আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ১৬ই আগস্ট রবিবার, বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ১ লক্ষের বেশী জনতার এক নজিরবিহীন সমাবেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে বিজয় অর্জনের অভিযোগে আলেকজান্ডার লুকাশেংকোর পদত্যাগ ও পুনর্নিবাচনের দাবী উচ্চারিত হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে বেলারুশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, এরই মধ্যে ১৯৯৪ সালে নূতন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রথম ক্ষমতায় আসেন লুকাশেংকো। এরপর কয়েকদফা সংবিধানের পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে, দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন লুকাশেংকো। সেই ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ২০২০ সালের ৯ আগস্ট, প্রাথমিক গণনা অনুসারে, লুকাশেঙ্কো ৬ষ্ঠ বারের জন্য বেলারুশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে বেলারুশ জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটেছে, বিদেশেও বইছে সমালোচনার ঝড়। ��নির্বাচন-পরবর্তী সমাবেশে পুলিশের বাধা দেয়ার ফলে সংঘর্ষের সময় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের আটক করা হয়েছে এবং আটককৃতদের মারাত্মকভাবে মারধর করা হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিক্ষোভ নূতন মাত্রা পায়। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনরা আটককেন্দ্রের খবর নেওয়ার দাবিতে এবং গোলাপ বহনকারী মহিলারা সাদা পোশাকে মিছিলে যোগ দেন। বড় বড় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ওয়াক আউটের মত প্রতিবাদ চলছে, কেউ কেউ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী ৩৭ বছর বয়স্ক সভেতলানা তিকানোভোস্কায়া একজন ইংরেজি শিক্ষক। তার স্বামী সার্গেই তিকানোভোস্কিকে বন্দী করা হলে স্বামীর স্থলে তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। নির্বাচনের দিন তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট কারচুপির উত্থাপনের চেষ্টা করলে তাকে ৭ ঘন্টা আটকে রাখা হয়, পরবর্তিতে তাকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়ায় চলে যেতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। আগেই তিনি তার সন্তানদের লিথুয়ানিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে একটি আবেগময় ভিডিও সম্বোধনে তিনি বলেন যে তিনি নিজের শক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং বাচ্চাদের স্বার্থে চলে যাচ্ছেন।ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘মানব জীবন সর্বাধিক মূল্যবান জিনিস’। সভেতলানা তিকানোভোসকায়া দাবি করেছেন যে তিনি ৬০ থেকে ৭০% ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। বেলারুশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুবিধার্থে সুশীল সমাজের কর্মী, সম্মানিত বেলারুশিয়ান এবং পেশাদার ব্যাক্তিদের নিয়ে একটি সমন্বয় পরিষদ গঠনের প্রস্তাব ও তিনি করেছেন।
লুকাশেংকো পুনর্নিবাচন কিংবা পদত্যাগের দাবী উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “আরেকটি নির্বাচন করতে হলে আমাকে মেরে ফেলতে হবে। কেউ আমাকে চাপ দিয়ে কিছু করানোর আশা করতে পারেনা।” তিনি অবশ্য বিরোধীদের আলোচনায় আসতে বলেন এবং সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব করেন।
লুকাশেঙ্কো বেলারুশের ইইউ প্রতিবেশীদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছেন এবং বলেছেন যে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন প্রয়োজনে “বেলারুশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, ব্যাপক সহায়তা” দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বেলারুশের রাজনৈতিক সংকটের ব্যাপারে আলোচনার জন্য একটি জরুরী ভিডিও সভা আহবান করেছেন। বুধবারের ভিডিও কনফারেন্সের ঘোষণায় ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মিশেল বলেছেন, “বেলারুশের জনগণের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং অবাধে তাদের নেতা নির্বাচন করার অধিকার রয়েছে, প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি অনুমোদিত হতে পারে না।”
ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন আসন্ন আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন: “বেলারুশের জনগণের জানা উচিত যে ইইউ দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক, জোসেপ বোরেলও সোমবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের প্রতিবেদনের “সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত” করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রবিবার রাজধানী মিনস্কে বিশাল বিক্ষোভকে “বেলারুশিয়ান আধুনিক ইতিহাসের বৃহত্তম সমাবেশ” হিসাবে বর্ণনা করে বোরেল বলেছিলেন, “নিখুঁত সংখ্যা পরিষ্কারভাবে দেখায় যে বেলারুশিয়ান জনগোষ্ঠী পরিবর্তন চায় এবং এখনই এটি চায়। ইইউ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। “
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রবীণ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছিলেন, “বুধবারের সমাবেশটি রাশিয়াকে প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে হস্তক্ষেপ না করার বার্তা দেবে”। পৃথকভাবে সোমবার, একজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা বলেন যে ব্রেক্সিট পরবর্তী উত্তরণের সময়কালের বিধি প্রয়োগ না হলে যুক্তরাজ্য বেলারুশের উপর ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞাগুলিকে নিজস্ব হিসাবে গ্রহণ করবে।এদিকে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য “সম্ভাব্য হুমকি” থাকায় এস্তোনিয়া দ্রুততম সুযোগে বেলারুশের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিরক্ষা পরিষদের আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে, ইইউ এবং ন্যাটো সদস্য এস্তোনিয়া বর্তমানে কাউন্সিলের ১০ স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে একজন।পোল্যান্ড এবং তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে এবং মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “এটি ভয়ানক। বেলারুশীয়ায় একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমরা একে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করব,”।