
লেখক রহমান ফাহমিদা -(চতুর্থ পর্ব)ঃ
মামা ভাইয়াকে বলল,কিরে মিলা আসে নাই?
ভাইয়া বলল,না,বাসায় চলে গেছে।তোমার খবর বল।
মামা বলল,আমার আবার খবর!
ভাইয়া বলল,কেন কি হয়েছে?নাটকের কোন খবর নেই!
মামা বলল,চলছে।তা তোর ছুটি কবে হবে?বাবা মা তো তোকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে।ঢাকার থেকে ঢাকা,তাই সময় করতে পারিস না!ঢাকার বাইরে হলে কি করতি?আর বিয়ে কবে করবি?তাদের অনেক আশা নাত বউ দেখে যাবে।
ভাইয়া লজ্জা পেয়ে বলল,কেন!তোমার বউ দেখার ইচ্ছে নেই তাদের?
মামা বলল, তা মনে হয় নেই।বুঝেছে আমাকে দিয়ে ওসব বিয়েসাদি হবেনা!তাই হয় তো বলেনা।
মা বলল,কি বলবে,তুই কি কারো কথা শুনিস যে বলবে!মাকে বলিস,মেঘের পরীক্ষা শেষ হলেই যাবে কারণ পড়ার অনেক চাপ এখন।
ভাইয়া বলল,নানা নানীকে বলবে আমি যে কোন সময় পরীক্ষার আগেই তাদের দোয়া নিতে আসব।
মামা বলল,জো হুকুম!মামার কথা শুনে হেসে উঠল।
মায়াবতী সবার কথার ফাঁকে ফাঁকে মোবাইল চেক করছে ফাহিমের কোন কল আসছে কিনা কিন্তু ফাহিমের কোনো মিস কল নেই!কখনো তো এমন করেনা!সব সময় তো ওর মান ভাঙ্গাতে এত দেরী করেনা।ঠিক এমন সময় মামা বলে উঠল,মিলা আসবেনা তাতো বুঝলাম কিন্তু ঐ বাঁদরটা এখনো আসছেনা কেন?ওতো সকালে বলে গেল,আসছি!কিরে মায়াবী তোকে কিছু ফোন করে বলেছে?
মা বলল,ওকে আর কল করবে!ফাহিম তো ওকে খেপিয়ে গেল।হয়তো সেই ভয়ে আসছেনা।কারণ মায়া তো ওকে একহাত নিতে ছাড়বেনা।
মামা বলল,হুম!তাহলে ওর আশা বাদ।
ভাইয়া বলল,চল মামা,তুমি আর আমি একটা মুভি দেখে আসি।বসুন্ধরা সিনে প্লাসে।ভাল একটা মুভি চলছে।
মামা বলল,তোর পড়ালেখার ক্ষতি হবেনা!
ভাইয়া বলল,পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে একটু এন্টারটেইনমেন্টের দরকার হয়!তা নাহলে মাথায় কিছু থাকেনা,বুঝলে?
মামা বলল,তাতো বুঝলাম কিন্তু মিলাকে ছাড়া যাবি?
ভাইয়া বলল,সব সময় মিলাকে নিয়ে যেতে হবে নাকি?এখন ও পার্মানেন্ট হয় নাই,যখন হবে তখন দেখা যাবে।চল তো!তারপর ভাইয়া মাকে বলল,মা আমি আর মামা আসছি,দেরি হলে তোমরা খেয়ে নিও।ওরা চলে গেলে,মায়াবী ওর ঘরে গিয়ে শুয়ে রইল।কখন যেন ওর ঘুম চলে আসল কারণ মামার সাথে সাথে গল্প করতে করতে দুপুরে একটু রেস্ট নিতে পারেনি।মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল।মা বলল,কিরে সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে পড়লি!তোর বাবা তোকে ডাকছে।
মায়াবী বলল,বাবা চলে এসেছে?
মা বলল,সেই কখন এসেছে,তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই ডাকি নাই।
মায়াবী বলল,মা তুমি বাবাকে গিয়ে বল,আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।মা চলে গেল।
মায়াবী মায়ের ঘরে গিয়ে দেখল বাবা পেপার হাতে নিয়ে ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।বাবা মায়াবীকে দেখে বলল,আয় মা কাছে আয়।তারপর বল তর শরীর এখন কেমন আছে?
মায়াবী বলল,ভালো আছি বাবা,আমাকে নিয়ে ওতো চিন্তা করনা তো!আমার ভালো লাগেনা।শোন বাবা,আমার কলেজের পরীক্ষা শেষ হলে অনেকদিন বন্ধ পাবো তারপর নানার বাড়ি ঘুরতে যাব।
বাবা বলল,ঠিক আছে তা যাবি।তারপর মাকে ডেকে বলল,মেঘের মা শুনো,আমরা তো মায়ার কলেজের এই বন্ধটা কাজে লাগাতে পারি।
মা বলল,কি রকম!
বাবা বলল,চল,এই ছুটিতে আমরা ইন্ডিয়ায় ঘুরে আসি আর সময় করে ওখানে গিয়ে মায়ার চেকআপটাও করে আসি,তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে!কারণ ফয়েজ বলার পর,যাব যাব করে অনেকদিন হয়ে গেল!ওর জ্বরটা কেন আসে বার বার তা তো এখানে ধরতে পারছেনা।
মায়াবির মা বলল,তাই হোক,মেঘের যেহেতু পরীক্ষা ওতো যেতে পারবেনা।সিরাজকে বলবো ওর সাথে থাকতে আর বুয়া ও আবুল তো আছেই।সাত আট দিনের জন্য গেলে মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবেনা।তুমি তাহলে ভিসার ব্যবস্থা কর।
মায়াবী বলল,ভাইয়াকে ছাড়া ঘুরতে যাব!
মা বলল,কেন না!তোর ভাই তো গত বছরই বন্ধুদের সাথে ঘুরে এল,তখন কি তোকে সঙ্গে নিয়েছিল?তাছাড়া ওর নিজেরই তো সময় নাই,সামনে ফাইনাল পরীক্ষা।কয়েক দিনেরই তো ব্যাপার।
বাবা বলল,বুয়াকে বল,টেবিলে খাবার দিতে।চল মা,ভাত খেয়ে নেই।সকালে মিটিং আছে।তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে।
খাবার টেবিলে মায়াবীর সাথে ওর মা আর বাবার নানান বিষয়ে কথা হল যেমন-পড়া লেখার কথা,ভাইয়ার বিয়ের কথা,ইন্ডিয়া যাওয়ার কথা সবকিছু।শেষ পর্যন্ত ফাইনাল হল,ওরা মায়াবীর কলেজের ছুটিতে ইন্ডিয়া যাবে।কয়েকদিনের মধ্যে ভিসার জন্য সবাই এম্বেসিতে দাঁড়াবে।আগে মায়াবীর বাবা লোক পাঠিয়ে ভিসার বন্দোবস্ত করেছে কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই!ভারতে নারী পাচার বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন মহিলাদের নিজেদের যেতে হয়,নিজের ভিসা আনার জন্য।
মায়াবী বাবা মায়ের সাথে ডিনার শেষ করে নিজের ঘরে চলে এল।কালকের কলেজের পড়া নিয়ে টেবিলে বসলো কিন্তু পড়ায় মন দিতে পারছেনা।কারণ বারবার মোবাইলের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে,ফাহিমের কলের জন্য কিন্তু ফাহিম একটি কলও করেনি এমনকি কোন ম্যাসেজও রাখেনি!মায়াবীর খুব কান্না পেল।ফাহিমের সাথে ও কথা না বলে একদণ্ডও থাকতে পারেনা।ফাহিম তা বুঝে কিন্তু মাঝে মাঝে জেনে বুঝেও কষ্ট দেয়।ফাহিম খুব রগচটা,নিজের কথার থেকে একদমই নড়চড় হবেনা।এমন ভাব ও যা বলে সবই ঠিক আর অন্যরা বেঠিক।মায়াবী একবার ভাবল ফাহিমকে কল করবে কিন্তু ওর ওপর থেকে রাগ পড়েনি তাই আর কল করল না।পড়ার বই নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল কারণ সামনের মাসের এক তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু।একটানা পরীক্ষা চলবে মাঝে দু’একদিন বন্ধ থাকবে।মায়াবী পড়ার বই পড়তে পড়তে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল।দরজা খুলে দিলে মা বলল,সকাল ১০ টা বেজে গেছে সবাই ডাইনিং-এ অপেক্ষা করছে তোর জন্য।তাড়াতাড়ি আয়।মায়াবী বলল,মা তুমি যাও আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।মায়াবী ফ্রেস হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখল মামা,ভাইয়া,বাবা মা সহ মিলা আপুও আছেন।মিলা আপুকে দেখে মায়াবি তো অবাক!মিলা আপু আসছে এত সকালে কিন্তু তার সাথের বাঁদরটাকে তো আশেপাশে দেখছেনা।তাই ফাহিম কোথায় আছে জানার জন্য মিলা আপুকে মায়াবী বলল,মিলা আপু তুমি এত সকালে!তোমার সাথের বাঁদরটা কই?
মিলা আপু উত্তর দেয়ার আগেই মামা বলল,নিশ্চয়ই তোর মত সেও ঘুমাচ্ছে এত বেলা পর্যন্ত।
মায়াবী বলল,আজকে তো ফ্রাইডে!কলেজ নেই,তাই একটু দেরি করে উঠেছি মামা।তাতে কি দোষ হল?
মিলা আপু দেখল-মায়াবীর রাগ হচ্ছে।তাই তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বলল,ফাহিম ঢাকায় নেই,ও কালকে হঠাৎ করেই বন্ধুদের সাথে কুমিল্লায় বেড়াতে গেছে।আমিও জানতাম না,ও কুমিল্লায় যাবে,আমাকে কল করেনি।বাসায় গিয়ে জেনেছি।কেন তোমার সাথে ফোনে কথা হয়নি!
মায়াবী বলল,না,আপনাকেই বলে যায়নি আর আমাকে কি বলবে।
মিলা আপু বুঝল মায়াবীর ফাহিমের ওপর রাগ হয়েছে।গত কালকের ব্যাপারটা নিয়ে হয়তো ওদের দু’বন্ধুর মধ্যে মান অভিমান চলছে।মিলাআপু বলল,আজকেই চলে আসবে,মাকে বলে গেছে।
মামা বলল,আমাকে বলে গেছিল আসবে কিন্তু আর এলো না।
মিলা আপু বলল,মামা,আপনি আজকে চলে যাবেন?
মামা বলল,হ্যাঁ, একটু পরেই চলে যাব।
বাবা বলল,আরে এখন কেন যাবে!চল আজকে শালা দুলাভাই একসাথে জুম্মার নামাজ পড়ি তারপর খাওয়াদাওয়া করে বিকেলে যাবে।
ভাইয়া বলল,বাবা ঠিকই বলেছে বিকেলে যেও।
মা বলল,মিলা আজকে আমাদের সাথে লাঞ্চ করে যাবে তা তোমার মাকে কল করে বলে দাও।
মায়াবী বলল,খুব মজা হবে।আপু তুমি আর আমি মিলে গল্প করবো।
মিলা বলল,আজকে থাক,আন্টি।আরেকদিন খাব এসে।আজকে শুক্রবার বাবা মা একা একা খাবে ফাহিমটাও ঢাকায় নাই আবার আমি না থাকলে তাদের মন খারাপ হবে।
মায়াবীর মা বলল,ঠিক আছে।তাহলে আর তোমাকে আটকাবো না।
মি্লা আপু মায়াবীর মাথায় আদর করে,ভাইয়ার রুমে যেয়ে কি একটা প্রয়োজনীয় বই নিতে এসে ছিল তা নিয়ে চলে গেল।মিলা আপুকে আজ খুব সুন্দর লাগছিল।হাল্কা গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে,তার গায়ের রঙের সাথে মানিয়ে গিয়েছে।ঠোঁটে হাল্কা লিপিস্টিক আর চোখে কাজল তাছাড়া তেমন কোন মেকআপ করেনি।তাতেই তাকে অনেক সুন্দর লাগছিল।মা কোনো এক সময় বলেছিল,মেয়েদের বিয়ের ফুল ফুটলে মেয়েরা নাকি অনেক সুন্দর হয়ে যায়।তবে কি ভাইয়ার বিয়ে খুব শীঘ্রই হবে!ভাইয়ার বিয়েতে মায়াবী খুব মজা করবে,শত হলেও একটা মাত্র ভাই।
সারাদিন ভাইয়া,মামা,বাবা মার সাথে মায়াবীর সময়টা ভালই কাটল কিন্তু মামা বিকেলে চলে যাবার পর ভাইয়াও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেল।আর মা বাবা দুজনে মিলে টিভিতে মুভি দেখতে বসে গেল।মায়াবীকে অবশ্য ডেকেছে তাদের সাথে মুভি দেখার জন্য কিন্তু মায়াবীর এতক্ষণ বসে মুভি দেখতে ভাল লাগেনা তাই ছাদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করল আর টবের ফুলগুলির পরিচর্যা করল বুয়াকে নিয়ে।মায়াবী ছাদের কার্নিশে রাখা টবের লাল জবা ফুলগুলিতে পানি দিতে দিতে ভাবছিল ঐ বাঁদরটা কোথায় গেল!একটু আনমনা হয়ে গেছিল এমন সময় বুয়া ডাক দিল,আফা কাজ শেষ আমি কি অহন যাইতাম?
মায়াবী বলল,দাড়াও ঐ দেখ গেটের কাছে হলুদ রঙের মাইক ফুলের গাছটি নুয়ে পড়ছে,ঐ গাছটিকে কোন কিছুর সাথে বেধে দিও।
বুয়া বল্ল-আইচ্ছা,আপ্নি কি আর কিছুক্ষণ থাকতেন!আমি তাইলে যাইগা।
বুয়া চলে গেলে মায়াবী দেখল সন্ধ্যা নেমে আসার আগেই নীল আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে হয় তো বৃষ্টি নামবে,আবার বৃষ্টি নাও হতে পারে।বৃষ্টি নামলে নামুক,মায়াবী আজকে ভিজবে কিন্তু মায়াবী জানে ওর এই আশা পূরণ হবেনা কারণ মায়াবীর ঘন ঘন জ্বর আসছে তাই মা ভিজতে দিবেনা।মনটা হটাৎ বিষণ্ণ হয়ে গেল এই আবহাওয়ায়।
হঠাৎ করে মনে হলো বেনুকে খবর দিয়ে আনা যায়!তাই মোবাইলে বেনুকে কল করল।ফোনের অপাশ থেকে বেনু বলল,তোর খবর কি?কলেজ থেকে আসার পর তো আর কল দিলিনা!
মায়াবী বলল,তুইও তো দিস নাই।
বেনু বলল,আমি তোর কলের অপেক্ষা করছিলাম তাই দেই নাই।তাছাড়া তোকে আর ফাহিমকে বিরক্ত করতে চাই নাই।
মায়াবী বলল,তোর যত্তসব আজগুবি কথা!ফাহিমকে কই পেলি?
বেনু বলল,আমি পাব কেন?তুইই তো পেয়েছিস!
মায়াবী বলল,ও ঢাকায় নেই।
বেণু বলল,ওহ তাই আমাকে স্মরণ করছেন!আমিও তো বলি,আমার ভাগ্য আজকে এত সুপ্রসন্ন কেন।এই বলে বেণু হাসতে লাগল।
মায়াবী বলল,বাঁদরামি রেখে চলে আয়।আমি ছাদে বসে আছি,খুব সুন্দর ওয়েদার মনে হয় বৃষ্টি আসবে।বুয়াকে বলে রাখছি তোর জন্য পিয়াজু আর চানাচুর দিয়ে মুড়ি বানিয়ে রাখতে।
বেণু মজা করে বলল,তুই খাবিনা!আমার জন্য বানাতে বলছিস মানে?
মায়াবী বলল,তাড়াতাড়ি আয় তো!এত ভণিতা করছিস কেন?
বেণু বলল,আসছি তবে একটু দেরি হবে।খালারা এসেছিল এখন চলে যাচ্ছে।চলে গেলেই রওনা দিব ।
মায়াবী বলল,ঠিক আছে।
আধা ঘণ্টা পর মায়াবী গেটের কলিংবেলের আওয়াজ ও দরজা খোলার শব্দ শুনে, মায়াবী বুয়াকে ছাদ থেকে বলল,বুয়া,কে এসেছে?
বুয়া বলল,বেণু আফা।
মায়াবী বলল,ওকে ছাদে পাঠিয়ে দাও।
মায়াবী গাছের ফুলগুলো দেখছিল এমন সময় বেণু এসে পেছন থেকে মায়াবী চোখ দুটি ধরল।মায়াবী বলল,আর চোখ ধরতে হবেনা,আমি জানি আপনি কে।তারপর চোখ ছেড়ে দিয়ে বেণু মায়াবিকে জড়িয়ে ধরে বলল,এবার বল,কেন এত জরুরী তলব?তারপর মায়াবীর মুখটাকে ভাল করে দেখে বলল,কি হয়েছে তোর?মুখটা এত মলিন লাগছে কেন?ফাহিমের সাথে ঝগড়া হয়েছে!আমাকে সব খুলে বল দেখি।
মায়াবী ফাহিমের সাথে কি হয়েছে সব ঘটনা খুলে বলল বেণুকে।বেণু সব শুনে বলল, তোর জ্বরটা তো প্রায়ই আসে আর যায়!তাই হয়তো ফাহিম একথা বলেছে,তবে সবার সামনে এরকম করে বলা ঠিক হয়নি।তবে আমার মনে হয় কি তোর ভাল করে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।প্রয়োজন হলে ইন্ডিয়াতে গিয়ে ট্রিটমেন্ট কর।দেখ,ওখানকার ডাক্তাররা কি বলে।
মায়াবী বল্ল- হুম!আমার পরীক্ষার পর যাব।
বেণু বলল,আর ফাহিমের কথা কানে নিস না।ও তো সবসময়ই দুষ্টুমি করে।ও হয়তো তখন বুঝে নাই তোর এত খারাপ লাগবে,ওর কথা!পরে হয়তো রিএলাইজ করেছে ,তাই তোকে বার বার কল করছে।হয়ত ওর ভুলের জন্য সরি বলত।তুই তো ওকে সেই সুযোগ দিলি না।তাই হয়তো তোর সাথে রাগ করে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছে।ও ঢাকায় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তাছারা তুই নিজেও তো ওকে কল করতে পারিস!
মায়াবী বলল,আ-আ-আমি?
বেণু বলল,হ্যাঁ, তুই না তো আমি!কল করব।
মায়াবী বলল,এখন!যদি কল না ধরে।আর ধরলেও ক থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত গালি দেওয়া শুরু করবে,ওর যেই রাগ!তোর সামনে আমি গালি খেতে রাজি নই।
বেণু বলল,এইজন্যই তো বলি,আন নন পারসন মানে অচেনা লোকের সাথে প্রেম করা ভাল,তাহলে গালি দেয়ার সাহস পেতো না।যেহেতু স্কুল লাইফ থেকে শুরু সেহেতু গালি হজম করতেই হবে,কারণ আপনারা তো শুধু প্রেমিক প্রেমিকা নন!বন্ধুও বটে।ঠিক আছে,রাতে কল করিস।এবার বল আজকে সারাদিন কি করলি?
মায়াবী বলল,মামা এসেছিল,তাঁর সাথে মিলা আপুও এসেছিল।ভাইয়া,আমি,বাবা মা মামা ও মিলা আপু,আমরা সবাই মিলে খুব মজা করলাম।যদিও মিলা আপু,কিছুক্ষণ থেকে চলে গিয়েছিল।আজকে মিলা আপুকে খুব সুন্দর লাগছিল।
বেণু বলল,তোর ভাইয়া আর মিলা আপুকে জুটি হিসেবে খুব মানিয়েছে।মামা এসেছিল ,আমাকে খবর দিলিনা কেন?সে এত মজার মানুষ এবং কথা বলে এত মজা করে। আসলে নাটক করে তো,তাই হয়তো এভাবে কথা বলে।তোকে তো নানান বিষয়ে উপদেশ দেয়!এবার কি উপদেশ দিল?
মায়াবী বলল,কি আবার দিবে!ফেসবুক।তবে ফেসবুক নিয়ে সাংঘাতিক একটি সত্যি ঘটনা বলেছে যা কিনা সব মেয়েদের সাবধানতার জন্য প্রযোজ্য।
বেণু অনেক আগ্রহ নিয়ে বলল,কি রকম?তাড়াতাড়ি বল।
মায়াবী বলল,বলছি একটু সবুর কর।এর মধ্যে বুয়া মুড়ি মাখানো,পিয়াজু আর ফ্লাক্সে চা দিয়ে গেল।শুন!তারপর মায়াবী,মামা যেভাবে চিটাগাঙের ঐ মেয়েটির সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেছিল তেমন করেই বর্ণনা করল।
বেণু বলল,তোর তো সেই চিন্তা নেই!কারণ তুই তো ফেসবুক থেকে নিয়ে কারো সাথে প্রেম করিস নাই।ফাহিম তো তোদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড।
মায়া বলল,আস্তে বল,কেউ শুনবে!তোর চ্যাঁচামেচিতে সবাই জেনে যাবে।কারণ ফাহিমের আর আমার ব্যাপারটা কেউ এখনো জানেনা,সবাই জানে আমরা দুজন ভালো বন্ধু।
বেণু বলল,ঠিক আছে বাবা!আমি আর কিছু বলছিনা।
তারপর দু’জনে মোবাইলে সেলফি তুলল।আর অনেক কিছু নিয়ে গল্প করল তবে পড়াটাও বাদ যায়নি সেই গল্পে।মায়াবী ফাহিম আর ওর ছবি দেখাল।অনেক গোপনীয় ম্যাসেজও বেণুকে দেখাল।মায়াবি জানে বেনু কখনোই ওদের কোন কথা ফাস করবেনা,এতটুক ভরসা ওর প্রতি আছে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ওরা দুজন ছাদ থেকে নিচে নেমে এল।
মায়াবীর মা,মায়াবীকে ডেকে বলল,কিরে মায়া,সন্ধার সময় চুল খুলে রেখে ছাদে গিয়েছিলি ক্যান?এমনেতেই অসুখ বিশুখ পিছু ছাড়েনা।
মায়াবী একটু রাগ হয়ে বলল,চুল ছাড়া থাকলে আমি মরে যাবনা আর কোন ভুতও আমার ওপর ভর করতে আসবেনা।কারণ আমি তো তোমার মত ফর্সা না।ভুত প্রেত ফর্সা মানুস পছন্দ করে।বরং তুমি সাবধানে থেক।মা মায়াবির কথায় লজ্জা পেয়ে বলল,কি যা তা বলছিস?যা নিজের ঘরে গিয়ে বস।তারপর বেণুকে বলল,বেনু,রাতে ডিনার করে যেও।
বেনু বলল,না আন্টি,আজকে না অন্যদিন।কারন আজকে হয়তো রাতে খাবোনা অনেক কিছু খেয়ে ফেলেছি।
মা বলল,কি যে বল,সামান্য মুড়ি পিয়াজুতেই পেট ভরা গেল!আজকাল তোমরা এত ফিগার সচেতন হয়েছ যে জিরো ফিগার না কি যেন,বানাতে ডায়েটিইং করে অসুখ বাঁধিয়ে ফেলো।আমাদের সময় আমরা সারাদিন মুখে একটা না একটা কিছু খাবার দিয়েই রাখতাম।এমনকি সরাসরি গাছ থেকে পেরে ফল খেতাম আর এখন তো কেমিক্যালের ভয়ে ফল এনে চব্বিশ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়।সব কিছুতেই ভেজাল।
বেনু বলল,ঠিক বলেছেন আন্টি,আপনাদের যুগই ভালো ছিল।
মা বলল,এজন্যে তো বলে,যায় দিন ভালো,আসে দিন খারাপ।
বেনু বল, হুম!তাহলে আসি আন্টি।
মায়াবী বেনুকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল।বেনু যাওয়ার সময়,মায়াবীকে বার বার করে অনুরোধ করে গেল,ফাহিমকে কল করার জন্য এবং ঝগড়া মিটমাট করে ফেলার জন্য।কারণ ছেলেদের যে মন!কখন যেন ফাহিম পাল্টিয়ে যায়!তাছাড়া জেরিন তো ফাহিমের পিছু লেগেই আছে,সুযোগ পেলেই খল নায়িকার মত ওদের দুজনের সম্পর্কের মাঝে ঢুকে পড়বে।ফাহিমের কিছু যায় আসবেনা বরং মায়াবীর কষ্ট বেশি হবে।
বেনুর সাথে কথা হওয়ার পর রাতে মায়াবী নিজের সাথে অনেক বোঝাপড়া করে ফাহিমকে কল করল।প্রথমে ফাহিম কল ধরলনা মোবাইলে রিংটোন হতে হতেই কেটে গেল।মায়াবী আবার কল করল,এবারো ফাহিম কল ধরলনা।মায়াবীর জেদ বেড়ে গেল, ও আবার কল করল,এবার ফাহিম কল ধরল কিন্তু চারিপাশে গাড়ি আর লোকজনের আওয়াজ।ফাহিম চিৎকার করে কথা বলছে।
ফাহিম বলল,কি অবস্থা!রাগ কমেছে?
মায়াবী একনাগারে বলল,তুমি কোথায়? এতক্ষণ কল ধরলেন না কেন?
ফাহিম বলল,আমি বাইকে।কখন কল দিয়েছ?
মায়াবী বলল,এইতো কিছুক্ষণ আগে।
ফাহিম বলল,আমি বাইকে তাই কল দেখিনি।
মায়াবী বলল,বাইকে তো বুঝলাম কিন্তু কোথায়?ঢাকায়।
ফাহিম বলল,না কুমিল্লায়।কালকে সকালে রওনা দিয়ে দুপুরের দিকে ইনশাআল্লাহ্ ঢাকায় পৌঁছে যাব।শোন এখন রাখি,বাইকে আছিতো হাইওয়েতে,এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে পরে কথা বলবো।
মায়াবী বলল,বালাই শাঠ।এক্সিডেন্ট হবে কেন!আর তোমার পরে তো এক ঘন্টাও হতে পারে আবার তিন দিন পরেও হতে পারে।
ফাহিম বলল,হতে পারে তো!এখন মোবাইলেও চার্জ নাই,ঢাকায় ফিরে কল দিব।ভাল থেকো,লাভ ইউ।আল্লাহ হাফেজ।
মায়াবী বলল,মি টু।আল্লাহ হাফেজ।
ফাহিম কল কেটে দিল।মায়াবীর ফাহিমের সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগছে মনের ভেতরে জমে থাকা মেঘ নিজের অজান্তে আপনেতেই সরে গেল।মায়াবীর এখন খুব শান্তি লাগছে।বেনু ঠিকই বলেছে ফাহিমের সাথে কথা বললে,ওর খুব ভাল লাগবে আর কষ্ট কমে যাবে।মায়াবী ভাবল,বেনুটা আসলেই ওর রিয়েল ফ্রেন্ড!যে কিনা সবসময় ওর ভালো চায়।মায়াবী ফ্রেস হয়ে শান্তিতে একটা ঘুম দিল তবে ঘুমাতে যাবার আগে কয়েকবার ফাহিমের ছবিগুলো দেখল।
পরের দিন মায়াবীর সকাল সকাল ঘুম ভাঙল কারণ ফাহিমের সাথে কথা বলার পর খুব শান্তিতে ঘুম দিয়েছিল।আজকে শনিবার তাই কলেজ বন্ধ।মায়াবী ফ্রেস হয়ে ওর মায়ের ঘরে গেল।মায়ের ঘরে গিয়ে দেখল,মা মহা ব্যস্ত।মা কাপড় গোছাচ্ছে আর বুয়া ফার্নিচারগুলো মুছে দিচ্ছে।মায়াবী মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,মা কোথায়ও যাচ্ছ?
মা বলল,কোথায় যাব?এই কথা বললি কেন?
মায়াবী বলল,এইযে কাপড় গোছগাছ করছো,তাই ভাবলাম কোথাও যাচ্ছ।
মা বলল,শীত এসে পড়ছে তাই গরম কাপড় গুলো রোদে দিব সে কারণেই গোছাচ্ছি।তাছাড়া তোর পরীক্ষার পর তো ইন্ডিয়া যাওয়া হবে তাই আরকি।
মায়াবী বলল,হুম!মা,এক কাজ করলে হয়না!আমরা ওখান থেকে ভাইয়ার বিয়ের শপিংটাও সেরে আসি।
মা বলল,না,তা হয় না।মেঘ আর মিলা ওদের শপিং নিজেরাই করবে।কারণ আজকাল ছেলে মেয়েরা নিজের বিয়ের শপিং নিজেরাই করে।এটা আজকাল ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।আগের সেই রীতি রেওয়াজ নেই যে,মুরব্বিরা বিয়ের শপিং করবে।
মায়াবী বলল,হুম!ঠিক বলেছ।তারপর মায়াবী বুয়াকে বলল,বুয়া এক কাপ গরম গরম চা নিয়ে আসো আমার মাথাটা খুব ধরেছে।
মা বলল,কিরে খালি পেটে চা খাবি কিরে!
মায়াবি দুষ্টুমি করে বলল,চা খাবনা মা,পান করব।
মা বলল,ঐ একই কথা,কত জন বলে,চা পান করবো!তারপর মা,মায়াবিকে বলল হ্যাঁরে মায়া,কালকে তোর ঘুম হয়েছিল?জ্বর টর আসেনি তো!
মায়াবী বলল,খুব ভালো ঘুম হয়েছিল তানাহলে কি তোমার ডাক না শুনেই উঠে পড়ি।ফাহিমের সাথে কথা বলে মায়াবির রাগ পড়ে গিয়েছিল তাই মায়াবী রাগ না করে বলল মাকে বলল,আর জ্বরের কথা বলছও!সে কালকে রাতে আর আসে নাই।মা তুমি আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা কর তাইনা?
মা বলল,মা তো সন্তানের জন্য সব সময় চিন্তা করবেই,সন্তান যেন ভাল থাকে এই দোয়া করে প্রতিটি মা এবং এটাই সব মায়ের প্রার্থনা।যেদিন মা হবি সেদিন বুঝবি ,আমার মাও আমাকে এই কথা বলছে।তাই হাড়ে হাড়ে এখ্ন,তা টের পাচ্ছি।
বুয়া চা নিয়ে এলে মায়াবী ওর মায়ের ঘরে যে বড় পালঙ্ক আছে,মায়াবির দাদুর আমলের তার মধ্যে গিয়ে বসল।এই পালঙ্কটি মায়াবীর খুব পছন্দ!তাই প্রায়ই মাকে বলে আমাকে বিয়ের সময় এই পালঙ্ক যৌতুক দিবে।মা বলে,পালঙ্ক কেন,আমার সবই তো তোর জন্য।
মায়াবী বলল,লক্ষী মা আমার।তারপর মায়াবী চা পান করতে করতে নেট ওপেন করে ফেসবুক খুলে বসলো।ফেসবুকে একজন পোষ্ট দিয়েছে মায়বীর পোস্টটি দেখে খুব ভাল লাগলো তাই ফাহিমকে পোস্টটি কপি করে পাঠিয়ে দিল।পোস্টই ছিল এরকম-
“অনেক অধিকার লুকিয়ে থাকে একটি কথায়– আমি তোমার কে?
অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে একটি কথায়—আমি তোমাকে ভালোবাসিনা
অনেক কষ্ট লুকিয়ে থাকে একটি কথায়—ভালো থেকো।
অনেক ব্যথা লুকিয়ে থাকে একটি কথায়—ঠিক আছে,ইটস ওকে।
অনেক কথা গোপন থাকে একটি কথায়—আমি কিছু জানিনা!
অনেক আবেদন লুকিয়ে থাকে একটি কথায় — তোমার ইচ্ছে।
অনেক চাওয়া লুকিয়ে থাকে একটি কথায়— থাক লাগবেনা,
অনেক অভিমান লুকিয়ে থাকে একটি কথায়— তোমার যা ইচ্ছে কর”।
মায়াবী পোস্টটি পাঠিয়ে বুঝতে পারল,ফাহিম হয়তো এত বড় পোস্ট দেখে মেজাজ খারাপ করবে।কেননা ফাহিম সব সময় বলে,তোমার সাথে দেখা হয়,কথা হয় তারপরেও এত বড় বড় পোষ্ট দেয়ার কি আছে!এত আবেগ কোথার থেকে পাও?আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবেনা আমি আছি তো তোমার সাথে এবং সব সময়ই থাকব।চিন্তার কিছু নেই।মায়াবীর ফাহিমের কথায় খুব কষ্ট পায়।তাই ও ফাহিমকে বলে আমার ভাল লাগে তাই তোমাকে পাঠাই।বকা খাবে জেনেও মায়াবীর যে পোস্টই ভালো লাগে তা ফাহিমকে পাঠিয়ে যাচ্ছে।ফাহিম রাগলে রাগুক কিছু করার নেই!মায়াবীর সারাদিন গেল মায়ের পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে আর ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকে গিয়ে ফাহিমের পোস্ট গুলো দেখে এবং বান্ধবিদের সাথে গল্প করে।ফাহিম এখনো কল করেনি।মায়াবি ভাবল,ফাহিম ঢাকার পথে রওনা দিয়েছে কিনা কে জানে।যেহেতু ও গত রাতে কল করেছে তাই এখন আর করবেনা।তাই দুপুরে খেয়েদেয়ে একটি গল্পের বই নিয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে পরতে লাগল।কখন যেন বই পড়তে পড়তে মায়াবীর চোখে ঘুম চলে আসছে সে নিজেও জানেনা।হঠাৎ করে ফাহিমের গলার স্বর শুনতে পেল,মা’এর সাথে কথা বলছে।প্রথমে ভাবল স্বপ্ন দেখছে কিন্তু না,আবারও স্পষ্ট ফাহিমের গলার আওয়াজ শুনতে পেল তাই মায়াবী বিছানা থেকে উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে আগে চোখেমুখে ভাল করে পানি দিয়ে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে দেখল মা আর ফাহিম ডাইনিং এ বসে গল্প করছে।মা ওকে দেখে বলল,কিরে ঘুম ভাঙ্গল?ফাহিম কখন এসে বসে আছে।
মায়াবী বলল,আমাকে ডাকোনি কেন?
মা বলল,ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু ফাহিম বলল,ও ঘুমাচ্ছে ঘুমাক আমরা দুজন বসে গল্প করি।তোর জন্য কুমিল্লা থেকে রসমালাই নিয়ে এসেছে,তুই পছন্দ করিস তাই। ফাহিম মায়াবীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কারণ আজকে মায়াবীকে অপূর্ব লাগছে,মায়াবী সাদা রঙের একটি টিসার্ট আর কালো ডিভাইডার পড়া ছিল।ওর লম্বা সিল্কি চুলগুলো বুকের দু’পাশে পড়ে ছিল আর ঘুম ঘুম ফোলা ফোলা দুটি চোখ এবং টসটসে কমলালেবুর কোয়ার মত দুটো ঠোঁট ওকে মুগ্ধ করে ফেলল!তাই চোখ ফেরাতে পারছিলনা।মায়াবীর মায়ের কথা শুনে নিজেকে সংবরণ করে ফাহিম মায়াবীর মাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই বলল,না,আন্টি,শুধু ওর জন্য কেন!সবার জন্যই এনেছি।
মায়াবী বলল,তোমার রসমালাই খেতে বয়েই গেছে আমার!
মা বলল,তোরা বসে গল্প কর আমি আসছি হাতের কাজ সেরে।
ফাহিম বলল মায়াবীকে,তোমার কাছে আমার একটি নোট আছেনা ওটা আমার লাগবে,চল তোমার ঘরে যাই।
মা বলল,তাই যাও।
মায়াবী বলল,কিসের নোট ?
ফাহিম চোখ টিপি দিয়ে বলল,ঐ যে রসায়নের নোট,সেদিন যে দিয়েছিলাম।
মায়াবী বুঝল,ফাহিমের কোন মতলব আছে।তানাহলে মিথ্যে কথা বলবে কেন!মা বলল,তোর ঘরে গিয়েই দেখ কোন নোট!আবার হারিয়ে ফেলিসনি তো?ইদানিং যা ভুলো মনের হয়েছিস।যা গিয়ে দ্যাখ,খুঁজে পাস কিনা।
ফাহিম বলল,দেখো হারালে কিন্তু খবর আছে!আর নোট পাবেনা কারণ অনেক কষ্ট করে নোটটি তৈরি করেছি।চল চল তোমার রুমে গিয়ে দেখি।
মায়াবী বুঝল,ওকে আর এখন না করা যাবেনা কারণ তা হলে মা বুঝে ফেলবে সব।ওর আর ফাহিমের সাথে কিছু চলছে।তাই বাধ্য হয়ে ফাহিমকে নিয়ে ওর রুমে গেল।ফাহিম রুমে ঢুকেই ওকে জরিয়ে ধরে ওর ঠোঁটে একটা চুমু খেল।এটার জন্য মায়াবী প্রস্তুত ছিলনা।ও ভীষণ লজ্জা পেল আর অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
ফাহিম বুঝল মায়াবী লজ্জা পেয়েছে তাই পরিবেশকে স্বাভাবিক করার জন্য বলল,কত দিন পর তোমাকে কাছে পেলাম।এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম বহুদিন কিন্তু সব সময় আপু নয়তো ভাইয়া সাথে থাকে।নিজেরা ঠিকই মজা করে প্রেম করে আর আমাদের বেলায় বাগড়া দেয়।
মায়াবী একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল,তুমি একটা যা ইচ্ছে তাই!কখন যে কি কর নিজেও জানোনা।নিজেই বল কেউ যেন না জানে,আবার নিজেই উল্টাপাল্টা কাজ কর।তোমার জন্যই একদিন ধরা পড়ব।
ফাহিম বলল,ধরা পরলে বিয়ে করে ফেলব।
মায়াবী বলল,বিয়েটা যেমন মুখের কথা!বলল আর হয়ে গেল।
ফাহিম বলল,কি করব বল,আজকে তোমাকে এত সুন্দর লাগছে যে লোভ সংবরন করতে পারলাম না।তাছাড়া তুমি আমাকে যে ম্যাসেজ পাঠিয়েছ তা্র শেষের লাইনে তো বলা আছে,‘অনেক অভিমান লুকিয়ে থাকে একটি কথায়-তোমার যা ইচ্ছে কর!”যেহেতু তুমি আমার সাথে অভিমান করেছো,তাই আমিও যা ইচ্ছে তাই করলাম! এই বলে ফাহিম অট্টহাসি দিল।
মায়াবী বুঝল,নিজের জালে নিজেই ধরা পড়েছে।তাই কি আর করা,প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য অভিমানির সুরে বলল,আমাকে না জানিয়ে কুমিল্লায় চলে গেলে কেন?
ফাহিম বলল,সব সময় কেন গেলাম?কোথায় গেলাম?এত কিছু জানতে চাইবেনা।তবে এবার কেন গিয়েছি তার কারণ তুমি।
মায়াবী বলল,আমিই!
ফাহিম বলল,তা নয়তো কে?আমার তো যাওয়ার কথা ছিলনা!তোমার সাথে টাইমপাছ করার কথা ছিল কিন্তু তুমি সামান্য কথায় এত রাগ করলে যে,আমাকে সরি বলার সুযোগও দিলেনা!এতবার কল করার পর।
মায়াবী বলল,ওটা কি সামান্য ব্যাপার ছিল?এতোগুলো মানুষের সামনে তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে?
ফাহিম বলল,যখন বুঝলাম সবার সামনে তোমাকে বলা ঠিক হয়নি,তখন তো সরি বলার জন্যই কল করেছিলাম কিন্তু তুমি,তুমি আমার কল রিসিভ করলে না। সেই জন্যে তো বন্ধুদের সাথে কুমিল্লা চলে গেলাম।কারণ এখানে থাকলে তোমার সাথে আবার ঝগড়া হবে।আমি চাই মিলেমিশে থাকতে।কিন্তু তুমি কথায় কথায় ভুল ধর, তা আমার ভালো লাগেনা।
মায়াবী দেখল ফাহিম আবার রাগ হয়ে যাচ্ছে তাই পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বলল,আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি।
ফাহিম বলল,মিস করার জন্যে তো দূরে চলে গেছিলাম।তারপর হেসে বলল,একদিকে ভালই হল,তুমি মিস করেছো বলেই আজকে বোনাস পেয়ে গেলাম!আমি খুব খুশী,কি তুমি খুশি তো!
মায়াবী বলল,কি যে বলোনা।
ফাহিম বলল,জানি বলবে না,কিন্তু তোমার মুখ চোখ বলছে তুমি পুরোপুরি মজা পেয়েছ এই বলে ফাহিম জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
মায়াবী বলল,আস্তে,মা কি ভাববে!
ফাহিম বলল,কি আর ভাববে!ভাববে তার মেয়ে এমন কোন মজার জোকস বলছে তাই হাসছি।শোন আমি তাহলে এখন যাই পরে কল করবোনে।বাবার সাথে এখনো দেখা হয়নি,কুমিল্লা থেকে আসার পর।তাই যাই লক্ষিসোনা,ভালো থেকো।লাভ ইউ জান,বাই।
মায়াবী বলল,লাভ ইউ জান্টুস,বাই।
মায়াবীর রোজ রাতেই ফাহিমের সাথে কথা হয়।অনেক সময় কথা বলতে বলতে রাত পার হয়ে যায়।বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয়।তারপরেও ওদের কথার কোন শেষ নেই!কত স্বপ্ন,কত আশা,সেই সাথে অনেক অনেক ভালোবাসা আর লেখা পড়ার ডিসকাস তো আছেই।
এভাবে নভেম্বর মাস শেষ হয়ে গেল সে সাথে মায়াবীর টেস্ট পরীক্ষাও।ফাহিমের পরীক্ষা মায়াবীর কয়েকটা পরীক্ষার পর শুরু হয়েছে তাই শেষ হতে দেরি আছে।এদিকে বাবা মার সাথে মায়াবীর ইন্ডিয়ার ভিসা হয়ে গেছে ওরা ইন্ডিয়ার উদ্দেশে রওনা হবে দু একদিনের মধ্যে।মা,মামাকে মায়াবীর ভাইয়ার সাথে রেখে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ভাইয়া বলছে সামনে ওর ফাইনাল পরীক্ষা ও পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবে ,তাই মামা বোর ফিল করবে।অতএব মামাকে রেখে যাওয়ার চিন্তা মা মাথার থেকে বাদ দিল।যাই হোক মায়াবী ওর বাবা মায়ের সাথে ইন্ডিয়া রওনা হলো।
ফাহিম একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিল মায়াবীর চলে যাবার সময়।তাই ফাহিম বলল,তুমি আমাকে ফেলে যাচ্ছ।ইস!আমার পরীক্ষাটি যদি শেষ হয়ে যেত তাহলে আমিও তোমাদের সাথে যেতাম।কি আর করা!আমি তোমাকে আমার পরীক্ষার মধ্যেও মিস করবো।
মায়াবী বলল,আমিও তোমাকে অনেক অনেক মিস করবো তাইতো বাবাকে দিয়ে আমার ফোনটাকে রোমিং সিস্টেম করিয়ে নিলাম।এখন ওখানে বসেও তোমার সাথে কথা বলা যাবে।তাই চিন্তা করোনা,আমি রোজ তোমার সাথে কথা বলবো।আর ওখানকার আপডেট জানাবো।
ফাহিম বলল,যাও আর মজা করে ঘুরে আসো।একটা নতুন জায়গায় যাচ্ছ সেখানে অন্য চিন্তা করলে মজাটাই মাটি হয়ে যাবে।আর আমার জন্য ভেবোনা আমি তো পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকব।তাছাড়া তোমাকে ছাড়া অন্য কোথায়ও,এত দিন যেহেতু যাইনি আর যাবও না,এতটুকু বিশ্বাস করতে পারো।অতএব নো চিন্তা ডু ফুর্তি!
মায়াবি মনে মনে ভাবল চিন্তা তো ছিল যদি জেরিন এইসময় ঢাকায় থাকতো! ভাগ্যিস ও ওর ফ্যামিলির সাথে ঢাকার বাইরে বেড়াতে গেছে।তানাহলে তো মায়াবীর এবসেন্সে ফাহিমকে কাছে করে নিত,এই ভয়টা মায়াবীর থাকতো ও ঢাকায় থাকলে।।যদিও ফাহিমের প্রতি বিশ্বাস আছে তারপরেও নানান দিকে কিছু ছেলে মানুষের কাজ কারবার দেখে আর বিশ্বাস রাখতে পারেনা।কোথায় যেন কিন্তু থেকে যায়।
তাই মায়াবী ফাহিমকে বলল,ছিঃ!এসব কি বলছ।আমি তোমাকে পুরপুরি বিশ্বাস করি।তুমি ভাল করে পরীক্ষা দিও আর ভালো থেকো।দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন চলে যাবে,টেরই পাবেনা।তারপর দুজন দুজনের কাছ থেকে সচরাচর যেভাবে বিদায় নেয় সেইভাবেই বিদায় নিল।
মায়াবীর বাবার অফিসের পরিচিত একজনের ছেলে যার নাম সুবির চ্যাটার্জী।সে মায়াবীদের ইন্ডিয়ার ইম্পরট্যান্ট প্লেসগুলো ঘুরে দেখাল অনেকটা গাইড হিসেবে।ওরা অনেক জায়গায় গেল যেমন-আগ্রায়-দিরেডফোর্ট,তাজমহল।ইন্ডিয়া মিউজিয়াম,ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল হল,জোরা সাঁকো ঠাকুর বাড়ি,হাওরা ব্রিজ,প্রিন্সগেট ইত্যাদি।এগুলো দেখার পর ওরা দিল্লি থেকে ও কলকাতা নিউমার্কেট থেকে সবার জন্য কাপড় এবং কিছু জিনিষ কিনল।ফাহিম আর মিলা আপুও বাদ যায়নি সেই লিস্ট থেকে।মায়াবীর চুড়ি খুব পছন্দ।ইন্ডিয়াতে অনেক রকমের চুড়ি পাওয়া যায়,মায়াবী মন ভরে অনেক চুরি কিনল।ওর ড্রেসের সাথে ম্যাচ করে তাছাড়া সামনে মায়াবীর ভাইয়ার বিয়ে তাই হলুদের জন্যও অনেক চুরি কিনল।
শপিং করা শেষ হওয়ার পর ওরা ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট অনুযায়ী ঢাকায় আসার দুদিন আগে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখাল।মায়াবিকে নানান রকম ব্লাড টেস্ট দিল কালচার করতে।ওর জ্বরটা কোথার থেকে আবির্ভাব হচ্ছে তা জানার জন্য ইউরিন,স্টুলসহ আলট্রাসনো টেস্ট করাতে দিল কিন্তু সব রিপোর্ট পাবে দুইসপ্তাহ পর তাই ওরা ঢাকায় চলে এল।ফাহিমের বাবা ডাক্তার তাই,আবার মায়াবীর বাবার বন্ধু সেজন্যে ডাক্তার ফয়েজ এর ঠিকানা দিয়ে এলো যেন,তার সাথে পরামর্শ করতে পারে। মায়াবীরা ঢাকায় পৌছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেল।দুপুরে বাসায় এসে খেয়েদেয়ে ঘুম দিল।কখন যেন বিকাল হয়ে গেল।অনুভব করল কে যেন চুমু দিল ওর কপালে।ও তাড়াতাড়ি করে বিছানায় উঠে বসল।তাকিয়ে দেখে ফাহিম।মায়াবী বলল,তুমি এখানে এই সময়!কখন এসেছ?
ফাহিম হেসে বলল,তোমরা এসেছ খবর পেয়ে আপু আমাকে নিয়ে চলে আসল।আপু আন্টির ঘরে আছে,আমাকে আন্টি পাঠাল তোমাকে ডেকে নিয়ে যেতে কিন্তু তোমার গভীর ঘুমের মুখটি এত সুন্দর লাগছিল তাই আমার তোমাকে ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছিলনা!এজন্যে আলতো করে আদর দিয়ে দিলাম তোমার কপালে কারণ আমি জানি ডাকাডাকি করে যতটা সময় লাগত তোমাকে জাগাতে,তার চেয়ে আমার পরশ পেয়ে তুমি তাড়াতাড়ি উঠে যাবে।দেখলে!তাই হল।
মায়াবী বলল,এত আজগুবি যুক্তি তুমি কোথায় পাও?
ফাহিম বলল,কেন,ভুল বলেছি?আমি কোন কথা সঠিক না হলে যুক্তি দেখাই না!এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আন্টির ঘরে আসো,আমি কি যাব ?
মায়াবী বলল,যাবে না তো বসে থাকবে!বুদ্ধু কোথাকার।
ফাহিম বলল,আমাকে যেহেতু বুদ্ধু বলেছো সেহেতু আমি বসেই থাকব।
মায়াবী বলল,যাও তো!সবাই কি মনে করবে।
ফাহিম বলল,ঠিক আছে,চলে যাচ্ছি।ফাহিম চলে গেলে মায়াবী ফ্রেস হয়ে মায়ের ঘরে গেল।মা,মায়াবীকে দেখে বলল,কিরে,ঘুম ভাঙল?
মায়াবী বলল,ঘুম না ভাঙলে আসলাম কেমন করে!সবাই হেসে দিল।মায়াবী দেখল,মিলা আপুর হাতে শাড়ি,মায়াবী বলল,মিলা আপু তোমার শাড়ি পছন্দ হয়েছে?
মিলা বলল,হ্যাঁ,খুব পছন্দ হয়েছে।
মায়াবী বলল,আমি পছন্দ করেছি কেনার সময়।
ফাহিম ওর কুর্তা পাঞ্জাবী হাতে নিয়ে বলল,আমারটা কে পছন্দ করেছে?
মায়াবী বলল,মা,পছন্দ করেছে।
ফাহিম দুষ্টুমি করে বলল,এ জন্যেই এত সুন্দর হয়েছে।
মায়াবী বলল,কি বলতে চাও?তারমানে মিলা আপুরটা সুন্দর না!
মিলা আপু বলল,ওর কথা বাদ দেও,ও শুধু সবাইকে ক্ষেপাতে ওস্তাদ।
মা বলল,চল সবাই ডাইনিংএ যাই।বুয়া নাস্তা দিয়েছে।চা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
সবাই ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল-মায়াবীদের ডাইনিং টেবিলটা অনেক বড়,আট চেয়ারের ডাইনিং টেবিল।তাই সবাই একসাথে বসে গল্প করতে পারে।ওদের সবার সাথে ভাইয়া আর বাবাও যোগ দিল।বাবা মিলা আপুকে বলল,মিলা,ফয়েজকে(মিলা আপুর বাবা)বলবে আ্মি ইন্ডিয়াতে মায়াবীর ডাক্তারকে ওর হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে এসেছি।তোমার বাবার ঠিকানায় মায়াবীর রিপোর্টগুলো আসবে।এর মধ্যে আমি অবশ্য তোমার বাবার সাথে দেখা করব।রিপোর্ট আসতে হয়তো দশ/বার দিন লাগতে পারে কারণ কালচার করতে দিয়েছে তো তাই।
মিলা বলল,ঠিক আছে আংকেল,আমি বাবাকে বলবো।
মা বলল,ওখানে প্রথম প্রথম মায়ার তেমন জ্বর আসেনি তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দুদিন আগে জ্বরটা এসেছিল।
ভাইয়া বলল,ডাক্তারের ভয়ে মনে হয়।
মা ভাইয়াকে বলল,তোকে বলেছে!
নাস্তা শেষ করে সবাই যার যার মত চলে গেল।মিলা আপু আর ফাহিম চলে গেল।ফাহিম যাবার সময় আস্তে করে বলে গেল,রাতে কল করবে।মায়াবী মাথা নেড়ে বল্ল ঠিক আছে।
রাতে ফাহিম কল করল তখনো মায়াবী ঘুমের মধ্যে ছিল।ঢুলুঢুলু চোখে ফোন রিসিভ করল।ফাহিম বুঝল,মায়াবী ঘুমাচ্ছে তাই বলল,কি ব্যাপার!এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছো?
মায়াবী বলল,হুম!এত জার্নি করে টায়ার্ড হয়ে গিয়েছি তাই খালি ঘুম পাচ্ছে।তুমি বল ,কি বলবে?
ফাহিম বলল,তুমি তো ঘুমাচ্ছ! কি আর বলব?তুমি তো ঘুমের ঘরে আমার কোন কথাই শুনতে পারবেনা ।
মায়াবী বলল,যা বলার বল,আমার ঘুম চলে গেছে।
ফাহিম বলল,আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তোমাকে অনেক মিস করছি।
মায়াবী বলল,কিন্তু আমাদের তো ফোনে কথা হয়েছে,তখন কেন বলনি?
ফাহিম বলল,তোমার বেড়ানোর মজাটা নষ্ট করতে চাইনি তাই।
মায়াবী বলল,হুম!আমিও তোমাকে মিস করেছি বিশেষ করে তাজমহলের সামনে গিয়ে।
ফাহিম বলল,দাড়াও দাড়াও!তোমার তাজমহলের কথা শুনে তাজমহল নিয়ে একটি মজার জোকস পড়েছিলাম পেপারে।জোকসটা বলছি-
প্রেমিকা প্রেমিককে বলছে-আমাকে তুমি কতটা ভালোবাসো?
প্রেমিক বলছে-সীমাহীন ।
প্রেমিকা বলল,তাহলে আমার জন্য তাজমহল বানাওনা কেন?
প্রেমিক বলছে,বানাব তো!জমি কিনেছি,এখন শুধু তোমার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি।
এই বলে ফাহিম অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।মায়াবীও ওর সাথে হাসিতে যোগ দিল।
মায়বী হাসতে হাসতে বলল,সঠিক সময় সঠিক জোকস তুমি কিভাবে যে খুঁজে পাও তা আল্লাহ্ই জানেন।
ফাহিম বলল,তোমাকে একটা কথা বলছি,আমার সাথে অভিমান করে তুমি মাঝেমাঝে যে স্ট্যাটাস দাও তা বুঝেসুঝে দিও কারণ আমি চাইনা আমাকে নিয়ে তুমি যা লিখছ তা আবার অন্য কেউ কারো জন্য পোস্ট দিক।সেটা আমার সহ্য হবেনা।
মায়াবী বলল,মানে কি!তোমার কথার মাথা মন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিনা।
ফাহিম বলল,মানে হলো,আজকাল গল্প কবিতার সাথে সাথে স্ট্যাটাস ও পোষ্টগুলো চুরি হয়ে যায়।
মায়াবী বলল,ফেসবুক দেখি চোর বাটপারে ভরে গেল!ইদানিং ফেসবুক ওপেন করতে ইচ্ছে হয়না।ফেসবুক খুললেই দেখা যায় একজন আরেকজনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আবার অনেকে সুইসাইডের পথও বেছে নিচ্ছে।সেদিন তোমাকে মামার মুখে শোনা ঘটনাটি বলেছিলাম না!কি সাংঘাতিক ছিল ঘটনাটি।সবচেয়ে খারাপ লাগে এরকম পোস্ট তা হল-কেউ কেউ তার বাবা অথবা মা মরণাপন্ন হয়ে আইসিউতে আছে তার সাথে সেলফি দিয়ে ছবি দিচ্ছে!তবে ভাল কিছু যে হচ্ছেনা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে তা বলা ঠিক না!অনেক ভাল ভাল কাজও হচ্ছে,যেমন-অনেকে নিজেদের পুরনো বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে মা বাবাকেও খুঁজে পাচ্ছে,অনেকের প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে এর মাধ্যমে,আপডেট জানা যাচ্ছে,সমস্ত পৃথিবীর।আসলে সব কিছুর পেছনে খারাপ ভাল আছে তবে নিজেদের বুঝে চলতে হবে।
ফাহিম বলল,ওরে বাপস!একদম হেডমাস্টারের মত উপদেশ দিয়ে ফেললে।তোমার তো ভয় নেই!কারণ আমি তো আর ফেসবুক থেকে এসে তোমাকে ভালোবাসিনি।আর ফেসবুকের অন্যান্য ব্যাপারগুলোতে আমিই তোমাকে গাইড করব,অসুবিধা নেই।বুঝলেন?এবার ফেসবুক বাদ দাও তো অন্য কথা বল।তোমার শক্ত শক্ত কথা শুনে আমার ঘুম এসে পড়ছে।
মায়াবী বলল,ঠিক আছে বাদ দিলাম।আমি তো এতদিন ছিলাম না,তুমি কি করছ তখন?
ফাহিম বলল,দিন গুনছো কেন?তুমি ছিলে না শারীরিকভাবে কিন্তু মনে তো ছিলে! আর তোমার সাথে তো প্রায় রোজই কথা হয়েছে।বাকী সময় তো পরীক্ষা দিতে দিতেই কেটে গেল।মনে হচ্ছে তোমার সাথে চলতে হলে কাজকাম সব বাদ দিয়ে চুপচাপ তোমার সাথে বসে থাকতে হবে!
ফাহিমের এইভাবে কথা শুনে মায়াবীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল,নিজেকে সংবরণ করে বলল,আমি কি তাই বলেছি?এমনেই জানতে চেয়েছি।
ফাহিম বুঝল মায়াবী কষ্ট পেয়েছে তাই বলল,বাদ দাও ওসব,চল কালকে বাইকে করে অনেক দূরে ঘুরতে যাই।আন্টিকে বলে রেখো আর যদি আন্টিকে না জানাতে চাও তবে বেনুকে ম্যানেজ কর।ওর বাসার থেকে তোমাকে পিকাপ করব।তবে শাড়ি পড়বে,ম্যাচিং করে শাড়ির সাথে চুড়ি পড়বে এবং কপালে বড় একটি লাল টিপ দেবে।
মায়াবী বলল,দেখি!
ফাহিম ঝারি মেরে বলল,দেখিনা,আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।যদি না আসো তবে কিন্তু খারাপ হবে।তারপর বলল,আমার খুব ঘুম পাচ্ছে,বাকী কথা কালকে দেখা হলে বলবো।তুমিও ঘুমাও।
মায়াবী বলল,শোন!
ফাহিম বলল,শোন বলো না,তোমার শোন মানেই হচ্ছে বেশি বেশি কথা বলা আর অনিচ্ছায় ঝগড়া লাগা।এখন রাখো।কালকে মিস করো না।
মায়াবী ফাহিম রেগে গিয়েছে দেখে,তাই বলল,ঠিক আছে মিস করবো না।আসব।
ফাহিম খুশি হয়ে বলল,এই তো আমার জান পাখি!আই লাভ ইউ।
মায়াবী বলল,আই লাভ ইউ টু।আল্লাহ হাফেজ।
ফাহিম বলল,আল্লাহ হাফেজ,বলেই মোবাইলের লাইনে কেটে দিল।
(চলবে…)।