আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্ক :কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেরিল্যান্ডের ওয়াল্টার রীড হাসপাতালে আই সি উ তে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে সমর্থকদের তাক লাগিয়ে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মুখোশ পরিধান করে একটি গাড়ি বহর নিয়ে হাসপাতাল থেকে স্বল্প সময়ের জন্য বেরিয়ে আসেন। বের হয়ে আসার পূর্বক্ষনে টুইটারে তিনি বেরিয়ে আসার ব্যাপারে সমর্থকদের অবগত করেন। গাড়ি থেকে হাত নাড়িয়ে তিনি জনগনকে উদ্দীপ্ত করেন। (বি বি সি)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করতে দেখা গেছে। জানা গিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অক্সিজেন দিতে হয়েছে এবং তার চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যাবহার করা হচ্ছে, তবে তাকে আগামীকাল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। (বি বি সি, আল জাজিরা)
আমরা জানি অক্সিজেনের প্রয়োজন হওয়া এবং স্টেরয়েড ব্যাবহার করা হয় তখনি যখন তার নিঃশ্বাসের সমস্যা চলছে। এমতাবস্থায় তড়িঘড়ি করে কেন হাসপাতাল ত্যাগের কথা বলা হচ্ছে সেটা নিয়ে সংশয় আছে। আশা করা যায়, রাজনীতি থেকে জীবনকে অধিক মূল্যায়ন করা হবে, একজন প্রেসিডেন্টকে প্রয়োজনীয় সময় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদানের পর ঝুকিমুক্ত সুস্থ হওয়ার পরই তাকে হোয়াইট হাউসে পাঠানো হবে এটা সকলেই কামনা করেন।
তবে, তার অসুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন চারিদিকে প্রকাশিত হয়েছে। একটি গুরুত্ত্বপূর্ন প্রশ্ন হচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেরে উঠতে সময় নেন – তাহলে ৩রা নভেম্বর ২০২০ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের কি হবে? নির্বাচন কি পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে? নির্বাচনের তারীখ কি অবস্থায় এবং কিভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব?
নির্বাচনের আর মাত্র মাস খানেক সময় বাকি আছে, এমতাবস্থায় একজন প্রতিদ্বন্দ্বী অসুস্থ হওয়ায় এবং এই রোগের মারাত্নক ঝুঁকি বিবেচনা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্যতা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের আগে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মৃত্যু কিংবা অভিষেকের আগে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে বা প্রার্থী অক্ষম হলে কী ঘটবে— এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ প্রেসিডেন্ট নিজে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন না। যদি আবশ্যক হয় তাহলে তা করতে পারেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে এ প্রস্তাবটিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গৃহীত হতে হবে, এটা বি বি সির একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এমন সম্ভাবনা কম, কারণ নিম্নকক্ষ অর্থাৎ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হলে আরো অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। মনে করা যাক, কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যরা তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের মেয়াদ ঠিক চার বছর। তাই সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ চার বছরের শেষে ২০২১ সালের ২০শে জানুয়ারি আপনা আপনি শেষ হয়ে যাবে । তাই নির্বাচনের তারিখ পাল্টালে সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে। আর তা করা যাবে তখনই যখন দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা বা রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা এবং তারপর যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর তিন-চতুর্থাংশ তা অনুমোদন করবে। তাই বলা যেতে পারে, এরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।
এখন দেখা যাক, কোন কারণে যদি প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন তাহলে কি হবে?
প্রেসিডেন্ট যদি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাহলে মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন তিনি। প্রেসিডেন্ট সুস্থ হলে তিনি আবার তাঁর নিজ পদে ফিরে আসবেন।
প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমতা হস্তান্তর করার মতো সুস্থ না হন – তাহলে তাঁর মন্ত্রিসভা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁকে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ ঘোষণা করতে পারেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট তখন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা নিতে পারেন। এর পর যদি ভাইস প্রেসিডেন্টও দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে প্রেসিডেনশিয়াল সাকসেশন এ্যাক্ট আইন অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার এ দায়িত্ব নেবেন।
আমরা আশা করি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন নির্বাচনী মাঠে। সময়মত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান করে আগামী নির্বাচনে সঠিক প্রার্থীকে নির্বাচিত করে দায়িত্বশীলতার প্রমাণ রাখবেন।