নিউ কেলেডোনিয়ার জনগণ নিজেদের স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করলো

 

আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্ক, ৫ই অক্টোবরদক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফরাসী অঞ্চল নিউ ক্যালেডোনিয়ার জনগণ আবারো ফ্রান্সের সাথে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছে। গতকাল ৪ঠা  অক্টোবর অনুষ্ঠিত গণভোটে খুব অল্প ভোটের ব্যাবধানে  জনগণ স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করলো। রোববার সমগ্র অঞ্চলের ৩০৪ টি ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট গণনায় ৫৩.২৬ শতাংশ ভোটে “না” জিতেছে।

স্বাধীনতার বিষয়ে তিনটি সম্ভাব্য গণভোটের দ্বিতীয়টিতে প্রায় ৮৫.৬ শতাংশ মানুষ ভোট প্রদান করে বলে জানা গেছে। ২ লক্ষ ৭৩ হাজার জন অধ্যুষিত নিউ ক্যালিডোনিয়ায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ ভোট প্রদানে যোগ্য ছিলেন। এই ১ লক্ষ ৮০ হাজার থেকে প্রায় ৮৫.৬ শতাংশ জনগণ ভোট প্রদান করেন, ৫৩.৬ শতাংশ স্বাধীনতাকে “না” করে দিলে, গণতান্ত্রিক পন্থায় ২ লক্ষ ৭৩ হাজারের মতামত “না” হয়ে গেল। স্বাধীনতার দাবিতে তিনটি সম্ভাব্য গণভোটের দ্বিতীয় দফা গৃহীত এই ভোটে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক মতামত প্রদান করলেন। দুই বছর  আগে ২০১৮ সালে গৃহীত ১ম গণভোটে ৫৬.৭ শতাংশ ভোটদাতা স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট প্রদান করেন। দুই বছর পরের এই গণভোটে “না” এর পক্ষে ভোট কমে আসলেও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিজয়ী হতে পারল না। যদি স্থানীয় সংসদের এক তৃতীয়াংশ সদস্য ভোট প্রদান করে আবারো দাবী উত্থাপন করেন তাহলে ২০২২ সালে শেষ বারের মত গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে।  

১৮৫৩ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান ৩ এর নির্দেশে  এডমিরাল ডেসপোয়েন্টিস নিউ ক্যালেডোনিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন করেন। সম্প্রতি স্বাধীনতার জোরালো দাবী উত্থাপিত হলে ১৯৯৮ সালে  ফরাসী সরকারের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় নেতাদের মধ্যে “নৌমিয়া একোর্ড” নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে নিউ ক্যালিডোনিয়ার জনগণ অতিরিক্ত স্বায়ত্তশাসন অর্জন করেন, একই সাথে তিনটি গণভোটের অধিকার অর্জন করেন।

নিউ ক্যালিডোনিয়া

১৯৮৮ সালে একটি শান্তি চুক্তির পরে আদিবাসী “কনক” এবং “ক্যালডোচেস” নামে পরিচিত ইউরোপ থেকে আগত বসতি স্থাপনকারী বংশধরদের মধ্যে কয়েক দশকের বিরোধের অবসান  ঘটে। নৌমিয়া অ্যাকর্ড যদিও সকল নাগরিকের জন্য “সমান নিয়তি” প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে, তবুও জনসংখ্যার প্রায় ৩৯ শতাংশ আদিবাসী কনক জনগণ এখনও অধিকতর বেকারত্ব এবং দারিদ্র্যের পাশাপাশি, উচ্চশিক্ষায় সামান্যই সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।

২০১৮ অনুষ্ঠিত প্রথম গণভোটে, স্বাধীনতার পক্ষে যারা ভোট দিয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই ছিলেন “কনক”, আর যারা ফ্রান্সের সাথে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ককে সমর্থন করেছিলেন তারা ছিলেন ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত “ক্যালভোচেস” কিংবা অন্য কোনও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর।

স্বাধীনতার পক্ষে কনকদের প্রচার

স্বাধীনতাপন্থীদের জন্য এই গণভোট ছিল সার্বভৌমত্ব, ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি, বৈষম্য হ্রাস এবং দ্বীপপুঞ্জের ভবিষ্যত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর সাথে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্মান অর্জন । অনুগতরা অবশ্য মনে করেন যে, তারা ফরাসী ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। তারা মনে করেন, ফরাসি ভর্তুকির কারণে যে  উন্নত জীবনযাত্রা এবং সরকারী পরিসেবা তারা পাচ্ছেন, স্বাধীনতা তাদেরকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে দেবে। 

এই স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করে ২ লক্ষ ৭৩ হাজার মানুষ অধ্যুষিত নিউ ক্যালিডোনিয়ার জনগণ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্তের বিনিময়ে ফরাসী থেকে প্রতি বছর প্রাপ্ত ১.৫ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি প্রাপ্তি নিশ্চিত করলো আর সেই সাথে এলিসি প্রাসাদ থেকে প্রাপ্ত হলেন, ফরাসী শাসক ইমানুয়েল ম্যাক্রনের  শুষ্ক অভিনন্দন, “কৃতজ্ঞতার গভীর অনুভূতি”।। 

তথ্যসূত্রঃ স্কাই নিউজ, বি বি সি, আল জাজিরা 

SHARE THIS ARTICLE