
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গত শনিবার সন্ধ্যায় ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ইউরো ২০২০ ফুটবল ম্যাচে খেলতে গিয়ে ডেনমার্ক দলের মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন, বল থ্রো ইন করার সময় অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে এটা প্রতীয়মান হয় যে এরিকসেন বিপজ্জনকভাবে অসুস্থ, তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন। এমতাবস্থায় ডেনমার্ক দলের অধিনায়ক সাইমন কাজার তাকে দ্রুত রিকোভারি পজিশন আনেন এবং তার সকল সতীর্থদের চারিদিকে ঘিরে ফেলার নির্দেশ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস এবং কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সি পি আর) শুরু করেন। দ্রুত হেলথ টিমের সদস্যরা মাঠে পৌঁছে যান এবং কার্ডিয়াক রিসাসিটেশনের এক পর্য্যায়ে তার দেহে ডিফিব্রিলেটর নামক যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রিক শক দেবার পর তার হার্ট পুনরায় কাজ করতে শুরু করে। এই অবস্থায় তাকে কোপেনহেগান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই দৃশ্য সকলের নিকট আড়াল করার চেষ্টায় সতীর্থরা চারিদকে ঘিরে রেখে লাইভ ভিডিও ক্যামেরায় এই দৃশ্য ধারণ করা থেকে ব্যাহত করেন।

ডেনমার্ক ফুটবল দলের চিকিৎসক মোর্টেন বয়েস জানান, “সে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো। ডিফিব্রিলেটরের একটি শক তাকে ফিরিয়ে এনেছে। দ্রুতই তার হার্টের কার্য্যক্রম ফিরে আসে। আমরা তাকে ফিরে পেয়েছি।”
এই ঘটনা যখন ঘটছিলো স্টেডিয়াম জুড়ে ক্যামেরা ঘুরতে থাকে। ভক্তরা ও এরিকসেনের স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
এদিকে ক্রিস্টিয়ান এরিকসন গত সোমবার হাসপাতালের বিছানা থেকে তার এজেন্টের মাধ্যমে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রকাশ করেছেন এবং ভক্তদের শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে তিনি “ভাল বোধ করছেন”।
গতকাল ২৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ইনস্টাগ্রামে, হাসপাতালের বিছানা থেকে হাসতে থাকা অবস্থায় থাম্বস আপ দেওয়ার একটি ছবি দিয়ে লিখেছেন: “সবাইকে অভিবাদন! বিশ্বজুড়ে আপনাদের সকলের মিষ্টি এবং আশ্চর্যজনক শুভেচ্ছা বার্তাগুলির জন্য অনেক ধন্যবাদ। এই অনুভূতির প্রকাশ আমার এবং আমার পরিবারের কাছে অনেক অর্থবহ।” তিনি আরও লিখেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি ভাল আছেন এবং যখন হাসপাতালে “আমার ভাল লাগছে” এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি রয়েছেন।

এযাবতকালের ইতিহাসে ফুটবলে যত কার্ডিয়াক এরেস্ট
ফেব্রিস মুয়াম্বা (২৪)ঃ ২০১২ সালে এফএ কাপের ম্যাচে বোল্টন ওয়ান্ডারারস মিডফিল্ডার ফেব্রিস মুয়াম্বা পিচে জ্ঞান হারান। তার কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়েছিলো। দীর্ঘ সময় ৭৮ মিনিট ধরে তাকে সি পি আর দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো।
বাফেটিম্বি গোমিস: ফরাসি স্ট্রাইকার বেশ কয়েকবার পিচে জ্ঞান হারিয়েছেন। তার একটি মেডিকেল কন্ডিশন ছিল। কিন্তু কি মেডিকেল কন্ডিশন ছিল তা জানা যায়নি।
মার্ক-ভিভিয়েন ফো (২৮): ২০০৩ সালে কনফেডারেশন কাপের ম্যাচের সময় ক্যামেরুন মিডফিল্ডার মার্ক ভিভিয়েন ফো অচেতন হয়ে পড়েন। এই খেলোয়াড়কে সি পি আর দেয়া হলেও তাকে ফিরিয়ে আনা যায়নি। তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
আন্তোনিও পুয়ের্তা (২২): ২০০৭-৮ সালের লা লিগার প্রথম খেলায় গেটেফের বিপক্ষে জগিংয়ের সময় সেভিলা মিডফিল্ডার অচেতন হয়ে পড়েলেন এবং মেডিকেল কর্মীদের সহায়তায় তিনি জ্ঞান ফিরে পান এবং পিচ থেকে বেরিয়ে ড্রেসিংরুমে আবার জ্ঞান হারান। এই খেলোয়াড়ের কার্ডিয়াক এরেস্ট হয় এবং তাকে রিসাসিটেট করে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর মাল্টিপল অর্গান ফেইলিয়র হলে তিন দিন পর তিনি মারা যান।
চিক টিওটো (৩০): নিউক্যাসল ইউনাইটেড থেকে বের হওয়ার চার মাস পরে, চীনা ক্লাব বেইজিং এন্টারপ্রাইজের সাথে একটি প্রশিক্ষণ সেশনের সময় এই মিডফিল্ডার চিক টিওটো অজ্ঞান হয়ে পড়েন, হাসপাতালে তিনি মারা যান।
মিক্লোস ফেহের (২৪); ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে হাঙ্গেরিয়ান স্ট্রাইকার পর্তুগিজ দলের বেনফিকার হয়ে ভিটরিয়া গাইমারেসের বিপক্ষে খেলছিলেন। তিনি পিছে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবার পর দেখা যায় তার কার্ডীয়াক এরেস্ট হয়েছে। তাকে ৯০ মিনিট ধরে কার্ডিয়াক রিসাসিটেশন করা হয় এবং হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রতিটি খেলার মাঠে একটি ডিফিব্রিলেটর একমাত্র যন্ত্র যা জীবন বাঁচাতে সক্ষম। তাই সকল খেলোয়াড়কে সি পি আর এবং ডিফিব্রিলেটরের ব্যাবহার শিক্ষা দেওয়া জরুরী।
