আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ এই মুহূর্তে সারাবিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। এই নির্বাচনে পরবর্তী চার বছরের জন্য কে হবেন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা, তা ঠিক করবে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। ৩ নভেম্বর ২০২০ আসবে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। খবর বিবিসি’র।
নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাবেন মার্কিনিরা। তারাই নির্ধারণ করবেন কাকে দেখতে চান পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তির চেয়ারে। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যিনি বেশি পরিচিত। যদিও গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। এদিকে বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রের এই নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, জনমত যাচাইকারী সংস্থাগুলো দেশজুড়ে জনগণের পছন্দ অপছন্দ যাচাইয়ে ততোই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এবারের নির্বাচনে কার পক্ষে পাল্লা ভারী তা জানতেই আদাজল খেয়ে নেমেছেন তারা। জানতে চেষ্টা করছেন কার পাল্লা ভারী? বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের।
সারাদেশে জনপ্রিয়তার দৌড়ে কোন প্রার্থী কতোটা এগিয়ে আছেন, সে বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জরিপ বা সমীক্ষা থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে এসব জরিপ থেকে নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন।
উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ওই নির্বাচনের আগে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে তিনি ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নির্বাচনী ব্যবস্থা ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে এ রকম হয়েছে। ফলে বেশি ভোট পেলেই নির্বাচনে জয়ী হবেন সেটা সবসময় নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ বছর জাতীয় পর্যায়ে যতো জরিপ হয়েছে তার বেশির ভাগ ফলাফলেই জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে আছেন। গত কয়েক সপ্তাহে যেসব জরিপ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে মি. বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৫০ শতাংশ এর কাছাকাছি। কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে আছেন ১০ পয়েন্টে।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত কয়েক দিনে এই দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। ৪ আগস্টের জরিপে দেখা যচ্ছে জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন যেখানে ৪৯ শতাংশ, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেছনে সমর্থন ৪৫ শতাংশ। গত নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প কার অবস্থান কোথায় এই চিত্রটা ততোটা পরিষ্কার ছিল না।
এবার দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি, কোথাও কোথাও ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ। অথচ ২০১৬ সালের জনমত জরিপগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে ব্যবধান ছিলো সামান্য কিছু পয়েন্ট।
গত নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয় থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোন প্রার্থী কত বেশি ভোট পেয়েছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোন রাজ্যে কোন প্রার্থী বেশি ভোট পেয়েছেন। সাধারণত বেশির ভাগ রাজ্যেই সবসময় একই রকমের ভোট পড়ে। কিছু কিছু রাজ্য আছে যেখানে দুজন প্রার্থীর যে কেউ বিজয়ী হতে পারেন। এসব রাজ্যেই নির্ধারিত হবে কে নির্বাচনে জয়ী আর কে পরাজিত হবেন। জয় পরাজয়ের যুদ্ধটা হয় সেখানেই আর তাই এসব রাজ্যকে বলা হয় ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটস। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এই পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি রাজ্যের হাতে থাকে কিছু ভোট। কোন রাজ্যের কতো ভোট সেটা নির্ভর করে ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর। ২০২০র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে রাজ্যগুলোকে ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট রয়েছে টেক্সাস রাজ্যের- ৩৮। ইলেকটোরাল কলেজে মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে তাকে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। তাই প্রত্যেক নির্বাচনের সময় দেখা গেছে যেসব রাজ্যের ভোট বেশি, প্রার্থীরা সেসব রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার পেছনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে থাকেন। বর্তমান জরিপের ফলাফল জো বাইডেনের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। যে কোনো সময় এই ফলাফল দ্রুত বদলে যেতে পারে। জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বাইডেন মিশিগান, পেনসালভেনিয়া এবং উইসকন্সিন রাজ্যে এগিয়ে আছেন। এই তিনটি শিল্প এলাকা। এসব রাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ১ শতাংশ এরও কম ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এখনকার জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব রাজ্যে এগিয়ে আছেন সেগুলো হচ্ছে— জর্জিয়া, আইওয়া এবং টেক্সাস। কিন্তু এখানে ব্যবধান খুব সামান্য। গত নির্বাচনেও এসব রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল আরও অনেক বেশি।
জো বাইডেন এগিয়ে আছেন যেসব রাজ্যে: অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, পেনসালভেনিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকন্সিন। জো বাইডেনের জন্যে ভালো খবর হচ্ছে এসব রাজ্যে তিনি বড় রকমের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে এসব রাজ্যের অধিকাংশগুলোতেই ব্যপক ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এসব রাজ্যে এখন এগিয়ে গেছেন জো বাইডেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে আইওয়া, ওহাইও এবং টেক্সাসে তিনি ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এখন জো বাইডেনের সঙ্গে তার অবস্থান প্রায় সমান সমান।
এসব পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন গত জুলাই মাসে তার নির্বাচনী প্রচারণার দলের ম্যানেজার বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া ট্রাম্প এসব জনমত জরিপকে প্রায়শই ‘ভুয়া’ বলে উল্লেখ করে থাকেন।