ভঙ্গুর অর্থনী‌তি পুনরুদ্ধারে ঋণ নির্ভর বাজেট কতটা সহায়ক?

সৈয়দ আতিকুর রব – আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্ক :বিশ্ব স্বাস্হ‌্যঝুঁ‌কি ও চরম অর্থনৈ‌তিক মন্দার মত এক‌টি ক‌ঠিন সংক‌টের সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চল‌তি বছর (২০২০-২০২১) সা‌লের বাজেট ঘোষণা করে‌ছেন। সম‌য়ের প্রেক্ষাপ‌টে নিঃস‌ন্দে‌হে এটি এক‌টি অত‌্যন্ত দুরূহ কাজ। ত‌বে সংস‌দে বা‌জেট বক্তৃতার সম‌য়ে অর্থম‌ন্ত্রী এই সব ঝুঁ‌কির কথা স্বীকার কর‌লেও সামান‌্য আয়ের বৃহৎ দরিদ্র জন‌গো‌ষ্টী‌কে তুষ্ট কর‌তে তি‌নি হে‌টে‌ছেন সেই গতানুগ‌তিক প‌রিসংখা‌নের প‌থে।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে (২০২০-২১) চল‌তি বছ‌রের বা‌জেট‌ আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি দ্বিতীয় বাজেট। গত বছর অর্থমন্ত্রী হিসেবে জীবনের প্রথম বাজেট (২০১৯-২০ অর্থবছর) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার পর এক পর্যা‌য়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বাজেটের বা‌কি অংশ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। প্রথা অনুযায়ী বাজেট পেশের পরের দিন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। সে‌টিও কর‌তে হ‌য়ে‌ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

বৈ‌শ্বিক ক‌রোনা সংক‌টের কার‌ণে চল‌তি বছ‌রের বা‌জেট ঘোষণা‌কে কেন্দ্র ক‌রে কিছুটা শংকা সৃ‌ষ্টি হ‌লেও সব কিছু উ‌ড়ি‌য়ে দি‌য়ে অর্থমন্ত্রী জনাব আ.হ.ম মোস্তফা কামাল গত ১১ জুন ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন জাতীয় সংস‌দে। বাজেটের শিরোনাম করা হয়েছে “অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা”। বলা হয়েছে এটি হবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং মানুষের জীবন রক্ষার বাজেট। ক‌রোনায় তছনছ বৈ‌শ্বিক মন্দা অর্থনী‌তি‌তে বিশাল ঋণ নির্ভর এই বা‌জে‌ট অর্থনী‌তি পুনরুদ্ধা‌রে কতখা‌নি সফলতা পা‌বে সেটা এখন দেখার বিষয়।

খাত ভি‌ত্তিক পর্যা‌লোচনা : চল‌তি অর্থ বছ‌রের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, আর বাজেট ঘাটতি ধরা হ‌য়ে‌ছে জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট এবং প্রবৃদ্ধির হারের সা‌থে বাস্তবতার মিল অ‌নেকটা কল্পনা নির্ভর। বড় বাজেট দেওয়া অর্থনীতির জন্য নতুন কিছু নয়। তবে এর ভিত্তি হচ্ছে রাজস্ব আয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিক আয়ে বড় ধরনের যে ধাক্কা লেগেছে ‌তার সা‌থে ব‌্যায়ের সামঞ্জস্য না থাকায় প্রস্তা‌বিত বা‌জে‌টে আয়-ব্যায়ের যে বিস্তর ফারাক তৈরী হ‌য়ে‌ছে সেটা কতখানি পূরণ কর‌তে পার‌বেন অর্থম‌ন্ত্রী?

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট এডিপি ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৫ হাজার ১শত ৪৫ কোটি টাকা। রাজস্ব খাত থে‌কে আয় ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। (২০২০-২১) অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ খাত থেকে এক লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেবে। এরমধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি এবং অন্যান্য ঋণ নেবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য মাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়া‌বে ৫২ হাজার ৭০৯ কো‌টি টাকা। প্রস্তা‌বিত বা‌জে‌টে সরকা‌রের এই ব্যাংক ঋণ দাড়া‌বে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। চল‌তি অর্থ বছ‌রে বা‌জে‌টে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা। পর্যা‌লোচনা কর‌লে দেখা যা‌য়, অর্থমন্ত্রীর ক‌থিত অর্থনীতি পুনরুদ্ধা‌রের এই বাজেটের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ঋণ নির্ভর। এখন প্রশ্ন হ‌চ্ছে এই ঋণের সুদ ‌কিভা‌বে প‌রি‌শোধ কর‌বে সরকার? এত বড় ঋণের সুদ প‌রি‌শোধ কর‌তে সরকা‌রকে অ‌নেকটা বেসামাল হ‌তে পা‌রে সাম‌নের দিনগু‌লো‌তে ।

বাজেটের মাধ্যমে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা আরও অনেকগুণ বৃদ্ধি পা‌বে সেটা বুঝাই যা‌চ্ছে। চলতি অর্থ বছরে অর্থ সংক‌টের কার‌ণে গত ১১ মাসে সরকার ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। করোনা ভাইরাসের ক্ষয়ক্ষতির কারণে সরকার ১৯টি প্যকেজে ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণ করেছে – যা সরবরাহের দায়িত্ব মূলত ব্যাংকগুলোর। আর্থিক সংকটের কার‌ণে ব‌্যাংকগু‌লোর উপর এমনিতেই তারল্য সংকটের যে প্রভাব রয়েছে তারম‌ধ্যে বাজেটে ব্যাংক থেকে আরও ৮৪ লাখ ৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত গভীর সংকটের দিকে ধা‌বিত হ‌বে। সরকারের প্রস্তাবিত এ বাজেটে দেশের আর্থিক শৃঙ্খলা আরো ভেঙ্গে পড়বে। ব‌্যাংক লু‌টেরা আরও দীর্ঘজী‌বী হ‌বে!

জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮.২। গত বছরও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮.২। সেটা অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে এবার তা ৫.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়ে‌ছে। এটা নিয়েও নানা বিতর্ক র‌য়ে‌ছে। মন্দা অর্থনী‌তির কার‌ণে এবারের প্রবৃদ্ধি ১.৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থ বছরে তা কমে ১ শতাংশে আসতে পারে বলে বিশ্ব ব‌্যাংকের পূর্বাভাস স্বত্বেও অর্থমন্ত্রী সেটা গোপন রেখে কাগজ-কল‌মে প্রবৃদ্ধি ৮.২ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মিথ্যা আশার বাণী শুনি‌য়ে‌ছেন জা‌তি‌কে। বাস্তবে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অসম্ভব।
করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত গোটা বিশ্ব। ক‌রোনার ভয়াবহ করাল গ্রা‌সে বাংলা‌দেশ ও ক্ষত‌-বিক্ষত। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছে মানুষ। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে ঘু‌রে শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণের ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি প্রথম আলো‌তে দেওয়া বিএমএ’র মহাস‌চিব ডাঃ মো: ইহ‌তেশামুল হক চৌধূরী তাহার সাক্ষাতকা‌রে স্বাস্হ‌্য খা‌তের স্বচ্ছতা , অব‌্যবস্হাপনাও দুর্নী‌তির যে প্রকৃত চিত্র তু‌লে ধ‌রে‌ছেন সেটা থে‌কে স্বাস্হ‌্য খা‌তের বেহাল অবস্হা অনুধাব‌নে কাহা‌রো অসু‌বিধা হবার কথা নয়। বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার এ ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪১ হাজার ২৭ কেটি টাকা- যা বাজেটের ৭.২ শতাংশ। গোটা জাতি যখন অপর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণ, দূর্নী‌তি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত, তখন এ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ মোটেই যথেষ্ট নয়। করোনাভাইরাসকে সঠিকভাবে মোকাবিলা ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠার স্বার্থে স্বাস্থ্য খা‌তে বরাদ্দ বা‌জে‌টের ১০ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন ছিল। অ‌র‌ক্ষিত সীমান্ত রে‌খে প্রতিরক্ষা খা‌তে প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দের কোন মা‌নে হয় না। প্রতিরক্ষা খা‌ত থে‌কে বরাদ্দ ক‌মি‌য়ে এনে স্বাস্হ‌্য খাত‌কে আরও শ‌ক্তিশালী করা এখন সম‌য়ের অপ‌রিহার্য দাবী।

অর্থনী‌তির উত্তর‌নে দারিদ্র দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় গুরুত্ব দিলেও এক্ষেত্রে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা বাস্তবায়নের কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়নি। এ ব‌্যাপা‌রে সরকা‌রের প‌রিকল্পনা কি সেটাও প‌রিষ্কার নয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহ সকলের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার গতানুগতিক বক্তব্য ছাড়া নতুন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহ‌ণের কথা বলা হয়নি জীবন রক্ষার এই বা‌জে‌টে ।

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি ও গ্রামীণ উন্নয়‌নের অন‌্যতম স্তম্ভ। কৃষকরা প্রায় সময় তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়না। তাহারা হয়রা‌নি হন নানাভা‌বে । চল‌তি অর্থ বছ‌রের বাজেটে কৃ‌ষি খা‌তে ভর্তু‌কির প‌রিমাণ ধরা হ‌য়ে‌ছে সা‌ড়ে ৯ হাজার কো‌টি টাকা। কিন্তু উৎপাদনের উপকরণের মূল্য হ্রাস না ক‌রে বরং কোন কোন ক্ষে‌ত্রে উপকর‌ণের মূল‌্য বাড়া‌নো হ‌য়ে‌ছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত সহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি। বাংলা‌দে‌শের অর্থনীতিতে শিল্প খাত অত‌্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে এ খাত। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের সা‌থে দে‌শের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ সম্পৃক্ত র‌য়ে‌ছে। অথচ এ জাতীয় খাতকে প্রস্তাবিত বাজেটে অবমূল‌্যায়ন করা হ‌য়ে‌ছে ।

করোনা ভাইরাসের কারণে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মহীন হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। আশংকা করা হ‌চ্ছে ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পা‌রে। রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রবাসীদের মধ্যে যারা কর্মহারা হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করছেন তাদের পুনর্বাসনের ক্ষে‌ত্রে বাজেটে যথাযথ দিক নি‌র্দেশনা থাকা উ‌চিত ছিল।

প্রস্তা‌বিত বা‌জে‌টে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ৮ শত ৩৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় সুপার সাইক্লোন আমফানের কথা বললেও আমফানে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ টি জেলার রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ-কালভার্ট-বেড়ীবাধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে কোন বরাদ্দের কথা বলেননি।

করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে । দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ব‌্যা‌ক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়ে‌ছে য‌দিও ত‌বে উ‌দ্যেক্তা‌দের দাবী মে‌নে কর‌পো‌রেট ক‌রের হার কমা‌নো হ‌য়ে‌ছে একই স‌ঙ্গে । করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও বাস্তবতার নিরীখে করমুক্ত ব‌্যা‌ক্তি‌শ্রেনির আয়ের সীমা আরও বাড়া‌নো উচিত ছিল।

সরকার গত বছর যেখা‌নে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি সেখা‌নে এবার রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫০ শতাংশ। এর আগে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। স্বাভাবিক অবস্থায়ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৮-২০ শতাংশের ঘরে ছিল। করোনা ক্রা‌ন্তিকা‌লে এটা ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রস্তাব অবাস্তব এবং অ‌ন্ধকা‌রে লাউ কোঠার নামান্তর।

করোনা ভাইরাসের কারণে দে‌শের বিপুল সংখ্যক লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে, সেই সাথে দে‌শে ক্রমশ বৃ‌দ্ধি পা‌চ্ছে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা। এক জ‌রি‌পে দেখা গে‌ছে করোনা ভাইরাসের কারণে কমপ‌ক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। কাজ হারিয়েছে ৬২ শতাংশের মত মানুষ। অথচ অর্থমন্ত্রী মাত্র ১৪ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়েছে বলে তার বক্তব্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য পেশ করেছেন মহান সংস‌দে। ভ‌বিষ‌্যতে এই ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ‌্য দেওয়া থে‌কে অর্থম‌ন্ত্রির বিরত থাকা উ‌চিত স্বচ্ছতার স্বা‌র্থে। তাছাড়া এ বিপুল জনগোষ্ঠীর আয় ও কর্মসংস্থানের কোন স‌ঠিক দিক-নিদের্শনা নেই প্রস্তাবিত বাজেটে ।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব প্রতি বছর করা হ‌চ্ছে সেটা মূলত দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে। দলীয় এবং দলীয় পছন্দের লোকদের অ‌বৈধ কালো টাকার পাহাড়কে সাদা করার সুযোগ দেয়ার জন্য এই ধর‌ণের প্রস্তাব রাখা হয় বা‌জে‌টে। যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে কর ফাঁকি দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কিন্তু দূর্ভাগ‌্যজনক হ‌লেও সত‌্য যে অ‌বৈধ অর্থের বা সম্পদের উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন সংস্হা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন তোলার বিধানটি রহিত করা হ‌য়ে‌ছে । অর্থাৎ বানরের একটি কলা ৫৬ লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে কিনে যারা অবৈধ উপার্জন ক‌রে‌ছেন সেই কালো টাকা সাদা করার আইনগত অনু‌মোদন দেওয়া হ‌লো এই বা‌জে‌টের মাধ‌্যমে।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। ধর্মপ্রাণ মুসলমা‌নেরা প্রতি বছর জাকাত দেন। অথচ ধর্মীয় মূল‌্যবো‌ধের উপর অ‌র্জিত জাকাতের টাকার উপর কর আদায় করা হয় কোন যু‌ক্তি‌তে? এক‌টি মুস‌লিম প্রধান দেশ হিসে‌বে বাংলা‌দে‌শের ধর্মপ্রাণ মুসলমা‌নের জাকাতের টাকা করমুক্ত করা খুব প্রয়োজন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বাজেটে কোন বরাদ্দের কথা বলা হয়নি। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, আবাসন ও স্বাস্থ্য বীমার বিষয়ে বাজেটে প‌রিকল্পনা থাকা দরকার ‌ছিল।

করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থম‌ন্ত্রির অর্থনী‌তি উত্তর‌নের প‌রিকল্পনার পাশপা‌শি কার্যকর সুশাসন ব‌্যবস্হা, আর্থিক খাতগু‌লো‌তে সচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সকল স্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা নি‌শ্চিত না করা গে‌লে আইএমএফ মার্কা বড় বড় বা‌জেট দি‌য়ে কোন কাজ হ‌বে না। এবা‌রের বা‌জেট নি‌য়ে য‌দিও সাধারণ মানু‌ষের ম‌ধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। জি‌ডি‌পি’র প‌রিসংখান নি‌য়ে কেউ মাথা ঘামা‌বে না। কেননা, নি‌জের জীবন ও জীবিকা‌কে বাঁচা‌নো নি‌য়ে সবাই ব‌্যস্ত। ত‌বে অর্থ ব‌্যয় কিংবা বড় বা‌জেট নয় – ব‌্যয় করা অর্থ দে‌শের ত‌রে কতঠুকু কা‌জে লাগল ‌সেটা য‌দি নি‌শ্চিত করা যায় এই বা‌জে‌টের মাধ‌্যমে তাহ‌লে চরম অর্থনৈ‌তিক এই সংক‌টে কিছুটা হ‌লে সাধারণ মানুষ উপকার পা‌বে।

SHARE THIS ARTICLE