দুইমাস পর কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ দীর্ঘ দুইমাস পর কিছু কিছু স্থানে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এতে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি থাকায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বানভাসি মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম। বন্যা আর করোনার কারণে বন্ধ হয়ে আছে আয় উপার্জন। মানবেতর জীবন যাপন করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রত্যন্ত এলাকার সাথে উপজেলা ও জেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেক এলাকায় খাবার সঙ্কটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। এতে অনেকে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মার পানি হ্রাস পাচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনার অববাহিকার প্রধান নদীসমূহেও পানি কমছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পানি কমছে, এবার চ্যালেঞ্জ ত্রিমাত্রিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার

বরিশালে সপ্তাহে ভাদ্রের অমাবশ্যায় ভর করে সৃষ্ট লঘুচাপ ও বর্ষণের সাথে উজানের ঢলে প্লাবিত দক্ষিণাঞ্চলসহ উপক‚লভাগে প্লাবন পরিস্থিতির গতকাল কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমির পানির নিচে। প্লাবনমুক্ত হবার পরে উঠতি আউস, রোপা আমন ও আমন বীজতলা কতটুকু রক্ষা পাবে তা মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা এখনো বলতে পারছেন না। প্লাবিত পুকুর, দিঘির মাছ ভেসে গেছে। এবারের এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক ও মৎস্য চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াল রূপ নিয়েছে বন্যা - BBC News বাংলা

কুড়িগ্রামে পরপর কয়েক দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয় আমন বীজতলার। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমি কর্ষণ, বীজ সংগ্রহ ও বপনে বাড়তি অর্থ ব্যয়ে যখন কৃষক দিশেহারা তখন ঘাটতি কমাতে সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি বীজতলা, ভাসমান বীজতলা ও বাড়ির ভেতর প্লেট পদ্ধতিতে বিকল্প বীজতলা তৈরির চেষ্টা চলছে। সরকারি প্রণোদনায় এসব বীজ বিনামূল্যে পেয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, চলতি বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কৃষক। সরকারিভাবে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি টাকা।

টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ধলেশ্বরী ও বংশাই নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি থাকায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বানভাসি মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে সদর, বাসাইল, কালিহাতী ও মির্জাপুর উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। নতুন করে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদ্য লাগানো সবজি ও বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। এছাড়াও বন্যায় টাঙ্গাইলে প্রায় সাড়ে ৬শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে, টানা বৃষ্টি এবং সিআইপি বেড়িবাঁধের ভেতরে জোয়ারের পানি ঢুকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরের রোপা আমন তলিয়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছে হাজার হাজার আমন চাষি। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে লাগানো এই আমন ধানের চারা এখন হাঁটু পানির নিচে। উপজেলা কৃষি অফিস বলেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পানি সরিয়ে নেওয়া ও সুইচ গেইটের লিকেজ পয়েন্ট মেরামতে কথা বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

বাড়ছে বানভাসির সংখ্যা, ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ

ঝালকাঠিতে বন্যায় সুগন্ধা নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের ক্ষেত। এক সপ্তাহ ধরে পানি স্থায়ী হওয়ায় আমনের বীজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বীজ বপণ করা চাষিরা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যার পানি বৃদ্ধিতে ঝালকাঠি জেলায় ২১ হাজার ১৭৭ হেক্টরের ফসলের মধ্যে ১০ হাজার ৬১০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

SHARE THIS ARTICLE