যাদের আশ্রয় আবেদন গৃহিত হয়নি, তাদের ফেরাতে কঠোর ইউরোপ

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ কারো আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরো কঠোর হতে যাচ্ছে ইউরোপ৷ এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে একমত হয়েছেন ইইউ নেতারা৷ এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গেও ইউরোপের আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন শুধু কূটনৈতিক চাপ দিয়ে এক্ষেত্রে সফল হওয়া যাবে না৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নে কারো বসবাসের অনুমতি না থাকলে সেই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে নিতে তার দেশের উপর চাপ বাড়াবে ইইউ৷ গত সপ্তাহে এক বৈঠক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল৷ এজন্য ইইউর সংশ্লিষ্ট নীতিকাঠামোর পাশাপাশি দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়ন, বাণিজ্য ও ভিসা সংক্রান্ত বিদ্যমান সম্পর্ককেও শর্ত হিসেবে ব্যবহার করা হবে৷ এই বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে চুক্তি আছে তা নবায়নের পাশাপাশি নতুন চুক্তির উদ্যোগ নিবে ইইউ৷ খবর ইনফো মাইগ্রেন্টসের

যাদের ফেরত পাঠানো হয়
বর্তমানে ২০ টিরও বেশি দেশের সঙ্গে ইইউর এ সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে৷ এরমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, টিউনিসিয়া, আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, গিনি, আইভোরি কোস্ট, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়াও৷ এসব দেশের কোন নাগরিকের ইউরোপে থাকার বৈধতা না থাকলে তাদের ফেরত পাঠায় ইইউ৷ বিশেষ করে কারো আশ্রয় আবেদন চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ৷ স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়াদের ক্ষেত্রে খরচ বহনসহ নিজ দেশে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতে দেয়া হয় নানা ধরনের সহায়তা৷

নিজ দেশের নাগরিকদের ফেরত নিতে সহযোগিতার বিনিময়ে দেশগুলোকে ইইউর পক্ষ থেকে ভিসা, বাণিজ্য, শিক্ষা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত কিছু প্রণোদনা দেয় হয়৷ বিপরীত কারণে এসব ক্ষেত্রে কোনো কোনো দেশের উপর কড়াকড়ি আরোপের বিধানও রয়েছে৷

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত কঠোরতা অবলম্বন করছে বলে বিভিন্ন দেশের অভিযোগ রয়েছে৷ এ নিয়ে গত বছর মরক্কোর সঙ্গে ইইউর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়৷ মরক্কোসহ আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীদের একটি দলকে ফেরত নিতে ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল দেশটি৷ যদিও মরক্কোর সঙ্গে তাদের এই সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে৷ ঐ বছরের শেষে দেশটি সফরে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন কমিশনার জানিয়েছিলেন, ২০২০ সালে ক্যানারি দ্বীপে আসা ১৯ হাজার অভিবাসীর অর্ধেকই মরক্কোর নাগরিক৷

ফেরত পাঠানোর হার কম
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপে বসবাসের অনুমতি না থাকাদের ফেরত পাঠানোর হার বেশ কম৷ ইউরোপীয় কমিশন এমন অভিবাসীদের অন্তত ৭০ শতাংশকে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ২০১৮ সালে৷ সেখানে ২০১৯ সালে মাত্র ২৯ শতাংশকে তারা ফেরত পাঠাতে পেরেছিল৷

চলতি বছরের শুরুতে ইউরোপীয়ান কোর্ট অব অডিটর্সের এক তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে ২০২০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আবেদন বাতিল হওয়াদের প্রতি পাঁচজনের মাত্র একজন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে নিজ দেশে ফেরত গেছেন৷

ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া আরো সুচারু করতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইইউ৷ তবে এ নিয়ে সমালোচনাও আছে৷ বিশেষ করে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশগুলোর উন্নয়ন সহায়তার বিষয়টিকে যুক্ত করার পক্ষপাতী নন কেউ কেউ৷

ফেরত পাঠানো স্থায়ী সমাধান নয়
আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া অনেক বাংলাদেশিকেও বিভিন্ন সময়ে ফেরত পাঠিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো৷ এখনও অনেক অভিবাসী ফেরত আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন৷ জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া অক্টোবরে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৮১৬ জনের জন্য ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করতে বাংলাদেশের প্রতি জার্মানি অনুরোধ জানিয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে অনেকে ইতোমধ্যে জার্মানি ছেড়ে চলে গেছেন৷’

ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বসবাসের অনুমতি নেই এমন বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ও ইইউ এর মধ্যে ২০১৭ সালে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) স্বাক্ষরিত হয়৷ এই চুক্তি অনুসরণ না করলে বাংলাদেশের উপর ইইউ ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে বলেও জানান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া৷

বাংলাদেশের ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘ইউরোপে অনিয়মিত বাংলাদেশি কর্মী যারা রয়েছেন তাদেরকে ফেরত পাঠাতে গত ১০ বছর ধরে আলোচনা চলছে৷ বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর উপরে এই বিষযে কূটনৈতিক চাপ আছে৷ ২০১৭ সালে এই ধরনের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল যে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে ভিসা বন্ধ করে দিবে৷’

তার মতে, এই বিষয়ে বাংলাদেশ এরিমধ্যে তাদের অবস্থান পরিস্কার করেছে৷ কিন্তু তিনি মনে করেন অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়৷ এর সঙ্গে জড়িত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সংকটও৷ তার মতে, কত লোককে ফেরত পাঠানো যাবে তার চেয়েও জরুরি অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করা৷ এজন্য আন্তর্জাতিক মানবপাচার বন্ধের পাশাপাশি অনিয়মিতভাবে আসা অভিবাসীদের সস্তা শ্রম ব্যবহার বন্ধে ইউরোপের দেশগুলোরও একমত হওয়া প্রয়োজন৷ সেইসঙ্গে বৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার প্রক্রিয়াগুলোর বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে৷ স্বেচ্ছায় ফিরে আসাদের যেসব সুবিধা দেয়া হচ্ছে সেগুলোও জানাতে হবে৷

বর্তমানে ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়াদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ব্র্যাক৷ এর মধ্যে গত চার বছরে ‘প্রত্যাশা’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার জন ফিরে এসেছেন বলে জানান শরিফুল হাসান৷

SHARE THIS ARTICLE