ভেকসিন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রয়োগে প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনা মূল্যে প্রাপ্তি, টিকার ট্রায়াল, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রয়োগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছে করোনা মোকাবেলায় সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গতকাল বুধবার ওই কমিটির ১৭তম সভায় এসব বিষয় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এই সভায় বলা হয়, টিকা আন্তর্জাতিক বাজারে এসে গেলে তা কিভাবে প্রথমেই বাংলাদেশে নিয়ে আসা যায়, তার বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনই করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে কী পরিমাণে টিকার প্রয়োজন, তা সংগ্রহে কত খরচ হবে কিংবা বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে কি না—এ ব্যাপারে এখনই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এখন থেকেই যেসব প্রতিষ্ঠান বা দেশ টিকার ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত, যেন টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতি পাওয়ামাত্রই বাংলাদেশ তা পেতে পারে। টিকা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সিরিঞ্জ পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন বা ক্রয় করার প্রস্তুতি থাকতে হবে। টিকাপ্রাপ্তির পর টিকার সংরক্ষণ, বিতরণ, লোকবল, সরঞ্জামসহ সব পরিকল্পনা-ব্যবস্থাপনা এখনই ঠিক করা উচিত। টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা অগ্রাধিকার পাবে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অগ্রাধিকারে কোন জনগোষ্ঠী, সেটা নির্ধারণ করে রাখা প্রয়োজন। সাধারণত প্রথম ব্যবহারযোগ্য টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য

সংস্থার মাধ্যমেই বিতরণ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট মাথাপিছু আয়ের নিচে যেসব দেশ, সেসব দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিনা মূল্যে নির্দিষ্টসংখ্যক টিকা দিয়ে থাকে এবং কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে, যেটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই দ্রুত ব্যবস্থার মাধ্যমে টিকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা সে দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা এবং প্রয়োজনীয় অগ্রিম অর্থ প্রদান করার প্রয়োজন হতে পারে।

সভায় একই সঙ্গে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশে হওয়া উচিত। বিশ্বের যেসব দেশ যেমন—যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও রাশিয়া টিকার গবেষণায় এগিয়ে আছে, তাদের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অন্যান্য দেশও অংশগ্রহণ করছে। যেমন—অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল ব্রাজিল ও ভারতে হচ্ছে, চীনের সিনোভ্যাক টিকা ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, চিলি, ফিলিপাইন ও তুরস্কে হচ্ছে। বাংলাদেশে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হলে, প্রথমত বাংলাদেশে এর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এই টিকা সফল প্রমাণিত হলে সর্বাগ্রে পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত লাইভ স্বাস্থ্য বুলেটিন চালু রাখার পক্ষে এই সভা মত প্রদান করে। এর পাশাপাশি সপ্তাহে একবার গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকা উচিত বলে মত দেন সদস্যরা।

পাশাপাশি বলা হয়, হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা বর্তমানে হঠাৎকরে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর মানসম্মত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, অন্যথায় শুধু স্বাস্থ্যকর্মীরাই নন, তাঁদের পরিবার-পরিজনও কভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

SHARE THIS ARTICLE