সেলিম চৌধুরী- পটিয়া,চট্টগ্রামঃ চুলের ‘বাহারি কাট’ নম্বর প্লেটবিহীন লক্কর ঝক্কর মার্কা মোটরসাইকেলে রাস্তা দাপিয়ে বেড়ানো, আর সুযোগ বুঝে যাত্রী ও পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়া, কখনো স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা, কখনো এলাকায় জায়গা সম্পত্তি নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধে টাকার বিনিময়ে কোনো এক পক্ষে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অবস্থান নেয়া-এ সবই পটিয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়মিত কর্মকা-। রাস্তায় রাস্তায় এক সাথে দল বেধে হেঁটে প্রতিনিয়ত ঝগড়া বিবাদে লেগে থেকে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টিও তাদের রুটিন ওয়ার্ক। তাদের হাতে ইতিপূর্বে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন ছুরিকাহত হয়েছেন। মোবাইল ও টাকা পয়সাসহ ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, পটিয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের এসব অপকর্মে নীরব সমর্থন দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী। স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা- করে বেড়ালেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। সামাজিকভাবেও বিচার থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে।
এদিকে পটিয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের নানা ধরনের অপরাধ কর্মকা- ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। গত কয়েক মাসে একাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ৬ মাসে পুলিশ ৮/১০ জন কিশোর গ্যাং নেতা ও সদস্যকে আটক করেছে। পুলিশ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন
এলাকায় টহল দিচ্ছে। জানা গেছে, পটিয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড, মমতা আবাসিক, পোস্ট অফিস মোড়, বাইপাস সড়ক, ইন্দ্রপুল এলাকা, কাগজি পাড়া, সুচক্রদ-ী, করল ভাটিখাইন, উত্তর ও দক্ষিণ গোবিন্দার খিল, রেল স্টেশন, আল জামিয়া মাদ্রাসা রোড, বাহুলী রেল লাইন এলাকা, হাইদগাঁও, ধলঘাট, জঙ্গলখাইন, কুসুমপুরা, কেলিশহর, দক্ষিণ ভূর্ষি, খরনা, বাইপাস সড়ক, বৈলতলি রোড, পাইক পাড়া, হাবিবুর পাড়া, মাঝের ঘাটা, সেয়ান পাড়া, সোনা মিয়া সওঃ বাড়ি, আনজুর হাট, গৈডলার টেক, নাইখাইন, পটিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে এ কিশোর গ্যাং। পটিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ থেকে ১৫ জনের একটা ডিএক্স গ্রুপ নামে কিশোর গ্যাং রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। সমপ্রতি তাদের হামলায় ছাত্রলীগ নেতা মো. সোহেল আহত হন। এছাড়া বাইপাস সড়কে এ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন পথচারীকে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে মোবাইল ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ছিনতাই করে অপরিচিত লোকজন থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে মারধর করে ছেড়ে দেয়। এ কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিভিন্ন সময় সরকারদলীয় কতিপয় নেতাদের সাথে মিছিল-মিটিংয়েও দেখা যায়। এরা নির্দিষ্ট কোনো নেতা বা রাজনৈতিক দল সাপোর্ট না করলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কোনো সদস্য গ্রেপ্তার হলে থানায় বা কোর্টে জামিনের জন্য কিছু অসাধু নেতা ও জনপ্রতিনিধি তাদের ছাড়িয়ে নিতে লবিং ও অর্থ ব্যয় করেন। গত কয়েক মাসে পুলিশের অভিযানে এবং বিভিন্ন ভুক্তভোগীর মামলায় বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়। পরে জামিনে এসে তারা আবারও অপরাধ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক মাস আগে গ্রেপ্তার হয় ছিনতাইকারীর মূলহোতা কিশোর গ্যাং লিডার রাজু ওরফে গুলি রাজু। তার বাড়ি পটিয়া পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে তার নিজস্ব একটি গ্যাং আছে। সে একাধিক মামলার আসামি।
গত ১০ আগস্ট পটিয়া বাইপাস সড়ক থেকে গ্রেপ্তার হয় কিশোর গ্যাং ডিএক্স গ্রুপের প্রধান একাধিক মামলার আসামি আশিক ওরফে ডিএক্স আশিক। তার বাড়ি পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড সোনামিয়া সওঃ বাড়িতে। আশিক ১০-১৫ জন মিলে ডিএক্স গ্রুপ নামে একটা নিজস্ব বাহিনী গঠন করে। সবাই কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয়
ছিনতাইকারী। গত মার্চের একটি ছিনতাই মামলায় পটিয়া বাইপাস সড়ক থেকে গ্রেপ্তার হয় কিশোর গ্যাং ডিএক্স গ্রুপের দুই সদস্য মোহাম্মদ আমান ও সাখাওয়াত হোসেন। তাদের দুইজনের বাড়ি পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে। এছাড়াও তালতলা চৌকি এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় একটি গ্রুপ রয়েছে সুত্রে জানা যায়।
পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোরহান উদ্দিন বলেন, কিশোর গ্যাংসহ অপরাধী যে-ই হোক আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে তাদের তালিকা তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কঠোর ভূমিকা পালন করছে। কেউই অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই পুলিশ এখন আগের চেয়ে সক্রিয় এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।