পরকীয়া কী ও কেন হয়? হলে ইসলামে রয়েছে যে শাস্তির বিধান

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃপরকীয়া’ বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দ। পরকীয়া হলো বিবাহিত কোনো নারী বা পুরুষ নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া। সমাজে এটি নেতিবাচক হিসাবে গণ্য।

মূলতঃ পরকীয়া হলো- বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর নিজ স্বামী বা স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে পর পুরুষ বা পর নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।

সাধারণ প্রেমের চেয়ে পরকীয়ার গল্প অনেক বেশি মুখরোচক, আকর্ষণীয়। একই কারণে পরকীয়া সম্পর্কের প্রতি ঝোঁকটাও বেশি।

আজকাল খবরের কাগজ হাতে নিলেই চোখে পড়ে শীর্ষ শিরোনামে গৃহবধূ ধর্ষণের খবর। গবেষণা বলছে, গৃহবধূ ধর্ষণের পেছনে পরকীয়া সম্পর্কের যোগসূত্র অনেক। পরকীয়া সম্পর্ক থেকেই বেশির ভাগ গৃহবধূ ধর্ষিতা হচ্ছে।

পরকীয়া সম্পর্কে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, তেমনি পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। পরকীয়ার ফাঁদে আটকা পড়ে আত্মহনন করছেন অগণিত নারী-পুরুষ। বলি হচ্ছেন নিরপরাধ সন্তান, স্বামী অথবা স্ত্রী। পরকীয়ার পথে বাধা হওয়ায় নিজ সন্তানকেও নির্মমভাবে হত্যা করছে মমতাময়ী মা।

ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো নারীর পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। সূরা আহজাবের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তেআলা নারীদের পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।

শুধু নারীদেরই নয়, বরং সূরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পর ৩১ নম্বর আয়াতে নারীদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি গোপন শোভা অনাবৃত করতেও নিষেধ করা হয়েছে। অপাত্রে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে হারাম করে সবটুকু সৌন্দর্য স্বামীর জন্য নিবেদনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, স্বামী তার স্ত্রীর সৌন্দর্যে মোহিত হলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে মোহিত করার পথ অবারিত করলে, তা কেবল বিপদই ডেকে আনবে।

ইসলাম নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পুরুষ-নারী সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ’। (সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩২)

ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর’। (সূরা: নুর, আয়াত: ২)

হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কারণ, এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে’। (বায়হাকি, হা নম্বর: ৫৬৪)

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হব’। (বুখারি, হাদিস নম্বর ৭৬৫৮)

কখনো দেখা যায় দেবরের সঙ্গে জমে ওঠে পরকীয়া। ইসলাম দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার লাগামকেও টেনে ধরেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না’। এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য’। (মুসলিম, হাদিস নম্বর: ২৪৪৫)

হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো হারাম’। আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ। এসবের শাস্তি হিসেবে রজম ও দোররার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। যাতে কোনো নারী ও পুরুষ যেন এ ধরনের ভয়াবহ কর্মে লিপ্ত না হয়।

SHARE THIS ARTICLE