
সামীর রূহানী [ অভিনেতা এবং লেখক ] : আমাদের উপমহাদেশ মানে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি মানেই হচ্ছে রক্তনীতি । রক্তপাত সংঘর্ষ মৃত্যু ছাড়া যেনো ক্ষমতার পরিবর্তন সম্ভব না । বিশেষ করে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা মিয়ানমার আফগানিস্তান ইরাক সিরিয়া হচ্ছে অন্যতম নির্বাচনী সংঘাতপূর্ণ রাষ্ট্র । কারণ এদের মাঝে জনগনের সেবক হওয়ার চাইতে শাসক হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে । আর যেখানে শাসক থাকবে সেখানে শোষন অনিবার্য । এছাড়া এসব রাষ্ট্রের বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদের বিশালতার কারণে বৈদেশিক আগ্রাসী শক্তিধর রাষ্ট্র সমূহের খারাপ একটা নজর এবং অপরাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সবসময়ই থাকে । তারা কখনো চাই না যে আমরা প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হই । তাই সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে এসব রাষ্ট্রকে দাবিয়ে রাখা হয় । এবং ক্ষমতার লোভে তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া মতন নেতার অভাব নাই । ঠিক তেমনই এক সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির মাঝে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন চলছে । এখানে একদিকে বিজেপি সরকার তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের দলে ভিরিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে ! আরেকদিকে এপার বাংলায় কিছু নির্বোধ বোকারা আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখছে যে মমতা ব্যানার্জি না থাকলে তিস্তা চুক্তিটা মনে হয় হয়ে যাবে !

প্রকৃত অর্থে মমতা ব্যানার্জি যদি আবার পশ্চিমবঙ্গের মসনদে না বসতে পারেন তাহলে গুজরাট দিল্লি মুম্বাই তথা উত্তর প্রদেশের মতন বাংলাতেও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আগুনের লেলিহান শিখা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে । কারণ বিজেপি সরকার তাদের কথা অনুযায়ী কেন্দ্রের মতন করে বাংলা বিহার আসামেও এনআরসি সিএএ করে চল্লিশ লাখের উর্ধ্বে মুসলিমদের বিতাড়িত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে সেটা নিশ্চিত লিখে রাখলাম । তখন বাংলাদেশে কে একদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী অন্যদিকে ভারতীয় বিতাড়িত লাখ লাখ মুসলিমদের ঢল সামলাতে হবে । আমার কথা বিশ্বাস না হলে বিজেপির নির্বাচনী ইসতেসার আর তৃণমূল কংগ্রেসের ইসতেহারে পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন । এখনই যেভাবে নির্বাচনের দিনে কেন্দ্রের সাথে সংঘর্ষের জেরে নিরীহ নিরপরাধ মানুষ মারা যাচ্ছে তাতে করে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে বিজেপি সোনার বাংলা কে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে দেবে না তার নিশ্চয়তা নেই । আর তিস্তার পানির জন্য আমি কখনোই মমতা ব্যানার্জি কে দোষারোপ করবো না । কারণ তিনি পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী ! বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না যে বাংলাদেশের জনগণের ভালোর কথা চিন্তা করে কাজ করবেন ।

মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সমৃদ্ধির জন্য তাদের ভালো ভাবে বেচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে যা দরকার তিনি তাই করেন । তিনি কখনোই এমন কোনো কাজ হতে দেবেন না যেটা তার রাজ্যের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে । এইটা আমাদের দেশের দুর্বল পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতা যে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করতে জানি না । তার জন্য মমতা ব্যানার্জির দোষ দেয়াটা হবে নাচতে না জানলে উঠান বাকার মতন অবস্থা । বাংলার মানুষের সৌভাগ্য তারা একজন মমতা ব্যানার্জি পেয়েছেন । পরিশেষে বলতে চাই যে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য সাম্প্রদায়িক শান্তি রক্ষায় মমতা ব্যানার্জি যেমন অপরিহার্য ঠিক তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনে জয়লাভ করাটাও বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অনস্বীকার্য ।। ধন্যবাদ