
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বর্তমানে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের অন্যতম একটি সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার জনপ্রিয় মাধ্যম। হাতে এখন যার একটি স্মার্ট ফোন আছে কিংবা বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন ব্যক্তি ফেসবুক ব্যবহার করেন না তা ভাবাই যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাংলাদেশে ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ৮২ লাখ পুরুষ এবং ২২ লাখ নারী রয়েছেন। শুধু ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীর সংখ্যাই ৭৪ লাখ। এটি নির্দেশ করে, বাংলাদেশে ফেসবুকের সিংহভাগ ব্যবহারকারীই তরুণ। এ ছাড়া ৩৫ থেকে ৬০-এর মধ্যে মাত্র ৫ লাখ ২০ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন।কিন্তু এই জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম এখন সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হিসেবেও মূল্যায়িত হচ্ছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ফেসবুক ব্যবহার হওয়ার কথা তা থেকে এখন সরে এসে নেতিবাচক উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার হচ্ছে বলে সমাজবিজ্ঞানী ও মনস্তাত্ত্বিকরা বলছেন। এখন অনেকের অশান্তি, দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার অন্যমত কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক। সামাজিক এ যোগাযোগ মাধ্যমটির কারণে অনেক ঘরে অশান্তি দেখা দিয়েছে। ফেসবুকে বন্ধু হতে গিয়ে অনেকের মধ্যে গড়ে উঠছে পরকীয়ার সম্পর্ক। আর এতে ভাঙছে

অনেকের সাজানো সংসার। অনেকে সংসারের চেয়ে ফেসবুকে যাচ্চেতাই সময় দিচ্ছে। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধছে। তরুণ-তরুণীরা প্রতারণামূলক সম্পর্কে জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রেমের ফাঁদে পড়ে মেয়েদের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের মাত্রাতিরিক্ত ফেসবুক আসক্তি থেকে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। সমাজের উচ্চপদস্থ ও প্রতিষ্ঠিতদের নামে এ যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও কুৎসা রটিয়ে কখনোবা দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। এমনকি তারকা ও শিল্পীদের ভুয়া অশ্লীল ভিডিও ও ছবি তৈরি করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের মানহানি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষাকারী এ মাধ্যমটি এখন সামাজিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে এর মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের মাত্রাও তত বাড়ছে।

আর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরির (বিটিআরসি) এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত যে অভিযোগগুলো তাদের কাছে আসছে তার অধিকাংশই ফেসবুককেন্দ্রিক। আর এ সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিটিআরসি গঠিত কমিটি গত এক বছরে দেড় হাজারের মতো অভিযোগ পেয়েছে। যা তার আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।ফেসবুকের মাধ্যমে বর্তমানে যেসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বেশ কয়েক দফায় ফেসবুকে কটূক্তি করা। পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অনেকের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও তাদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে হর-হামেশা অসাধু কিছু ব্যবহারকারী ও চক্র অসৎ উদ্দেশ্যে খুলছে ভুয়া ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট। একই সঙ্গে এই ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে আপত্তিজনক ছবি ও ভাষা। থাকছে উস্কানিমূলক, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য। ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায়ও ফেসবুক ব্যবহৃত হচ্ছে। বিগত বেশ কয়েকটি

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফেসবুকে ফাঁস করার ঘটনাও ঘটেছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীদের আপত্তিকর ছবি মোবাইলে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেকেই অপমান সইতে না পেরে আত্মাহুতিও দিয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ছেলেরা মেয়ে সেজে অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কেউ কেউ আবার ফেসবুকে অন্যের বন্ধু তালিকায় থাকা মেয়ে বন্ধুদের আপত্তিকর খুদে বার্তা দিচ্ছেন কিংবা তাদের ছবির অপব্যবহার করছেন।এসব ঘটনা চলতে থাকলে অদূরভবিষ্যতে আমাদের মধ্য থেকে হয়তো হারিয়ে যাবে এই জনপ্রিয় মাধ্যমটি। তাই আসুন আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই , উস্কানিমূলক, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকি। খেয়াল রাখি আমরা যেন কারও বিরক্তির কারন হয়ে না দাড়াই , কারও জীবনের শান্তি নষ্ট না করি।