বাড়েই চলছে ডিজিটাল সাইবার অপরাধ

বাড়ছে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম। সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টারে (সিপিসি) দিনে জমা পড়ছে প্রায় ৮০০ অভিযোগ। প্রতারণা, হুমকি, হ্যাকিং, পর্নোগ্রাফি, শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে টাকা আদায়- এমন নানা অভিযোগ আসছে মিনিটে মিনিটে। সাইবার পুলিশ সেন্টারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারণা ও যৌন হয়রানির অভিযোগই আসছে সবচেয়ে বেশি। সাইবার ক্রাইমে সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন নারীরা। অনলাইনে প্রায়ই নানা হয়রানির মুখে পড়ছেন তারা।

ভুক্তভোগীরা সাইবার পুলিশ সেন্টারের ইমেইলে, ফেসবুকে অথবা ইমোতে ফোন করে অভিযোগগুলো দিচ্ছেন।

এরপর সাইবার পুলিশ সেন্টারের গোয়েন্দা শাখা বিষয়গুলো মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে। এ বিষয়ে সিআইডির এসপি (সাইবার ইনটেলিজেন্স) মো. রেজাউল মাসুদ জানান, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।’

সাইবার পুলিশ সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের আবির নামে এক ব্যক্তি সাইবার পুলিশ সেন্টারে অভিযোগ করেছেন যে, একটি এমএলএম কোম্পানি তার কাছে পণ্য বিক্রি করার নামে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ৩ মাস আগে ওই কোম্পানিটি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকায় একটি অফিস খোলে। তারা নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অফিসে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। বিষয়টি তদন্ত করছে সাইবার পুলিশ সেন্টারের কর্মকর্তারা।

Do's and Don'ts to prevent cyber crime - Anandabazar

রুমা (ছদ্মনাম) নামে একজন নারী অভিযোগ করেছেন যে, ‘সুমন নামে এক সহপাঠীর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্ক এক সময় শারীরিক পর্যায়ে গড়াই। সুমন তাকে বিয়ে করার নাম করে ফুসলিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তিনি তার সহপাঠীর মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। সিপিসি’র কর্মকর্তারা তার এ অভিযোগ তদন্ত করছেন।

আজিজ নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন যে, একটি ম্যারেজ মিডিয়ার ফাঁদে পড়েন তিনি। এক ব্যক্তির মাধ্যমে গুলশানে একটি ম্যারেজ মিডিয়ার অফিসে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন যে, এক সুন্দরী মহিলা বসে আছেন। তাকে কনের বড়বোন পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বলা হয় যে, তার বোন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরবেন। তাকেও অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। পাত্র তাদের পছন্দ হয়েছে। এজন্য পাত্রের কাছে তারা অস্ট্রেলিয়ায় সেটআপ করার জন্য এক লাখ টাকা চায়। আজিজ সরল বিশ্বাসে ওই টাকা দিয়েছেন।  টাকা দেয়ার পর ওই মহিলার নম্বর বন্ধ হয়ে গেছে। ম্যারেজ মিডিয়া প্রতিষ্ঠানও বলছে যে, ওই মহিলার দ্বারা তারাও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সিপিসির কর্মকর্তারা ওই বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। সিপিসি সূত্রে জানা গেছে, সিপিসিতে আর্থিক প্রতারণা। বিশেষ করে ই-কমার্স এবং অনলাইনে পণ্য বেচাকেনায় প্রতারণার অভিযোগ বেশি। এছাড়াও এমএলএম কোম্পানির নামে প্রতারণার অভিযোগ আসছে। অভিযোগ আসছে, চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার। শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও একাধিক এনজিও এবং মানবাধিকার সংগঠনের নামে একটি চক্র দেশব্যাপী যে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে তার অনেক অভিযোগ আসছে সিপিসিতে। তাছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধু সেজে বিদেশ থেকে উপহার পাঠানোর নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ চক্রটি আবার বিমানবন্দর কেন্দ্রিক কাজ করে থাকে।

সাইবার অপরাধ তদন্তে আসছে নতুন ইউনিট

সূত্র জানায়, বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগ আসছে সিপিসিতে। কোনো কোনো ভুক্তভোগী করোনার সনদ সন্দেহজনক মনে করে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও প্রভাবশালী ব্যক্তির এপিএস, সংসদ সদস্য, সচিব ও পুলিশের নাম করে একটি চক্র দেশব্যাপী যে প্রতারণা করে যাচ্ছে তার ভিকটিমগুলো সিপিসিতে অভিযোগ করছেন। বিয়ের নামেও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বহুমুখী প্রতারণা। সিপিসিতে যেসব অভিযোগ আসছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ প্রযুক্তিগত প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কিছু কিছু অভিযোগ আমলে নেয়ার মতো নয়।

SHARE THIS ARTICLE