বাংলাদেশে উদযাপিত হলো মর্যাদার রজনী লাইলাতুল কদর 

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে শনিবার সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে পবিত্র মর্যাদার রজনী লাইলাতুল কদর বা শবে কদর পালিত হয়।

আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’, বাংলায় কদর রজনী, এর ফারসি হলো- শবে কদর। অর্থ সম্মানিত রজনী কিংবা ভাগ্যনির্ধারণী রজনী। রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর যে কোনো একটি রাত শবে কদর। তবে এককভাবে সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে এটা আসলে এই রাত। তবে হাদিসে বিভিন্ন ইঙ্গিতে কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হয় যে শবে কদর হলো রমজানের ২৭ তারিখে। মানে ২৬তম রোজার দিন রাতে। কারণ, হিজরিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়।
ইসলামী শরিয়তে শবে কদরকে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ রাতেই হজরত মোহাম্মদ সা:-এর ওপর পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জান কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি- ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।’ (সূরা কদর)

তাই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অসীম দয়ালু মহান রাব্বুল আ’লামিন আল্লাহ্-তা’লার নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী পালন করে থাকেন। চোখের পানি ফেলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন তারা। নফল নামাজ, জিকির-আসকার, কোরআন তেলাওয়াত, তওবাহ-তাহলিল ও দ্বীনি আলোচনায় মশগুল থেকে পুরো রাত পার করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

পরম করুণাময় মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
শবে কদরের ফজিলত
পবিত্র এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। গোনাহ মাফ করানোর সুবর্ণ সুযোগ এ রাত। হাদিস শরিফে আল্লাহর রাসুল সা: বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম (নামাজ পড়বে) করবে, তার পূর্বের সব পাপ মোচন করা হবে।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৭৬০)

একইসাথে যে এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, তাকে দুর্ভাগা আখ্যা দেয়া হয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক রা: বর্ণনা করেন, ‘রমজান মাস এলে রাসূল সা: সাহাবিদের উদ্দেশে বলতেন, তোমাদের কাছে এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতপক্ষে সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৪৪)

শবে কদরে ভাগ্য লেখা হয়
ভাগ্য লেখা হয় কোন রাতে– এমন প্রশ্নের জবাবে কেউ কেউ বলে থাকেন, শবে বরাতে। তবে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন যে– ভাগ্য লেখা হয়ে শবে কদরে। তিনি বলেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়।’ (সূরা দুখান, আয়াত: ১-৪)।

পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহ’র প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন।

সারা দেশের মুসলমানরা আজ নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মধ্য দিয়ে পবিত্র এই শবে কদরের রজনী কাটান।

পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। শবে কদর উপলক্ষে আজ রোববার সরকারি ছুটি।

পবিত্র শবে কদর ১৪৪৫ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘পবিত্র শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী জামেয়া ইসলামিয়া জামে মসজিদের মুফতি মাওলানা সাকিবুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা. বশিরুল আলম।

SHARE THIS ARTICLE