আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ এস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। ৪ঠা জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই অনুমোদন প্রদান করে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালকের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে তারা সন্ধ্যায় ভ্যাক্সিন বিশেষজ্ঞ সাথে বৈঠক করেছেন, এই ভ্যাকসিনের সমস্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছেন এবং তারপর বাংলাদেশে অক্সফোর্ডের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি জরুরি ব্যবহারের বিষয়ে একটি অনাপত্তিপত্র (এনওসি) জারি করেছেন। তিনি আরও জানান, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে এনওসি সংগ্রহ করেছে এবং এটি ব্যবহার করে তারা এখন ভারত থেকে ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
এদিকে ভ্যাক্সিন প্রাপ্তি নিয়ে বিভ্রান্তির পরিপ্রেক্ষিতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বিভ্রান্তির সংবাদ বাতিল করে দিয়ে বলেছেন, ভারত থেকে যথাসময়েই ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়ন করা হবে। চিন্তিত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
গণমাধ্যমমে ভারত থেকে দেশের বাহিরে ভ্যাক্সিন রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান ড. মোমেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এবং ভারত একই সময়ে ভ্যাকসিন পাবে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ সিদ্ধান্ত হওয়ায় এ বিষয়ে বাংলাদেশের চিন্তার কোনো কারণ নেই।” পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) সিইও যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত। এটা ভারত সরকারের কোনো নীতি না।”
এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ডের টিকা কিনতে যে চুক্তি হয়েছে, তাকে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান। তিনি বলেছেন, এখানে বেক্সিমকো কী? বেক্সিমকো একটি এজেন্ট মাত্র।
স্বাস্থ্যসেবা সচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই তিন কোটি ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে, চুক্তির সময় ভারতের হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন, এর চেয়ে বেশি জিটুজি চুক্তি আর কী হবে? ত্রিপক্ষীয় চুক্তি আমাদের হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে, এটা ঠিক আছে। সেরাম কি ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া কাজ করছে? ভারতের সরকার অনুমতি না দিলে কি এই প্রতিষ্ঠান এই চুক্তি করতে পারত? ক্রিটিক্যালি যেটা জিটুজি করে, সেটা না হলেও এটা জিটুজি।’
আর গুলশানে নিজের বাসায় বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, টিকা আনার চুক্তি জিটুজি নয়। এটি একটি বাণিজ্যিক চুক্তি। বেক্সিমকোর এমডি নাজমুল হাসান করোনার টিকার চুক্তি নিয়ে স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখানে জিটুজির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। মানে আমার জানা নেই। আপনারা যে জিটুজির কথা বলছেন, স্বাস্থ্যসচিব বলেছেন, উনি কোন ভ্যাকসিনের কথা বলছেন, আমি জানি না। এটা হতে পারে অন্য ভ্যাকসিন।’
নাজমুল হাসান আরও বলেন, ‘লজিক্যালি আমরা যে ব্যবসা করে আসছি, সেভাবে বলছি। এটা বাণিজ্যিক চুক্তি। আমরা শুধু সরকারকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘এত দিনে এটা বুঝে যাওয়া উচিত, বেক্সিমকো যদি বুকিং না দিত, তাহলে কী হতো। কোন কোম্পানি বা সরকার কোথায় বুকিং দিয়েছে, কোন ভ্যাকসিন এনেছে বা আনতে পারবে, আর যে দাম বলছি, এর ডাবল দামে যদি কেউ দিতে পারে, আমি চ্যালেঞ্জ করে দিলাম, প্রশ্নই ওঠে না।’
পরস্পরবিরোধী বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ায় এনিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য সচিবের কথায় ফাঁক ছিল এটা অবধারিত, “ক্রিটীক্যালি জিটুজি না হলেও এটা জিটূজি”। জোর করে জি টু জি বলে দিলেই জিটূজি হয়ে যায়না এই কথাটা তিনি কাকে বোঝাতে চাচ্ছেন আমাদের জানা নেই। তবে দুই সরকারের মধ্যে আলাপের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট আস্থার আস্থার কথা প্রকাশিত হলেও সংশয় কাটেনি।
সংবাদ সূত্র; প্রথম আলো, ঢাকা ট্রিবিউন