দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে শালা-সম্বন্ধী সবাই ব্যাংক ঋণ পেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে: কাজী ফিরোজ রশীদ

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন,  ব্যাংকিং সেক্টর ও লিজিং কোম্পানির নামে লুটপাট চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, যখন একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকে, আত্মীয়-স্বজনের অভাব হয় না। শালা-সম্বন্ধী, তার শালা, তার শ্বশুরবাড়ি- এরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য। লোন পেয়েও যাচ্ছে। এই টাকা কোথায় যায়, মনিটরিং হচ্ছে না।

গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।এর আগে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে করোনা মহামারীকালেও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে। অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। আলোচনায় অংশ নেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সরকারি দলের এ কে এম শাহজাহান কামাল, দীপংকর তালুকদার এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ দেশের অর্থনৈতিক খাতে লুটপাটের নানা চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সেক্টরগুলো একদম দুর্বল, নড়বড়ে। ব্যাংকিং সেক্টর ও লিজিং কোম্পানি থেকে হাজার হাজার কোটি নিয়ে মানুষ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এই ব্যাংকের পরিচালক ওই ব্যাংক থেকে নেয়, ওই ব্যাংকের পরিচালক এই ব্যাংক থেকে নেয়। তিনি আরও বলেন, এসবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। তারা কেন খবর রাখেনি। এক পি কে হালদারের পেছনে ঘুরে কী হবে? সে আর কত টাকা মেরেছে? এমন শত শত পি কে হালদার লুকিয়ে আছে। তিনি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, একটি সংগঠন আছে নাস্তিক নির্মূল কমিটি। আরেকটি সংগঠন হচ্ছে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। এই নির্মূল করার ক্ষমতা এদের কে দিয়েছে? দেশে কোর্ট-কাছারি আছে না? অনেক বিচার করেছে এই সরকার। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। রাজকারদের বিচার হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তোমরা নির্মূল করার কারা? আমি মনে করি, এদেরকেই প্রতিরোধ করার দরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমি অনুরোধ করব, এসব সংগঠনগুলো বন্ধ করুন। যাতে কেউ মানুষ নির্মূল করতে না পারে।

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যদি বন্ধ না করতেন একটা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতো। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত দেখেন। করোনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে গেছে, তার মানে এই না করোনা শেষ হয়ে গেছে। মার্চ মাসের দিকে গরম আসবে। তখন স্কুল-কলেজ খুলে দিলে ভালো হবে। এই ?মুহূর্তে কারও কথায় স্কুল খুলবেন না।

নিজ দলের এমপিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমাদের কারও কারও বক্তব্যে বোঝা যায় না আমরা কোন দলের সংসদ সদস্য। কোনো কোনো সংসদ সদস্য একবারও জাতীয় পার্টির নাম উচ্চারণ করেন না। আমাদের নেতা এইচ এম এরশাদের নাম উচ্চারণ করেন না। অথচ তারা আমাদের দলের সংসদ সদস্য। আমাদের মনোনয়ন নিয়ে সংসদে আছেন। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, ২০১৪ সালে যে ধ্বংসযজ্ঞ ছিল, সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি না এলে নির্বাচন হতো না। সরকার, সংবিধান, সংসদ কিছুই থাকত না। নির্বাচন না হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসত না। দেশের উন্নয়নও হতো না।

প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, গত এক যুগে দেশে আবাসন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেলসহ ২৪টি মেগা প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হলে দেশের অর্থনীতি বদলে যাবে। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, গত এক যুগে শিল্প খাতের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশেষ করে এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশে পরিণত হবে।

SHARE THIS ARTICLE