
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বিজয় দিবস বাঙালি জাতির জন্য আনন্দের বিশেষ একটি দিন। আর দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব মাতৃভূমিকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা। আর এটাই বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের উত্তম আদর্শ।
মহানবী (সা.) যখন স্বীয় মাতৃভূমি মক্কা নগরী ত্যাগ করে পাড়ি জমাচ্ছিলেন ইয়াসরিবের (মদিনার) পথে, তখন তার চোখ থেকে অশ্রুর বন্যা বয়ে যাচ্ছিল এবং মনে মনে বলেছিলেন, হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাফেররা নির্যাতন করে যদি আমাকে বের করে না দিত, কখনো আমি তোমাকে ত্যাগ করতাম না। (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৩য় খণ্ড, ৪০৪ পৃষ্ঠা)
হাদিস শরিফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনা নগরীকে খুব ভালোবাসতেন। কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজি (সা.) এর চেহারাতে আনন্দের আভা ফুটে উঠত এবং তিনি বলতেন, এই উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। (সহিহ বুখারি, ২য় খণ্ড, ৫৩৯ পৃষ্ঠা/ সহিহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, ৯৯৩ পৃষ্ঠা)
সুতরাং দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা হচ্ছে ইসলামসম্মত বিশেষ সহজাত গুণ। সুতরাং দেশের বিজয় দিবস আমাদের গৌরব, আমাদের অহংকার।
এখন জানার বিষয়, বছরের চাকা ঘুরে যখন ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ আসবে, তখন সে দিনগুলোতে কোরআন ও সুন্নাহর বিধানে আমাদের করণীয় কী? বিজয় দিবস কীভাবে পালন করা কর্তব্য?
বিজয় সম্পর্কে কোরআনের ২টি সূরা আমাদের সামনে রয়েছে। একটি সূরা ফাতহ (বিজয়) এবং অপরটি সূরা নাসর (সাহায্য)।
সূরা নাসর-এ মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকদের ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রশংসার সঙ্গে তাসবিহ পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করুন।
এখানে ৩টি কর্তব্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে ১. এই দিনে বিজয়ের জন্য আল্লাহর মহত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা। ২. আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। ৩. মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আত্মনিবেদন ও ইস্তিগফার করা।
আমাদের মনে রাখতে হবে বিজয় দিবসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শ কী? যে মক্কা নগরী থেকে আল্লাহর নবী বিতাড়িত হলেন, ১০ বছর পর শত-সহস্র সাহাবায়ে কেরামের বিশাল বহর নিয়ে যখন পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি বিজয় মিছিল- শোভাযাত্রা কিছুই করেননি। গর্ব-অহংকার করেননি। বাদ্য-বাজনা বাজাননি। নবীজি (সা.) এর অবস্থা কি ছিল? আল্লাহর নবী একটি উষ্ট্রীর ওপর আরোহণাবস্থায় ছিলেন, তার চেহারা ছিল নিম্নগামী। অর্থাৎ বিনয়ের সঙ্গে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন।
এরপর সর্বপ্রথম তিনি উম্মে হানীর ঘরে প্রবেশ করেন। সেখানে ৮ রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। এই নামাজকে বলা হয় ‘বিজয়ের নামাজ’। এতে বিজয় দিবসে মহান আল্লাহর দরবারে শোকর আদায়ে এভাবে নফল নামাজ পড়া ইসলামের শিক্ষা প্রমাণিত হয়।
এরপর নবীজি (সা.) হারাম শরিফে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বয়ান প্রদান করেন। তিনি বলেন, হে মক্কার কাফের সম্প্রদায়! ১৩ বছর ধরে আমার ওপর, আমার পরিবারের ওপর, আমার সাহাবাদের ওপর নির্যাতনের যে স্টিম রোলার চালিয়েছ, এর বিপরীতে আজকে তোমাদের কি মনে হয়, তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা কঠিন অপরাধী। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, আপনি আমাদের উদার ভাই, উদার সন্তান, আমাদের সঙ্গে উদারতা, মহানুভবতা প্রদর্শন করবেন। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তখন নবী মুহাম্মাদ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আমি আজ তোমাদের সবার জন্য হজরত ইউসুফ (আ.) এর মতো সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলাম। যাও তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। তোমাদের থেকে কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। (সুনানে বাইহাকী, ৯ম খণ্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা)
এখানেই ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, অনবদ্যতা, অনন্যতা। এভাবে মহানুভবতা ও উদারতা প্রদর্শনের দ্বারাই মানুষের মন ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। তখন মক্কার কাফিররা মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করে।
এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে মক্কা বিজয় করে মহানবী (সা.) পুরো বিশ্বকে এই ম্যাসেজ দিলেন যে, আমরা শান্তির পক্ষে। আমরা খুনাখুনি, ত্রাস এবং লুণ্ঠনের বিপক্ষে।
আমাদের এভাবে ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী বিজয় দিবস পালন করা দরকার। এদিন নফল নামাজ পড়ে এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাসবিহ-তাহমিদ পাঠ করে বিজয়ের জন্য তার শোকর আদায় করা। আর কোরআন তেলাওয়াত করে এবং দান-খয়রাত করে তার সোয়াব দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, সেই শহিদ ভাইবোনদের রূহে মাগফেরাত কামনা করতে পারি। তাদের জন্য দোয়া করতে পারি। আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং শান্তিময় ও সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের শপথ নিদে পারি।