বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা জমা আছে

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃচলতি অর্থবছরের শেষ সময়ে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে ১০ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। এতে ব্যাংকিং খাত আরো চাপে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা।

তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেবে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এরওপর ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়ন হবে ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। বিপরীতে ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার প্রবাহ কমে গেছে। আয় কমে যাওয়ায় ও অভাবের তাড়নায় প্রান্তিক সঞ্চয়টুকুও অনেকে ভেঙে খাচ্ছেন। এতে ব্যাংকে আমানতপ্রবাহ কমে গেছে। এরওপর ব্যাংকে থাকা স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়ী আমানত সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হলে ব্যাংকগুলো আরো চাপে পড়ে যাবে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় উন্নয়নব্যয়ের জন্য গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকঋণের পাশাপাশি সরকার তার ৬৮টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য গত জানুয়ারিতে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসাবে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি জমা আছে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে জমা আছে ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার কাছে ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে আছে ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জমা টাকার পরিমাণ ৯ হাজার ৯১৩ কোটি।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জমা টাকা আছে ৪ হাজার ৩০ কোটি। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে ও বার্ষিকব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জমা রাখার বিধান করা হয়। আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালনব্যয়ের ২৫ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করার বিধান রাখা হয়। একই সাথে বিধি মোতাবেক পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ডও রেখে দেয়ার বিধায় করা হয়। এর বাইরে যে অর্থ থাকবে সেটাই উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, সবধরনের ব্যয় নির্বাহের পরও ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ এক লাখ কোটি টাকার ওপরে রয়েছে। আইন অনুসারে সরকারের উন্নয়নব্যয় নির্বাহের জন্য এ উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের আওতায় চলতি অর্থবছরে ১০টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এমনিতেই চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকে কেউ আমানত রাখছেন না। মানুষের আয় কমে যাওয়ায় তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে অনেকেরই বিদ্যমান সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। ফলে আমানতপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়ন হবে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে।

অপর দিকে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এতে এক ধরনে চাপে থাকবে দেশের ব্যাংকিং খাত। এসব চাপ সামলিয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করা এক ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়ে গেছে। এরওপর স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানতের অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হলে ব্যাংকগুলোর তহবিল সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করা ব্যাংকগুলোর জন্য কষ্টকর হয়ে পড়বে। তথ্য সূত্র-নয়া দিগন্ত

SHARE THIS ARTICLE