আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ বর্তমান সরকার ও বিদ্যমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। বরং আগাম নির্বাচনের দাবিতে দলটি আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে। আর ওই দাবির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার ও বিদ্যমান নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবি।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে দলের ভবিষ্যৎ এই কর্মকৌশলের কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও দলের বিভিন্ন স্তরের ভাবনা হলো, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া সমান কথা। আর গেলে ফল সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতোই হবে বলে তারা মনে করছে। তাই সরকারের মেয়াদের তিন বছর বাকি থাকতেই ওই দুই দাবিতে তারা আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবছে। শিগগিরই দলীয় ফোরামে এই বিষয়ে আলোচনা হবে বলে দলটির একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া সমান কথা। কারণ তারা গণতন্ত্র এবং দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। তা ছাড়া বর্তমান আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সেবা করে টিকে আছে। ফলে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন বাতিল এখন সময়ের দাবি। অবশ্যই যথাসময়ে বিএনপি বিষয়টি জনগণের সামনে নিয়ে আসবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তন আনতে হলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রশ্ন সামনে চলে আসবে। কারণ বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন বহাল রেখে নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি জনগণের কাছে ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।’
গণতন্ত্র ধ্বংসের যে সংকট আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হলো বর্তমান সরকারের পদ্যতাগ এবং নির্বাচন কমিশন বাতিল করে তা আমূল সংস্কার, বলেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক নেতা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রশ্নে বিএনপির দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। তবে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন কী করছে সেটি জনগণের সামনে স্পষ্ট।’
‘তা ছাড়া এই সরকার ও কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তো আমরা দেখেছি তারা কেমন নির্বাচন করে!’ বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি আরো বলেন, ‘দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন অবশ্যই হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন এখন সময়ের দাবি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তাঁর সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে কী ঘটে সেটি বাংলাদেশ কেন, পুরো বিশ্ববাসী জেনে গেছে। ফলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন বদল হতেই হবে।’
সুধীসমাজে বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত শুক্রবার এক কর্মসূচিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তোলেন। জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির পরামর্শে নয়, আমি নিজের চিন্তা ও বুদ্ধি থেকে এমন দাবি তুলেছি। কারণ এ ছাড়া বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ নেই।’
তা ছাড়া বিএনপিকেও শেষ পর্যন্ত এমন দাবি তুলতে হবে—এমন মন্তব্য করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বিদ্যমান নির্বাচন কমিশন দিয়েও হবে না। কারণ তারা অত্যন্ত দুর্বল।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যের পরের দিন গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের নামে মধ্যবর্তী টালবাহানার প্রয়োজন নেই। সময় হলেই নির্বাচন হবে।’
সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠনে ১৩ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে ওই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছেও পাঠানো হয়। ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ কমিশনের সদস্যদের খুঁজে বের করতে পাঁচ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব ছিল ১৩ দফায়। ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলেও আজ পর্যন্ত কমিশনের ভূমিকা বিতর্কের মধ্যেই আছে।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা তুলে ধরে বিএনপি ও গণফোরামসহ কয়েকটি দলের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সংসদ ভেঙে দিয়ে ১০ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠনসহ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার প্রস্তাব ছিল ওই রূপরেখায়। তবে ওই প্রস্তাবের কোনোটিই সরকার মানেনি। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ফল প্রতিকূলে যায়। ন্যূনতম দাবি আদায় না হওয়া সত্ত্বেও সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ভুল ছিল বলে পরবর্তী সময়ে দলটির ভেতরে ও বাইরে আলোচনা হয়।
জানা যায়, নীরব ভোট বিপ্লব হবে—এমন আশাবাদের পাশাপাশি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করা ভুল ছিল বলে নানা মহলের সমালোচনার কারণেই শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে দলটির নেতাদের এখনকার মূল্যায়ন হলো, সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা দেশের জনগণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও স্পষ্ট হয়েছে। ফলে সব কিছু মিলিয়ে ওই দুই ইস্যুতে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নতুনভাবে তৈরি হয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।