আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। সাধারণত আড়ালে থেকে বাহিনী পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে তিনি ও তার বাহিনী আড়াল থেকে প্রকাশ্যে আলোচনায় আসেন। চলমান যুদ্ধে প্রিগোজিনের যোদ্ধারা রাশিয়ার হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
হঠাৎ করেই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন প্রিগোজিন। তিনি বলেছেন, তার বাহিনীকে যে আটকাতে আসবে তার বিরুদ্ধেই লড়াই করবেন। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠছে পুতিনকে হুমকি দেওয়া কে এই প্রিগোজিন?
প্রিগোজিনের বর্তমান বয়স ৬২ বছর। ১৯৮১ সালে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এক যুগের মতো সাজাও খেটেছেন। মুক্তির পর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে নব্বইর দশকে রেস্তোরাঁ খোলেন তিনি।
এসময় তিনি পুতিন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
আর এই যোগাযোগ কাজে লাগিয়েই প্রিগোজিন তার ব্যবসার বিস্তার ঘটান এবং রুশ সরকারের ঘনিষ্ঠ ওঠেন। এই ঘনিষ্ঠতাই তাকে ‘পুতিনের বাবুর্চি’ নামে পরিচিতি এনে দেয়। এরপর তিনি গণমাধ্যম ও নেট দুনিয়ার পরিচিতি লাভ করেন। মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার বিষয়েও তার নাম জড়িয়ে যায়।
প্রিগজিন জানিয়েছেন, তার বাহিনীতে ৫০ হাজার যোদ্ধা আছে। যাদের মধ্যে ৩৫ হাজার সব সময় সম্মুখ লড়াইয়ে থাকে। তার এই বাহিনীতে অনেক সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিও আছেন। যুদ্ধ শেষে বেঁচে ফিরলেই মিলবে মুক্তি এই শর্তে যাদের দলে ভেড়ানো হয়েছে।
প্রিগোজিন সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের মতাদর্শে বিশ্বাসী।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ডনবাসে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পর প্রিগোজিন গড়ে তুলেছিলেন ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। এই বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে লড়াই করে। বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে কাজ করেছে।
ওয়াগনার যোদ্ধারা সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সুদান, লিবিয়া, মোজাম্বিক, ইউক্রেন ও সিরিয়াতে রয়েছে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিএনএন।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর আলোচনায় চলে আসেন প্রিগোজিন। পূর্ব ইউক্রেনের সলেদার শহর দখলের রুশ অভিযানের নেতৃত্বে ছিল ওয়াগনার যোদ্ধারা। এটি বাখমুত থেকে কয়েক মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে।
গত কয়েক মাস ধরে প্রিগোজিন রাশিয়ার সেনাবাহিনী, সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আসছেন প্রিগোজিন। মে মাসে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন বাখমুত থেকে তার যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করা হবে। এর আগে কয়েক মাস ধরে পর্যাপ্ত গোলাবরুদ না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন তিনি।
এখন তিনি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরুর পরই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমালোচনায় রুশ সরকারের অনেকেই ক্ষুব্ধ এবং তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
সম্প্রতি ওয়াগনার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ সরাসরি নিজেদের হাতে নেওয়ার ঘোষণা দেয় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে প্রিগোজিন বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি। সে কারণেই ইউক্রেন থেকে দেশে ফিরেই বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে পশ্চিমাদের চাপের মুখে থাকা পুতিনকে আরো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন তিনি।