আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মঙ্গলবার (২০ জুন) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দিল্লি ছেড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফরে নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
তবে নরেন্দ্র মোদিএ সফর নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে আগ্রহ তৈরি করেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে। আগ্রহটা দেশের অর্থনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে নয়। বরং এ আগ্রহ পুরোটাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে।
এরই মধ্যে বাইডেন ও মোদির আলোচনায় স্থান পাবে বাংলাদেশের বিষয়টি এমন খবর প্রকাশ করেছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম। সেই সঙ্গে বাংলাদশের কিছু সংবাদ মাধ্যমও এই খবর প্রচার করেছে।
দুদেশের গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হচ্ছে, মোদি ও বাইডেনের বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ভিসানীতি, র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানা পোড়ন চলছে। সে বিষয়টি তাদের আলোচনায় আসতে পারে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ’ করে তুলতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, সে বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমন খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সাংবাদমাধ্যম।
ঢাকায় মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে ভারতকে সময়ের ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্বে যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট বিরাজমান। এখানে বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো কথা হবে কি না তা নিয়ে তো ভারতের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমরা কোনো প্রস্তাব পাঠাইনি বাইডেনকে বোঝানোর জন্য। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কিছু করণীয় আছে কি না সেটা তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে নিজস্ব ব্যাপার।
এদিকে সোমবার (১৯ জুন) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কী নিয়ে আলাপ করবেন, তা নিয়ে বাংলাদেশের ওকালতি করার দরকার নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকছে, গণমাধ্যমের এমন খবর প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত অত্যন্ত পরিপক্ক গণতান্ত্রিক দেশ। ভারতের মাতৃত্ব অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। তারা (মোদি-বাইডেন) যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই আলাপ করবেন। ওখানে আমার (বাংলাদেশ) ওকালতি করার প্রয়োজন নেই।
অপরদিকে বাংলাদশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে মোদি-বাইডেন বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কতটা গুরুত্ব পাবে, মোদির সফর বাংলাদেশের জন্য আসলেই কি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই সফরে ২ দেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এখানে বাংলাদেশের বিষয়টি আসার সম্ভাবনা তেমন নেই। আর যদি আসেওযুক্তরাষ্ট্র সেটি কীভাবে নেবে তা দেখার বিষয়।
বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘এটি তাদের দ্বিপাক্ষিক সফর। বাংলাদেশকে এখানে পক্ষভুক্ত করা হচ্ছে। আমাদের এখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা না থাকা এবং যথাযথ নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতি অন্যদেশকে আমাদের দেশ নিয়ে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছে। দেশে যদি নির্বাচিত সরকার থাকতো, যথাযথ নির্বাচন করতে পারতাম তাহলে এসব বিষয় কমে যেত। রাজনৈতিক নেতারা পরস্পর আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারলে এই ধরনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমাদের বিষয় নিয়ে কথা উঠতো না।’
ভিসানীতিসহ অন্যান্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে টানাপড়েন চলছে ভারতকে দিয়ে কি সেই সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে সরকার? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। আমি মনে করি কেউ না জড়ানো ভালো। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কেউ জড়ালে তা জোড়ানো উচিত। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যহত করবে এমন বিষয়ে জড়ানো উচিত না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ভারতের গণমাধ্যম দেখাতে চায় বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে আমি কখনই সেভাবে মনে করি না। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে টানতে চায়। ভারত ও চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকে বেড়েছে। এটাই আমেরিকার বড় মাথা ব্যথা। সেখানে আরেকটি দেশের রাজনীতি নিয়ে কী বা আলোচনা হবে। বাংলাদেশের যে সমস্যা তা বাংলাদেশকেই সামাল দিতে হবে। নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে কথা বলবে এটা মনে হয় না। ভারত ক্রেডিট নিতে চায় তাই এসব বলা হচ্ছে।’