বন্যায় লন্ডভন্ড সুনামগঞ্জ। লাখো পরিবার পানি বন্দি

তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ থেকেঃ গত ১৫ দিনের ব্যাবধানে ফের সুনামগঞ্জে বন্যায় কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছেন। টানা কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় দফা সুনামগঞ্জ জেলা শহরের নতুন নতুন এলাকাসহ জেলার ছাতক দোয়ারাবাজার, তাহিরপর বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লাসহ সবকটি উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় শনিবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত শহরের ষোলঘর পয়েন্টস্থ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘন্টায় ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এ দিকে জেলার ছাতকের সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৬৬ সেন্টিঃ ও গত ২৪ ঘন্টায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।যার কারণে সুনামগঞ্জ পৌরসভা ও ছাতক পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি পানির নীচে তলিয়ে গেছে।

এছাড়াও ছাতক, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের রাস্তাটি পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, নতুনপাড়া, বড়পাড়া সাহেববাড়ি ঘাট, ষোলঘর হাজিপাড়া, জামতলাসহ অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়ি রাস্তাঘাট পানিতে নিমর্জ্জিত হয়ে পড়ায় রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল নেই বলইে চলে। ফলে মানুষ জন চরম বিপাকে পড়ে খাদ্য সংকটে ভূগছেন।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, উপজেলা সদরের আশ-পাশ ও হাওর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বন্যায় ‘কোথাও বুক পানি, কোথাও কোমর সমান পানি হয়েছে। অধিকাংশ বর্নর্তের ঘরে চাউল নাই, গ্যাসের চুলাও ডুবে গেছে। চুলা মেরামত করার মানুষ পাচ্ছেন না অনেকেই।লাখড়ি না থাকায় বহু পরিবাার নিউ উদ্যোগে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন।

এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জে ৩শ ...

এ সব ঘরে বয়ষ্ক ও শিশুদের নিয়ে রীতি মতো বিপাকে পড়েছেন বানবাসীরা। কেউ বাচ্চাদের ব্রেড দিয়ে কোন রকম সময় পাড় করছে। চুলা বন্ধ থাকাতায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন পাড় করছেন বানবাসী মানুষ। অনেক পরিবার নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

পানি বাড়ার কারণে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের উজ্বলপুর নামক স্থানে সড়ক ভাঙ্গা সড়ক আরো বেশী ভেঙ্গে জেলা সদরের সাথে উপজেলা বাসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জামালগঞ্জে-সেলিমগঞ্জ সড়ক দিয়ে নদীর পানি উপচে পড়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। জেলার হাওর পাড়ের গ্রামীন জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায়, জেলা শহরের সাথে -জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিপুর, দিরাই- শাল্লার একমাত্র সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় সূত্রে জানা যায়, যে ভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে তাতে বন্যার আশংঙ্কা থেকে জেলার প্রতিটি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র গুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যায় কত হাজার পরিবার ঘরবন্দি হয়েছেন তাদের সঠিক পরিসংখ্যান এখনো জানা না গেলেও প্রায় লাখ মানুষ পানিবন্দি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এদিকে জেলায় রোপা আমন, সবজি ক্ষেত ও পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ও জানা যায়।

জেলা প্রশাসন জেলায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে জিআর ৪০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য বাবত ৩ লাখ, গোবাদি পশুর খাদ্য বাবত ২ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিভিন্ন উপজেলা নিবার্হী অফিসারদের হাতে পৌছে দেয়া হয়েছে।

এদিকে জামালগঞ্জ সরকারী কজেলে আশ্রয় নেয়া বন্যার্থদের ’জামালগঞ্জ বহুমুখি জনকল্যান ষ্টাষ্ট্রের” পক্ষ থেকে সাবেক উপজেলা ভাই চেয়ারম্যন মু: রশিদ আহমদ ও হাফেজ আব্দুল গফা্ফার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছেন।

বন্যায় প্লাবিত সুনামগঞ্জের ...

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী  মহিবুর রহমান জানান গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে দ্বিতীয় দফায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহেরর রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পুরোপুরি বন্যার আশংঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, সুনামগঞ্জে আরো কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। বন্যা কবলিত মানুষজনকে নিরাপদে রাখতে জেলার সবকটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং যারা বন্যা কবলিত হবেন তাৎক্ষনিক জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

SHARE THIS ARTICLE