পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু মামলায় ৩ এসআইয়ের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

ছবি- বাঁ থেকে এসআই কামরুজ্জামান, এসআই জাহিদ এবং এসআই রাশেদুল ইসলাম

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ পুলিশ হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামের এক গাড়িচালককে পিটিয়ে হত্যার মামলায় অভিযুক্ত তিন উপ পরিদর্শকের (এসআই) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ের আরো ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ মামলার বাকি ২ আসামির ৭ বছর করে কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিন পুলিশ সদস্য ভিকটিমের পরিবারকে ১৪ দিনের মধ্যে ২ লাখ টাকা করে দিতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের এটি প্রথম রায়।

যাবজ্জীবন প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল, এএসআই কামরুজ্জামান। সাত বছর দণ্ডপ্রাপ্ত ২ জন হলেন- পুলিশের সোর্স সুমন ও রাশেদ। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট তৎকালীন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হকের আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা করেন। পরে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

নির্দেশ অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন এ মামলার তদন্ত শেষ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনকে অভিযুক্ত ও পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তকালে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে নতুন করে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অব্যাহতির সুপারিশ করা পাঁচ আসামি হলেন—পল্লবী থানার ওসি জিয়াউর রহমান, এসআই আবদুল বাতেন, রাশেদ ও শোভন কুমার সাহা ও কনস্টেবল নজরুল।

অন্যদিকে অভিযুক্ত পাঁচ আসামি হলেন—পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টু, সোর্স সুমন ও রাশেদ। এ প্রতিবেদন ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা আমলে নিয়ে পল্লবী থানার এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টু, পুলিশের সোর্স সুমন ও রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে জনির প্রতিবেশী সাদেকের ছেলের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন অনুষ্ঠানে মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় জনি ও তার ভাই পুলিশের সোর্স সুমনকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। সোর্স সুমন ওই দিন চলে গেলেও পরদিন এসে আবার আগের মতো আচরণ করতে থাকেন। তখন জনি ও তাঁর ভাই তাঁকে আবারও চলে যেতে বললে সোর্স সুমন পুলিশকে ফোন করে তাদের ধরে নিয়ে যেতে বলেন।

দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার লোকজন পুলিশকে ধাওয়া দিলে পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। জনি ও তার ভাইকে থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। জনির অবস্থা খারাপ হলে তাকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আরো খারাপ হলে জনির মা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

SHARE THIS ARTICLE