আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ মায়ানমারে ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতা দখলের পর ইতিমধ্যে ৬৪ দিন অতিবাহিত হয়েছে। মায়ানমারের নেতৃ অং সান সুকি সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বন্দি জীবন যাপন করছেন। সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে এবং তারা সুকির মুক্তিসহ ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের দাবী জানাচ্ছে। সামরিক বাহিনী কঠোর হস্তে আন্দোলন দমনের পথ বেছে নিয়েছে। প্রতিদিনের মতো আজও রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়েছে মানুষ।
ইতিমধ্যে রাজপথে সামরিক জান্তার গুলিতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এসিস্টেন্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার এক্টিভিস্ট গ্রুপ নামক মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, জান্তার অভিযানে নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৫৫০ অতিক্রম করেছে, এরমধ্যে ৪৬ জন শিশুও রয়েছে। এই গ্রুপ জানিয়েছে ২৭৫১ জনকে বন্দি করা হয়েছে কিংবা ইতিমধ্যে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিদিন নেমে আসছে রাস্তায়, সামরিক শাসকরা প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার করছে, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে; জনগণের দাবি হচ্ছে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হবে, বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে আর গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হবে। আন্দোলন দমনে সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতার চিত্র দৃশ্যমান কিন্তু প্রতিদিনই সামরিক জান্তা তাদের নিয়ন্ত্রণ আর দমন নিপীড়ন বৃদ্ধি করে চলেছে।
আন্দোলনকারীরা ইয়াঙ্গুনে (এপি) ব্যাতিক্রমী “নীরব প্রতিবাদের” রূপ হিসাবে ময়লা আবর্জনা ফেলে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, গত শুক্রবার গভীর রাতে ইয়াঙ্গুন বাজারে সিএনএন প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার পরে সশস্ত্র পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। মায়ানমার নিউজ জানায়, দুইজন মহিলাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করলে তারা চিৎকার করে সাহায্য প্রার্থনা করেন। বন্দুকধারী পুলিশ পথচারীদের লক্ষ্য করে কেউ এগিয়ে না আসার আদেশ দেয়। এরপর পুলিশ সেই মহিলাদের ধরে নিয়ে যায়।
এদিকে, কয়েক দশক ধরে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী “কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন” থাইল্যানড সীমান্তের গ্রামে এবং নিরস্ত্র মানুষদের বিরুদ্ধে “অবিরাম বোমাবর্ষণ ও বিমান হামলার” নিন্দা করেছে। দলটি একটি বিবৃতিতে বলেছে: “এই হামলা শিশু এবং শিক্ষার্থী সহ অনেক লোকের মৃত্যু এবং স্কুল, আবাসিক বাড়ি এবং গ্রাম ধ্বংস করেছে। এই সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড স্পষ্টতই স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ” ২৭শে মার্চ থেকে ক্যারেনের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলিতে এক ডজনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ মারা গেছে এবং প্রায় ২০,০০০ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ফ্রি বার্মা রেঞ্জার্স নামে এই অঞ্চলে কাজ করা একটি ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে।
প্রায় ৩০০০ কারেন থাইল্যান্ডে পালিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু অনেকেই অস্পষ্ট পরিস্থিতিতে ফিরে এসেছিলেন। থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা স্বেচ্ছায় ফিরে গেছে, তবে সহায়তা গোষ্ঠী বলছে তারা নিরাপদ নয় এবং অনেকেই জঙ্গলে এবং মিয়ানমারের সীমান্তের গুহায় লুকিয়ে রয়েছে। কয়েক শতাধিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কখনও কখনও সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিল। কচিন, কারেন এবং রাখাইন আরাকান আর্মি সহ বেশ কয়েকটি বড় দল এই অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে এবং বলেছে যে তারা তাদের অঞ্চলগুলিতে প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করবে।
গত শুক্রবার কমপক্ষে দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, কাল শনিবার সাগাইং অঞ্চলের বৃহত্তম শহর মনোয়া সহ আরও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে আরও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহের মধ্যে শনিবার ছিল সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সবচেয়ে মারাত্মক দিন। মান্দালয়ে, প্রতিরক্ষা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালায় এবং আন্দোলনকারীদের ব্যারিকেড ধ্বংস করার খবর পাওয়া গেছে।
মায়ানমারের সারা দেশেই বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে। জনগণ নূতন নূতন পদ্ধতি ব্যাবহার করছে। এর একটি হচ্ছে “গেরিলা রেলি”। এই পদ্ধতিতে জনগণ হঠাৎ করে বেরিয়ে এসে শ্লোগান দিয়ে, ব্যারিকেড তৈরি করছে আবার সেনাবাহিনী এসে তাদেরকমে আক্রমণ করারা আগেই তারা পালিয়ে যাচ্ছে।
“বিক্ষোভকারীরা এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিছু কিছু জায়গায় তারা খুব ভোরে বাইরে বেরিয়ে আসছে, অন্য জায়গাগুলিতে তারা মোটরবাইক নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এসে আবার হারিয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলা মোমবাতি জ্বালিয়ে আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ এগিয়ে আসছিলো কিন্তু দমন পীড়নের কারণে এখন রাজপথে জনতার সংখ্যা ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসছে।
সামরিক কর্তৃপক্ষ বিদ্রোহ দমন করতে ইতোমধ্যে মোবাইল ডাটা বন্ধ করে দিয়েছিল, শুক্রবার থেকে ইন্টারনেট সরবরাহকারীদের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমই ছিল আন্দোলনে যোগাযোগ আর বিশ্বে প্রচারের একমাত্র মাধ্যম, শেষ ভরসাস্থল। দ্রুতই সামরিক বাহিনী এই সুযোগ সংকুচিত করে দিচ্ছে। মায়ানমারের জনগণের আন্দোলন কি তাহলে ব্যার্থ হয়ে যাবে? এই প্রশ্ন এখন অনেকেরই মনে।
সংবাদ সূত্রঃ এ পি, সি এন এন, আল জাজিরা, বি বি সি