আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। গতকাল ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীসহ সারা দেশে বিআরটিসির বাস ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ ছিল। গতকাল রাজধানীতে বিকল্প হিসেবে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন, সিএনজিচলিত অটোরিকশা ও রিকশা চললেও সেগুলোয় নেয়া হয়েছে বাড়তি ভাড়া। দিনভর সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ অবস্থায় পরিবহন মালিক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর যৌক্তিক হারে বাস ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ডিজেলের দাম বাড়ায় গাড়ি চালিয়ে মালিকদের কোনো লাভ হবে না। জ্বালানি তেলের দাম ওঠাতেই হিমশিম খেতে হবে। সারা দেশের বাস মালিকরা মনে করেন, অবিলম্বে বাস ভাড়া না বাড়ানো হলে গাড়ি চালানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
এদিকে গতকাল ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন লঞ্চ মালিকরা। রাজধানীর সদরঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার কার্যালয়ে সাধারণ লঞ্চ মালিকদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লঞ্চ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি।
সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মাহাবুব উদ্দিন আহমদ বলেন, লঞ্চ চলাচলের বিষয়ে কারো ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের দাবি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। স্টিলের দাম বেড়েছে ২০-২৫ শতাংশ। এসব কিছু মিলিয়ে আমরা শতভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি। ভাড়া বৃদ্ধিসহ এগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মালিকেরা লঞ্চ চালাবেন না।
তিনি আরো বলেন, শুক্রবার চিঠি দিয়ে পরিষ্কার বলে দিয়েছি, ভাড়া বাড়াতে হবে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়ে আমাকে বলেছিলেন জানাবেন। কিন্তু তিনি কোনো খবর নেননি। আমার সঙ্গে লঞ্চ মালিকরা বলছেন, তাদের তেল কেনার টাকা নেই। এ অবস্থায় আমরা কেউই লঞ্চ চালাতে পারব না।
গতকাল দুপুরে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সদরঘাট ছেড়ে যায় ৩০টি লঞ্চ। পন্টুনে ছিল আরো ৩৫টি। এগুলো হঠাৎ করে পন্টুন থেকে সরিয়ে নেয়ায় বিপাকে পড়ে যায় শত শত যাত্রী। আবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হেঁটে বা বিকল্প পরিবহনগুলোয় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সদরঘাটে পৌঁছানো লঞ্চযাত্রীদের পোহাতে হয় অতিরিক্ত ভোগান্তি।
সারা দেশে একযোগে চলমান এ ধর্মঘটে বিকল্প পরিবহন ট্রেনে যাত্রার চাপ বেড়েছে বহুগুণ। ধর্মঘটের প্রথম দিন শুক্রবার সকাল থেকেই চাপ বাড়তে থাকে। পরে গতকাল অতিরিক্ত যাত্রীচাপ সামলাতে বিভিন্ন ট্রেনে ২২টি অতিরিক্ত বগি যোগ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
তবে কভিড মহামারীর কারণে ট্রেনে এখনো দাঁড়িয়ে ভ্রমণের টিকিট বিক্রি করছে না রেল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে টিকিট ছাড়া কাউকেও উঠতে দিচ্ছে না। ফলে রেলস্টেশনগুলোয় টিকিট কাটা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রতিযোগিতা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককেই।
এদিকে বাস না চলায় দুর্ভোগে পড়েছেন কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়া ২৫ হাজারের বেশি পর্যটক। তাদের অনেকেই কক্সবাজারে পৌঁছেছিলেন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভোরে। অন্যদিকে যাদের শুক্রবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, হঠাৎ যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় তারাও দুর্ভোগে পড়েন। তবে গতকাল আটকে পড়া পর্যটকদের কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আর যারা সে সুযোগ নিতে পারেননি, তাদের জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম সিকদার বলেন, দুর্ভোগে পড়া পর্যটকদের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ রুম বুকিংয়ে ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। গত দুই দিনে বেশির ভাগ পর্যটক আকাশপথ ও বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। এখনো যেতে পারেননি এমন পর্যটকের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি হতে পারে। তবে এ সংখ্যক পর্যটক সব সময় কক্সবাজারে অবস্থান করে থাকেন।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পর্যটন শিল্পের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে থেকে হোটেল রুম বুকিং দিয়ে যারা শুক্রবার বিকালে পৌঁছার কথা ছিল, তারা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কক্সবাজারে আসতে পারেননি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
অনির্দিষ্টকালের জন্য চলমাল পরিবহন ধর্মঘট সমাধানে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজ বাসায় ট্রাক মালিক-শ্রমিক নেতাদের ডেকে আলোচনা করেন। এতে অংশ নেন পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মকবুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেবসহ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রায় ২০ জন নেতা। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। মালিক ও শ্রমিক নেতারা তাদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, মন্ত্রী আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, চাঁদা আদায় বন্ধ, ব্রিজের বাড়তি টোল আদায় বন্ধসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো মানা হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে। এসব দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় একই ইস্যুতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরুর কিছুক্ষণ আগে স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাড়াও সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।