আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের বিকাশ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটির পথচলা শুরু। তবে সে মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে পার্কটির দায়িত্বে থাকা কোম্পানি টেকসিটি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে পার্কটিতে চাকরি মেলা, বিয়ে-বৌভাতের মতো অনুষ্ঠান আয়োজনে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নিজেদের লোকসান ঠেকাতে এবার যশোর সফটওয়্যার পার্কে চালু হলো ‘হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট’।
গতকাল রাতে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পার্কের তিন তারকা মানের ডরমিটরিটিতে হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের যাত্রা শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের দাবি ‘আইসিটি শিল্পের বিকাশ ও সম্প্রসারণ না ঘটিয়ে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি পার্কটির পরিবেশে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ফলে অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ব্যবসা গুটিয়ে পার্ক ছেড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন করেন। ১৫ বছরের চুক্তির মাধ্যমে সরকার টেকসিটি নামে একটি কোম্পানিকে পার্কটি দেখভালের দায়িত্ব দেয়। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এ পার্ক স্থাপিত হলেও তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। একটি মাত্র বিদেশী কোম্পানি এ পার্কে জায়গা বরাদ্দ নিলেও গত বছর তারাও ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রথম দিকে চুক্তিবদ্ধ ৩৩টির মধ্যে ২২টি কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়ে পার্ক ছেড়ে চলে গেছে। অবশিষ্ট যে ১১টি কোম্পানি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই রুগ্ণ অবস্থায় টিকে রয়েছে। পার্কটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের লোকসান হচ্ছে। এ কারণে পার্কে এখন তারা বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করছে, যাতে আয় বাড়ে। সর্বশেষ গতকাল রাতে পার্কটির তিন তারকা মানের ডরমিটরিটি খান প্রোপার্টিজের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য চুক্তিতে হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের যাত্রা করেছে। এর ফলে পার্কটির পরিবেশ আরো নষ্ট হবে বলে মত বিনিয়োগকারীদের।
খান প্রোপার্টিজের প্রজেক্ট ম্যানেজার আল বাকির বলেন, ‘পার্কটিতে সুন্দর একটি ভবন থাকলেও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এখানে ছিল না। একই সঙ্গে ম্যানেজমেন্টটাও। ফলে এর দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। হাই-টেক পার্কে ডরমিটরিটি এখন আমরা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট করছি। পার্কের ভেতরে বিভিন্ন স্থান ও পুকুর সংস্কার করে রিসোর্ট করা হচ্ছে। আপাতত ১০ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সফটওয়্যার, অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করার জন্য এনিমেক্স অ্যানিমিশন স্টুডিও নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান পার্কটির ১৩ তলায় ৭৫০ স্কয়ার ফুট জায়গা নেয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে পড়ে পার্কটির জায়গা ছেড়ে দেয়।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মেহেদী হাসান শোভন বলেন, ‘পার্কটির প্রধান সমস্যা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলের। অযৌক্তিক বিল তারা চাপিয়ে দিত। পার্কটিতে যে বাড়া ও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কাজ করছি; তার চেয়ে অনেক কম ভাড়া-বিলে শহরের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভালোভাবে কাজ করা যায়।’
পার্কটির ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল বলেন, ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে তুলনামূলক ভাড়া বেশি।’
যশোর আইটি পার্কটি খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে দাবি করে টেকসিটির নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল ৫ বছরের মধ্যে ৯০ শতাংশ পূরণ করা। এখন ৯২ বা ৯৩ শতাংশ উদ্যোক্তা রয়েছেন। অনেকে চলে গেছেন আবার অনেকে এসেছেন। সব মিলিয়ে ১০-১৫ হাজার স্কয়ার ফুট খালি রয়েছে। সেগুলো দ্রুত পূরণ হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। সরকারের সঙ্গে চুক্তিই ছিল ইনভেস্টরদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাইরের লোকের কাছে ভাড়া দেয়া যাবে। যারা চলে গেছেন তারা পরিবেশের কারণে চলে যাননি। যারা বর্তমানে রয়েছেন তারা রমরমা ব্যবসা করছেন। এখানে শুধু সফটওয়্যার না, যেকোনো আইটি কোম্পানি ব্যবসা করতে পারবে। দেশী-বিদেশী মানুষের ব্যবহার উপযোগী আর যশোরবাসী যেন ভালো ধরনের ইভেন্ট করতে পারে এজন্যই মূলত পার্কটির মধ্যে হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট করা হচ্ছে।’