আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্কঃ ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টন এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিল করাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে বিএনপি নেতাকর্মীরা দ্রুত পালিয়ে যান। এ সময় ৬ জন পুলিশ ও বিএনপির বেশ ক’জন কর্মী আহত হন। পুলিশ আটক করেছে ৩০ জনকে। এ ঘটনার জন্য পুলিশ ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করেছে। ঘটনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিনা উস্কানিতে পুলিশ নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। আর মতিঝিল জোনের পুলিশ উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, বিএনপিই পুলিশের উপর হামলা চালায়।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ১১টার দিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিএনপি সম্প্রীতি সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে মিছিল করার পূর্ব ঘোষণা থাকলেও পুলিশের অনুমতি না থাকায় সমাবেশ শেষে মিছিল না করে নেতাকর্মীদের নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু কিছু নেতাকর্মী মির্জা ফখরুলের নির্দেশ না মেনে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। প্রথমে পুলিশ মিছিলকারীদের জানান, রাজপথে মিছিলের অনুমতি নেই। কিন্তু তারপরও মিছিলকারীরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় প্রথমে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটি ও পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এভাবে প্রায় ১০ মিনিট ধরে সংঘর্ষ চলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার মিছিল কর্মসূচী পালনের ঘোষণা বিএনপি দেয় বিএনপি। নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত এ মিছিল করতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু মিছিলের জন্য পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় পরে মিছিল না করে শুধু সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির সমাবেশ শেষে ছাত্রদলের একটি মিছিল বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয়নগরের দিকে রওনা দেয়। নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশ মিছিল করতে বাধা দেয়ার পর মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যানারের লাঠি ছুড়ে দেয়ার পর সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। যানবাহন চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে।
মতিঝিল জোনের পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আমরা বাধা দেইনি। তাদের মিছিলের অনুমতি ছিল না। তবু তারা মিছিল করছিল। তিনি বলেন, বিএনপিই পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তাদের ধাওয়া দেয়। পুলিশের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয় অনুমতি ছাড়াই বিএনপি একটি কর্মসূচী পালন করে। তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে ছিলাম। বিএনপির সমাবেশ থেকে দলের মহাসচিব মিছিল করবেন না বলে জানালেও তারা একটি মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে কোন ধরনের উস্কানি ছাড়াই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এ ঘটনায় ৬ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিএনপির ৩০ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর শেষে একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল করার কথা ছিল। পরে আমরা মিছিল না করার কথা বলেছি। পরে সমাবেশের পর নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যাচ্ছিল। এসময় পুলিশ অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা করেছে, লাঠিচার্জ করেছে, টিয়ারগ্যাসের শেল ছুড়েছে, গুলি করেছে। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অনেককে আটক করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।
ফখরুল বলেন, সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক স্পেসটুকুও দিচ্ছে না। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে দেয়া হয় না। দেশের মানুষকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ সরকার শান্তিতে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, এ ঘটনার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় সরকার পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে। আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর হামলা অবশ্যই সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করব। আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে চেয়েছিলাম। এর জন্য আগে আমরা চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের মিছিল করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই আমরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছি।
ফখরুল বলেন, মানুষ যখন তার ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য আন্দোলন শুরু করেছে, চাল-ডাল ও তেলের দাম বৃদ্ধিতে সোচ্চার হচ্ছে ঠিক সেই সময় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একটা দাঙ্গা বাজিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে কোন গণতান্ত্রিক স্পেস দেয় না। একটা সমাবেশ করার জায়গা দেয় না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটিয়ে যত অন্যায় তারা করেছে, যত সম্প্রীতি নষ্ট করেছে তার জবাব চাওয়া হবে। তিনি বলেন, জনগণ যখন নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই সম্প্রীতি নষ্ট করে দৃষ্টি অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সকাল থেকে পুলিশ বিএনপি কার্যালয় ঘিরে রেখেছে। পুলিশ আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। অনেকের ওপর হামলা করেছে। তিনি বলেন, সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে জনগণের সঙ্গে পুলিশের লড়াই হবে। আমরা শান্তি চাই, পুলিশের সঙ্গে সংঘাত চাই না। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছে না। তাই তিনি ধুঁকে ধুঁকে মরছেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
এদিকে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপির সম্প্রীতি মিছিলেও সরকার বাধা দেয়। আমরা সম্প্রীতির মিছিলও করতে পারি না। সেখান থেকেও গ্রেফতার করা হয়। তাই আজকে আন্দোলন করা খুব কঠিন হয়ে গেছে। কারণ, আন্দোলনে নামার আগে ভয় চাপে, যদি আমি গুলিবিদ্ধ হই কিংবা গ্রেফতার হই, তাহলে আমার পরিবারের কি হবে। তারপরও দেশে আন্দোলন হবে, নির্বাচন হবে। খালেদা জিয়া আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন।
তথ্যসূত্রঃ ডেইলি জনকণ্ঠ, ৭১ টিভি