
আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্কঃ বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৮ মাস পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আজ স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খুলছে। কোভিড মহামারির সংক্রমণ রোধের উদ্দেশ্যে পৃথিবীর অনেক দেশের মত বাংলাদেশে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করা হয়েছিলো দেড় বছর আগে।এরপর দফায় দফায় অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষায় থাকার পর সেই অপেক্ষার ইতি ঘটতে যাচ্ছে আজ।

দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকেই ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। যদিও অনেকের মনে স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানা হবে কিংবা কতটুকু মেনে চলা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তথ্যমতে, স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধুলোমাখা বেঞ্চ, ব্লাক বোর্ড ছাড়াও পরিষ্কার করা হয়েছে ক্লাস রুম। হাতধোয়ার বেসিন স্থাপন, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক দূরত্বের বিধি, হাতধোয়ার সঠিক নিয়ম, মাস্ক পরার নিয়ম, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারও টাঙানো হয়েছে। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নূতন করে রং দেয়া হয়েছে এবং কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাজানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নিতে রুটিন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনা মেনে ইতিমধ্যে রুটিন দিয়েছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ। এই নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন নেয়া হবে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন ক্লাস হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুটিন প্রণয়ন করার কথা রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে সেগুলোতে সব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো সমন্বয় করে রুটিন প্রণয়ন করতে হবে। মাউশির এই নির্দেশনা মেনে স্কুল-কলেজগুলোতে আজ থেকে শুরু হবে ক্লাস। রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারেন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের হতে পারেন। এখন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের এসেম্বলি করা বন্ধ থাকবে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল খুলে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে মাউশি অধিদফতর। হোস্টেল চালুর ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে হোস্টেল খোলার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৪টি নির্দেশনা মানতে হবে। এসব নির্দেশনার মধ্যে- ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি, স্পোর্টস রুম ও অন্যান্য রুম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। রান্নাঘর থেকে রুমগুলোতে সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। একাধিক শিক্ষার্থীর একই বিছানা ব্যবহার করা যাবে না। একসঙ্গে নামাজ, প্রার্থনা, সমাবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে ওঠার আগে কভিড আরটিপিসিআর পরীক্ষা করে ফলাফল নেগেটিত হলে হোস্টেলে আসবে। হোস্টেলে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। হোস্টেল, বাথরুম, টয়লেট, বেসিন, ড্রেন ইত্যাদি প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করে রাখতে হবে। সবাই ব্যক্তিগত সাবান, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার করবে এবং ব্যক্তিগত লকার অন্যান্য জিনিসপত্র পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখবে। হোস্টেলে খাবার পানি ও খাদ্যসামগ্রী নিরাপদ রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু সংক্রমণ ও এডিস মশা বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইড লাইন অনুসরণ করতে হবে। আবাসিক শিক্ষার্থী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারী ব্যতীত অন্য কেউ হোস্টেলে অবস্থান বা যাতায়াত করতে পারবেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার পর কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে তা প্রতিদিন জানাতে ও সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।
স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে দীর্ঘ, ভেনিজুয়েলাও এব্যাপারে বাংলাদেশের সমকক্ষ। অনেকেই মনে করছেন সরকার শিশু কিশোরদের ব্যাপারে অধিকতর সচেতন ছিলেন এবং স্কুল কলেজ থেকে সামাজিক সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনার দিকটাও খেয়াল দিয়েছেন বেশী। যদিও বিশ্বে শিশু কিশোরদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম ছিল এবং বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র শিক্ষা ব্যাবস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন মনে করে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান খুলে দেবার আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছিলো। যদিও খুলে দেবার পর কিছু কিছু দেশে সংক্রমণ কিছুটা বাড়ার লক্ষণ দেখা গিয়েছিলো তবুও সরকারগুলো শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। বাংলাদেশ এই ব্যাপারে অনন্য, এখানে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘতম লক ডাউন দেয়াই উত্তম বিবেচিত হয়েছে। ইউনেস্কো থেকে ৩০শে আগস্টে প্রকাশিত একটি গ্রাফ নীচে প্রদর্শিত হলো।