ভারতের হিমবাহ ধসের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯

আইরিশবাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ ভারতের উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের একটি হিমবাহ ধসের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে। রবিবার বিপর্যয়ের পর থেকে শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে যুক্ত হয়েছে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে ভারতের রাজ্যসভা।

মঙ্গলবার ধস সরিয়ে আরও পাঁচ জনের মরদেহ উদ্ধার হলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯-এ পৌঁছায়। এদিকে, পিটিআই সূত্র জানিয়েছে, চামোলির তপোবন সুড়ঙ্গে ৩৯ জন শ্রমিক আটকে থাকার প্রাথমিক খবর মিলেছে। এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই বিপর্যয় নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখেন ভারতের ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রসহ রাজ্যের সবকটি সংস্থা বিপর্যয়ের ওপর নজর রেখেছে। সমন্বয় রেখেই উদ্ধারকাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। উত্তরাখণ্ডকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’

এদিন সকালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিবেন্দ্র সিং রাওয়াত আকাশপথে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। খোঁজ নেন উদ্ধারকাজের। কথা বলেন উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত জওয়ানদের সঙ্গে।

এখন পর্যন্ত ১৭০ জন নিখোঁজ থাকার খবর মিলেছে। জানা গেছে, প্রায় দুই হাজার মিটার লম্বা তপোবন সুড়ঙ্গে পড়াদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা।

Image result for ভারতে হিমবাহ ধস

উত্তরাখণ্ডের ধস বিপর্যয়ের কারণ কি হিমবাহ ভেঙে পড়া? নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে। ঘটনার পর এখনও বিশেষজ্ঞরা তথ্য তালাশ করার আগেই ভিন্নমত উঠে আসছে। নতুন তথ্য বলছে, হিমবাহ ভেঙে পড়া নয়, কয়েক লাখ টন তুষার পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে আসাতেই বিপত্তি ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে এমন তথ্য। চামোলির রেনি গ্রামের কাছে পাহাড় থেকে প্রচুর পরিমাণে বরফ ঢাল বেয়ে নেমে আসে। যার জেরে ভূমিধস হয়।

দেরাদুনের ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান জিওলজি-র গবেষক সন্তোষ রাই। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, এই বন্যার অন্যতম কারণ হিমবাহ ভেঙে পড়া নয়। প্রচুর পরিমাণ বরফ গলে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে পড়েছে। আমরা বিজ্ঞানীদের দুইটি দল পাঠিয়েছি। তখন আরও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাবে।

উপগ্রহ চিত্রে আরও ধরা পড়েছে, ফেব্রুয়ারি ২ তারিখ উপত্যকায় কোনও বরফ ছিল না। কিন্তু ৫-৬ তারিখ প্রচুর তুষারপাত হয়েছে। তারপর ৭ তারিখ নতুন করে তুষারপাত হয়। যার ফলে পাহাড়ের ঢাল বেড়ে বরফ নিচে নামতে শুরু করে। নিচে নামার সময় বরফের গতি বেড়ে যায়, তারপর পানি আর মাটির সঙ্গে মিশে ধস তৈরি করে।’

দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে ইসরোর বিজ্ঞানী, সেনা এবং আইটিবিপি-র কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত। তার দাবি, ইসরোর বিজ্ঞানীরা তাকে যে ছবি দেখিয়েছেন তাতে কোনও হিমবাহ দেখা যাচ্ছিল না।

যেখান থেকে হিমবাহ ভাঙা শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে সেখানে ফাঁকা পাহাড়ই দেখা দিয়েছে। তবে পাহাড়ের মাথায় কিছু একটা লক্ষ্য করা গেছে। সেগুলো জমে থাকা তুষার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সেগুলো ত্বরিত গতিতে নেমে আসায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নানা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে নদীতে বিপুল বেগে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে ব্রিজ, বাড়িঘর ভেসে যায়। সংকীর্ণ উপত্যকায় পানি ঢুকে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী সঞ্জয় সিং রণ তুষারধসের সময়কার পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘এটা খুব দ্রুতই ঘটেছে। কাউকে সতর্ক করার মতো সময় ছিল না।’ রেনি গ্রামের একটি উঁচু এলাকায় সঞ্জয়ের পরিবারের বসবাস। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিলো আমরাও বোধহয় ভেসে যাবো।’ সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

SHARE THIS ARTICLE