প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের “বীর উত্তম” খেতাব বাতিলের সুপারিশ

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)’র ৭২তম সভায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বি এন পির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের “বীর উত্তম” খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর তাঁর রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলো জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।এই সুপারিশ কার্য্যকরী হলে, জিয়াউর রহমানসহ এই পাঁচজন এবং তাঁদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সেনাবাহিনীর একজন মেজর হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন, ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জেড ফোর্সের ব্রিগেড কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২৭শে মার্চ ১৯৭১ চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেডিও স্টেশন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে তিনি বিপুল পরিচিতি পান। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে, জিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একজন ব্রিগেড কমান্ডার এবং পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর জিয়া সামরিক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পান এবং পরবর্তীতে সামরিক শাসন জারী করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করেন এবং ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন।

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে রাষ্ট্রীয় পদক “বীর উত্তম” খেতাব প্রদান করা হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া আত্মস্বীকৃত চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি জামুকার গতকালের সভায় উত্থাপন করা হয়। সভায় জামুকার সদস্য ও সাংসদ শাজাহান খান প্রশ্ন তোলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিল করা হলে কেন জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হবে না। তিনি তাঁর এই বক্তব্যের সপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। পরে জামুকার সভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীসহ অন্য সদস্যরা শাজাহান খানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’; নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিনের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি ছিল। জামুকার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন বিধায় তার খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

সুত্রঃ প্রথম আলো

SHARE THIS ARTICLE