মহা দুর্ভিক্ষ দিবস স্মরণে আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের পুষ্পস্তবক অর্পন 



আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গতকাল রবিবার ছিল আয়ারল্যান্ডে ঐতিহাসিক “মহা দুর্ভিক্ষ স্মরণ দিবস”। আজ থেকে প্রায় ১৭০ বছর আগে ১৮৪৫-৪৯ সালে আয়ারল্যান্ডে মারাত্নক দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো আর সেই মহা  দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিলেন ১০ লক্ষের বেশী মানুষ আরও ১০ লক্ষ মানুষ দেশত্যাগ করেছিলেন।

Gillespie, Rowan: Famine


মহা দুর্ভিক্ষ স্মৃতি দিবসে আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস ডাবলিনের গ্লাসনেভিন কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পন অনুষ্ঠানে বলেন, “মধ্য প্রাচ্যে যে সকল ঘটনা ঘটছে তা আইরিশরা ছাড়া কেউ এত ভালভাবে বুঝতে পারবেনা।” দুর্ভিক্ষের সময় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল বা মারা গিয়েছিল তাদের সকলের স্মরণে এই অনুষ্ঠানে সামরিক সম্মান এবং একটি পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল।

প্রেসিডেন্ট হিগিনস বলেন, “দুর্ভিক্ষ ছিল আইরিশ ইতিহাসের একটি গুরুত্ত্বপূর্ন মুহুর্ত, যা কেবল আমাদের ইতিহাসকেই নয়, ভূমি, অভিবাসন ও রাজনীতির সাথে আমাদের সম্পর্ককেও বদলে দিয়েছে। তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং জোরপূর্বক অভিবাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সমসাময়িক লড়াই এবং দুর্ভিক্ষের সাথে আয়ারল্যান্ডের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাকে একই কাতারে সংযুক্ত করেন।” 

তিনি বলেন যে আয়ারল্যান্ডের তার অতীতকে মনে রাখা অবশ্য কর্তব্য এবং তার বন্ধুদের সমান্তরাল পরিস্থিতিতে আত্মসমর্পণ না করতে বলার নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন “রাষ্ট্রগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান দ্বন্দ্ব উসকে দিচ্ছে, যেখানে তাদের সুরক্ষা প্রদানের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর উপর বর্তায়। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সুরক্ষার হাতিয়ারগুলি এখন মানুষের মৌলিক আইন লঙ্ঘন করছে”।

তিনি বলেন, ইয়েমেন সহ বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে তিন কোটী মানুষ আজ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়েছে। গত ছয় বছরে সহিংসতা, অনাহার এবং প্রতিরোধযোগ্য অসুস্থতায় দুলক্ষ পঞ্চাশ হাজারের মানুষ মারা গেছেন।

Victims of the Irish Potato Famine arriving in Liverpool, Eng.; illustration in the Illustrated London News, July 6, 1850.

প্রেসিডেন্ট হিগিনস আরও বলেন, “আয়ারল্যান্ডের দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময়ে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডে একটি মানবিক সঙ্কটের সময় হিসাবে বিবেচনার পরিবর্তে কার্যকরভাবে তার দায়িত্ত্ব পরিত্যাগ করেছিলো এবং দুর্ভিক্ষ থেকে সুরক্ষার জন্য কোন কিছু না করার (লাসেজ-ফেয়ারে)  মনোভাব গ্রহণ করেছিলো, বিদেশে শস্য রফতানি ত্বরান্বিত করেছিলো, স্যুপ রান্নাঘর বন্ধ করে দিয়েছিল এবং পাঁচ লক্ষ জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের আদেশ দিয়েছিলো।” 

তিনি বলেন যে এটি একটি “আদর্শিক প্রবণতা” যা “দারিদ্র্যের মধ্যে প্রাচুর্য্যকে” আর গন অনাহার আর দুর্ভিক্ষের মধ্যে কিছু মানুষের মজাদার আহারের ব্যাবস্থা করে দেবার-এমন একটি মতাদর্শ যা সম্পত্তির অধিকারকে একটি প্রাকৃতিক আইনের মধ্যে জুড়ে দিয়ে অপ্রতিরোধ্য অনাচারের জন্ম দেয়”।

তিনি আরও বলেন “কোভিড মহামারী আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে অস্তিত্বের জন্য কেবলমাত্র উন্নত থাকার দৃষ্টান্তের প্রয়োজন নেই, বরং এটি অর্থনীতি, বাস্তুশাস্ত্র এবং নৈতিক সমাজের সুরেলা, টেকসই সংযোগের মাধ্যমে  অর্জনযোগ্য” “

দুর্ভিক্ষে মৃত আনুমানিক ২২,০০০ মানুষকে এই গ্লাসনেভিন সেমেটরিতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আয়ারল্যান্ডের পর্য্যটন, সংস্কৃতি, কলা, গেল্টাচট, ক্রীড়া ও গণমাধ্যম, মন্ত্রী ক্যাথরিন মার্টিন (টি.ডি) এবং ডিপ্লোম্যাটিক কর্পসের ডিন মান্যবর আর্চবিশপ জুড থাডিয়াস ওকলো। এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাবলিনের লর্ড মেয়র হ্যাজেল চু এবং ডাবলিন কবরস্থান ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডেভিড বুনওয়ার্থ ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মিসেস মার্টিন বলেন, “দুর্ভিক্ষ সত্যই আমাদের ইতিহাসের অন্ধকার কাল। আইরিশ জনগণ প্রচুর সাহস আর ধৈর্য্যের মধ্য দিয়ে এক বিপর্যয় মোকাবেলা করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে সফলতার সাথে বিপর্য্যয় উত্তরণ ঘটিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে উঠে আসা যায়।”

SHARE THIS ARTICLE