আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বেলুচিস্তানের সিনেটর আনোয়ারুল হক কাকার। গতকাল বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজ এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে চূড়ান্ত দফা বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে মিডিয়ার সামনে তিনি এ ঘোষণা দেন। আজ রোববার তার শপথ নেয়ার কথা। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রিপরিষদে কাকে নেয়া হবে, তা একান্তই আনোয়ারুল হক কাকারের।
শুক্রবার রাজধানী ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শেহবাজ শরীফ। শনিবার অন্তর্বর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের নাম চূড়ান্ত করা হবে বলে তখন তিনি আস্থা প্রকাশ করেন। শুক্রবার রাতে বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজের সঙ্গে দ্বিতীয় রাউন্ডের আলোচনা করেন তিনি। এই রাতেই বিদায়ী ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের সম্মানে নৈশভোজ আয়োজন করেন শেহবাজ। উল্লেখ্য, আনোয়ারুল হক কাকার পাকিস্তানি একজন রাজনীতিক। তিনি ২০১৮ সালের মার্চ থেকে পাকিস্তান সিনেটের সদস্য।
ওই বছর সিনেট নির্বাচনে বেলুচিস্তান থেকে তিনি একটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। সিনেটর হিসেবে শপথ নেন ২০১৮ সালের ১২ই মার্চ। নতুন একটি রাজনৈতিক দল বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তার সম্পর্কে সুপরিচিত সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক হামিদ মীর বলেছেন, কাকার রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও তাকে দেখা হয় দেশের একজন বড় মাপের বুদ্ধিজীবী হিসেবে। তিনি পশতুন জাতিগোষ্ঠীর কাকার সম্প্রদায়ের জন্য বিএপি গঠন করেছেন। পিএমএলএন এবং পিপিপি সহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সিনেটরের আছে সুসম্পর্ক। রাজা রিয়াজ বলেছেন, আমরা ছোট্ট একটি প্রদেশ থেকে এবং বিতর্ক নেই এমন ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো- ক্ষুদ্র প্রদেশগুলোকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এমন ধারণা দূর করতে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো ডনকে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের নাম নিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) সঙ্গে একমত হতে পারছিলেন না রাজা রিয়াজ। তার নিজেরও প্রার্থী ছিল। এ জন্য পিএমএলএনের নাম নিয়ে দরকষাকষি চলছিল। ফলে এই পদে নাম বাছাই করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে রাজা রিয়াজকে ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে ‘বন্ধুপ্রতিম বিরোধী নেতা’ হিসেবে দেখা হয়। সূত্রগুলো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের মাধ্যমে পিএমএলএনের সুপ্রিমো নওয়াজ শরীফ চাইছিলেন অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে। যদি তা-ও না হয়, তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসীকে সুপারিশ করেছিলেন তিনি। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দলের একজন ভিন্নমতাবলম্বী রাজা রিয়াজ। তিনি ক্ষমতার অন্য করিডোর থেকে নির্দেশনা পাচ্ছিলেন। ফলে তিনি সিনেট চেয়ারম্যান সাদিক সাঞ্জরানির নাম প্রস্তাব করেন। এ জন্য শুক্রবার রিয়াজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাঞ্জরানি।
এর আগে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজকে সংবিধানের ২২৪-এ ধারার অধীনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগের সময় শনিবার শেষ হয়ে যাবে- এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চিঠি লিখেন প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে বৈঠক হয়।
প্রেসিডেন্ট জানিয়ে দেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন উপযোগী ব্যক্তিকে বেছে নিতে হবে। এ বিষয়ে তিনি এই দুই নেতার কাছে চিঠি লিখেছেন। তার এই চিঠি পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য ৮ দিন সময় আছে। তা সত্ত্বেও তিনি রাজা রিয়াজের সঙ্গে শনিবার আবার বৈঠকে বসতে পারেন বলেও জানানো হয় মিডিয়ার রিপোর্টে। অবশেষে হয়েছেও তাই। ওদিকে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো ‘সামারি’ অনুমোদন করে পাকিস্তানের ১৫তম পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। গত বুধবার এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয়। এতে বলা হয়, সংবিধানের ৫৮-১ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট। এখন সংবিধানের ২২৪-এ ধারার অধীনে একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয় তিনটি নাম প্রস্তাব করা হয় এ পদে। তারা হলেন- সাবেক কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি, পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি তাসাদ্দুক হোসেন জিলানি এবং সিন্ধুর গভর্নর কামরান তেসোরি। প্রথম দুটি নাম দিয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। শেষোক্ত নাম দিয়েছে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পকিস্তান।