বাধ্যতামূলক প্রবাসী কর্মী বীমা চালু, যেভাবে সুবিধা মিলবে!

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্ক: বিদেশগামী বা বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রবাসী কর্মী বীমা চালু করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এই বীমার দুটি পরিকল্পনা রাখা হয়েছে, এর মাঝে যেকোন একটি গ্রহণ করে যেকোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গু বা মৃত্যুবরণ করলে এই বীমার আওতায় বীমার মূল্য গ্রহণ করতে পারবেন প্রবাসী বা তাদের পরিবার।

ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড থেকে জানা গেছে, বিদেশে অবস্থানরত বা বিদেশগামী সকল প্রবাসী ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এর মাধ্যমে প্রদত্ত ২টি বীমা প্যাকেজের মধ্যে যেকোন একটি গ্রহণ করতে পারবেন। উভয় ক্ষেত্রেই প্রতি ২ বছর পর পর বীমা পত্র নবায়ন করতে হবে। যদি বীমার মেয়াদ শেষ হবার পূর্বেই প্রবাসী কর্মী নিজের বীমা নবায়ন করেন, তবে তাকে প্রিমিয়ামের উপর ২ শতাংশ ছাড় দেয়া হবে।

আর যদি প্রবাসী কর্মী বীমার মেয়াদ শেষ হবার ৩০ দিন অতিক্রান্ত হবার পরে বীমা নবায়ন করেন, তবে তাকে “ভালো স্বাস্থ্যের ঘোষণা” পত্র জমা দিয়ে বীমা নবায়ন করতে হবে।

বীমা পরিকল্পনা

১/ বীমার পরিমাণ ২ লক্ষ টাকা, মেয়াদ ২ বছর

এই পরিকল্পনাটি ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী প্রবাসী কর্মীরা গ্রহণ করতে পারবেন। এই পরিকল্পনাটিতে এককালীন প্রিমিয়াম দিতে হবে ৯৯০ টাকা, যার মধ্যে ৫০০ টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রদান করবে, এবং বাকি ৪৯০ টাকা প্রবাসী কর্মীকে প্রদান করতে হবে।

২/ বীমার পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা, মেয়াদ ২ বছর

এই পরিকল্পনাটি অনুরূপভাবে ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী প্রবাসী কর্মীরা গ্রহণ করতে পারবেন। পরিকল্পনাটিতে এককালীন প্রিমিয়াম দিতে হবে ২৪৭৫ টাকা, যার মধ্যে ৫০০ টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রদান করবে, এবং বাকি ১৯৭৫ টাকা প্রবাসী কর্মীকে প্রদান করতে হবে।

যে যে অবস্থায় বীমা সুবিধা প্রাপ্য হবে

মৃত্যু

বীমার মেয়াদকালে স্বাভাবিক মৃত্যু এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, উভয় কারনে বীমার সুবিধা প্রাপ্তির হারের শতভাগ, অর্থাৎ বীমার সম্পূর্ণ টাকা পাবেন প্রবাসীর পরিবার। বীমার মেয়াদ উত্তীর্ণের ৯০ দিন এর মধ্যে মৃত্যুবরণ ঘটলেও বীমার পুরো টাকা পাবেন প্রবাসীর পরিবার।

স্থায়ী অক্ষমতা অথবা পঙ্গুত্ব

যেকোন দুর্ঘটনায় যদি প্রবাসী কর্মী স্থায়ীভাবে কর্ম অক্ষম হয়ে পড়েন বা পঙ্গুত্ব বরণ করেন, তবে তিনি বীমা পরিকল্পনা অনুসারে বীমার পুরো টাকা অর্থাৎ ১০০% টাকা প্রাপ্ত হবেন। এই ক্ষেত্রের মাঝে রয়েছেঃ

উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললে

উভয় হাত কব্জির উপর থেকে কাটা গেলে বা খোয়া গেলে
গোড়ালির উপর থেকে উভয় পা কাটা গেলে বা খোয়া গেলে
কব্জির উপর থেকে এক হাত এবং গোড়ালির উপর থেকে এক পা কাটা গেলে
এক চোখ নষ্ট এবং কব্জির উপর থেকে একহাত কাটা গেলে
এক চোখ নষ্ট এবং গোড়ালির উপর থেকে এক পা কাটা গেলে
অংশিক স্থায়ী অক্ষমতা অথবা পঙ্গুত্ব
যেসকল আংশিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মী বীমার ৫০% শতাংশ টাকা প্রাপ্ত হবেনঃ
এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারালে
কব্জির উপর থেকে এক হাত কাটা বা খোয়া গেলে
গোড়ালির উপর থেকে এক পা সম্পূর্ণ কাটা বা খোয়া গেলে
যেসকল আংশিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মী বীমার ২৫% শতাংশ টাকা প্রাপ্ত হবেনঃ
হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি সম্পূর্ণরূপে কাটা গেলে বা খোয়া গেলে
পায়ের সকল আঙ্গুল কাটা গেলে বা খোয়া গেলে
তর্জনি আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা গেলে বা খোয়া গেলে
হাতের মধ্য আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা গেলে
যেসকল আংশিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মী বীমার ১৫% শতাংশ টাকা প্রাপ্ত হবেনঃ
উরুসন্ধি থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ কাটা গেলে বা খোয়া গেলে
এক পা কাটা গেলে বা খোয়া গেলে
মুখের নিচের চোয়াল সরে গেলে
বুড়ো আঙ্গুল সহ হাতের চার আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা গেলে
যেসকল আংশিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মী বীমার ১০% শতাংশ টাকা প্রাপ্ত হবেনঃ
অণামিকা আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা গেলে
ছোট আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা গেলে
পায়ের বড় আঙ্গুল ছাড়া যেকোন আঙ্গুল কাটা গেলে
পায়ের বড় আঙ্গুল সহ ৪টি আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা গেলে
পায়ের বড় আঙ্গুল সম্পূর্ণরূপে কাটা গেলে
উপরিউল্লেখিত যেকোন ক্ষেত্রে প্রাপ্য অর্থের জন্য আবেদন করার পরে ২ মাসের মধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সরাসরি গ্রাহক এর ব্যাংক হিসাব নম্বরে প্রেরণ করবে।

যেসকল ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মী বীমা সুবিধা প্রাপ্য হবেন নাঃ

বীমা পরিকল্পনা গ্রহণ করার ১২ মাসের মধ্যে আত্মহত্যা করলে বা নিজের ক্ষতি সাধন করলে।
HIV/AIDS বা এসম্পর্কিত রোগে মৃত্যু বা অসুস্থতা।
উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন কার্যকলাপে যুক্ত থাকলে, যেমন মোটর রেসিং, মুষ্ঠিযুদ্ধ, স্কুবা ডাইভিং, গ্লাইডিং, প্যারাশুটিং, ঘোড়দৌড়, পর্বতারোহন, ইত্যাদির কারনে মৃত্যুবরণ বা পঙ্গু হলে।
অতীত কোন অসুস্থতার কারনে মৃত্যুবরণ করলে বা অসুস্থ হলে।
মদ বা যেকোন মাদকদ্রব্যের কারনে মৃত্যুবরণ করলে না অসুস্থ হলে।
যুদ্ধ, দাঙ্গা, বা যেকোন আইন পরিপন্থি কাজে মৃত্যুবরণ করলে বা পঙ্গু হলে।

উপরে উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলোতে প্রবাসী কর্মী বীমা পরিকল্পনা গ্রহণ করার পরেও বীমার সুবিধা পাবেন না বলে  প্রবাসী ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড নিশ্চিত করেছে।

SHARE THIS ARTICLE