি করবে,তার চেয়ে থানায় যেয়ে খুঁজে বের করা যাক।মেয়েটি থানায় গেল।মেয়েটির কাছে সবকিছু শুনে এবং ঠিকানা নিয়ে পুলিশ ইন্সপেক্টর মেয়েটিকে সঙ্গে করে ছেলেটির বাসায় গেল।মেয়েটি ওখানে গিয়ে দেখল,এক তলা জরাজীর্ণ একটি বাড়ি।পুলিশ দরজা ধাক্কা দিলে ছেলেটি বের হয়ে এল।পুলিশ দেখে আসেপাশের মানুষ ভিড় করে দাঁড়াল।ছেলেটিকে যখন পুলিশ তার কাছে জানতে চাইল মেয়েটিকে সে আসতে বলেছে কিনা!ছেলেটি সব অস্বীকার করল।হয়তো পুলিশের ভয়ে।মেয়েটি ভাবল বাড়ি ছেড়ে এসেছে আর তো নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেনা তাই ছেলেটির সাথেই থাকবে বলে মনে মনে ঠিক করল।কিন্তু ছেলেটি বল্ল তার পক্ষে এই মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব না।কারণ ছেলেটি বুঝে ফেলছে যেহেতু মেয়েটি নিজের বাড়িঘর ছেড়ে একা একা আসছে অতএব ছেলেটি তো কিছু পাবেনা।বরং মেয়েটি যদি বাবা মাকে বুঝিয়ে ছেলেটিকে বিয়ে করতো তাহলে তো অনেক কিছু পেত।যেহেতু ছেলেটি অস্বীকার করছে তাই পুলিশ ত আর ধরেবেধে বিয়ে দিতে পারবেনা।তাই মেয়েটিকে নিয়ে থানায় ফেরত আসলো।
মেয়েটি বুঝে ফেলেছে সে কতবড় বাটপারের পাল্লায় পড়ে কি ভুল করেছে এবং নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছে।তাই অনবরত কাঁদতেছিল।মেয়েটির কান্না দেখে থানার সবারই চোখ ভিজে যাচ্ছিল।থানার ওসি মেয়েটির কাছে বার বার প্রশ্ন করে তার বাবার নাম ঠিকানা ও টেলিফোন নাম্বার জানতে পারল।তারপর মেয়েটির বাবার কাছে কল করল কিন্তু মেয়েটির বাবা মেয়েটিকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করল।মেয়টির বাবা বলল,তাকে ফিরিয়ে নিলে সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবেনা তাই সে ভাবছে তার মেয়ে নেই এবং কখনই ছিলনা।থানার ওসি বিপদে পড়ল।এখন এই মেয়েকে নিয়ে কি করবে!কারণ এত সুন্দর মেয়ে তাকে তো থানায় রাখা যাবেনা।দেখা যাবে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে যাবে।তখন বাধ্য হয়ে থানার থেকে এনজিও লোকদের খবর দেয়া হল।যেসকল মহিলারা বিপদে পড়ে তাদেরকে বিভিন্ন এনজিও বিভিন্নভাবে সাহায্য করে।তাই থানার সাথে এনজিওগুলির যোগাযোগ থাকে।এনজিও লোকেরা জানাল যেহেতু রাত্র হয়ে গেছে তাই তাদের অফিসের ড্রাইভার নেই,থানার লোকজন যেন কষ্ট করে তাদের আশ্রমে দিয়ে আসে।অতএব থানার ওসি কয়েকজন পুলিশের সাথে মহিলা পুলিশও দিয়ে পাঠাল মেয়েটিকে এনজিওর আশ্রমে পৌঁছে দিতে।
মামা বলল,এই হল ফেসবুকের প্রেম!বিশ্বাসের নিঃশ্বাস নেই।তারপর মায়াবিকে বলল,বুঝলি ভাগ্নি,কেন বলেছিলাম ফেসবুক ইউজ করিস কিনা!ইউজ কর অসুবিধা নেই তবে প্রেমে পড়িস না কারো।মায়াবী কিছু বলল না,কারণ মায়াবী তো একজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
মা বলল,তবে মেয়েটিকে ওর বাবার গ্রহণ করা উচিত ছিল,কেননা মেয়েটি তো ছেলেটির জন্য মানসিকভাবে খতিগ্রস্থ হয়েছে ঠিকই কিন্তু শারীরিক দিক দিয়ে তো ছেলেটি কোন ক্ষতিসাধন করতে পারেনি!কিন্তু এখন তো মেয়েটির অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।সিরাজ,মায়াকে ভালো করে বুঝিয়ে যা,সারাদিন তো ঐ নিয়েই বসে থাকে।তবে কথা হল,মেয়েটির এত কথা তুই বা জানলি কি করে?
মামা বলল,মায়াবী তোর মার কথা শুনে মনে হচ্ছে “সারা রাত রামায়ণ পড়ার পর বলে,সিতা কার বাপ!”আরে আপা,আমি শুরুতেই বলছিলাম না আমার এনজিওর এক বন্ধুর কাছে শুনেছি!মেয়েটি ওর প্রেমের সব কথা এনজিওর এক মহিলার কাছে বলেছে।পুলিশ আর এনজিওর লোকেরা পুরো ঘটনা শুনেই তো মেয়টির থাকার বন্দোবস্ত করেছে।আর শোন আপা,আমার ভাগ্নির ওপর আমার পুরো ভরসা আছে,ও এমন কিছু করবেনা যাতে তোমরা হেয় হও।কি বলিস,মা?
মায়াবী বলল,তুমি ঠিক বলেছ মামা,তুমি বরং মাকে বুঝাও।ফেসবুকে অনেক ভাল জিনিষ আছে যদিও আমি ফেসবুকে থাকিনা!তারপরেও মা,আমাকে বিশ্বাস করেনা।
মা বলল,ঠিক আছে,আর বুঝাতে হবেনা।আমি এখন রান্না ঘরে গেলাম।দেখি বুয়া কি করছে,সবার আসার সময় হয়ে এল।
মামা মায়াবীকে বলল,কিরে,ফাহিম আসবেনা?ওর সাথে একদান দাবা হয়ে যেত।
মায়াবী বলল,আমি কি করে বলব!
এমন সময় ভাইয়ার গলা শোনা গেল।মামা তুমি কোথায়?মামা বলল,তোর মা’র ঘরে।
ভাইয়া বলল,ওখানে কি কর?এখানে আসো।
মামা মায়াবীকে বলল,চল যাই,তানাহলে চেচামেচি করে মাথা খেয়ে ফেলবে।
(চলবে…।)