আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে দেশ পরিচালিত হচ্ছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন সবাই বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ধরে আছি বলেই, আমাদের ভাল লাগে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে আমরা বাংলাদেশকে পাশে চাই। আমাদের ভাল লাগে, যখন পার্শ্ববর্তী ভারত বলে আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকতে চাই। পরাশক্তি চায়না যখন বলে, আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকতে চাই। বাংলাদেশ সেই জায়গায় গেছে, শুধু বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে ধারন করে আমরা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পথ অতিক্রম করেছি বলেই।
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু পরিবারকে বিশ্বের অদ্বিতীয় বহুমাত্রিক প্রতিভাধর পরিবার উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজে অভিনয়ও করেছেন একটি সিনেমায়। তার জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল একজন সংস্কৃতি কর্মী ছিলেন। অভিনেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের মতো বহুমাত্রিক প্রতিভাধর পরিবার পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। আমরা ধরে রাখতে পারি নাই। বাংলাদেশকে ধরে রাখতে হলে বঙ্গবন্ধুকে ধরে রাখতে হবে। এর কোন বিকল্প নাই। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের সীমা পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে গেছে।
পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকেও হত্যা করা হয়েছিল মন্তব্য করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু আলাদা কিছু না। বঙ্গবন্ধু মানেই তো বাংলাদেশ। চলচ্চিত্র শুধু না; বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা, প্রতিটি ধুলিকণার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক আছে। এমন কোন ক্ষেত্র নাই, যেখানে বঙ্গবন্ধুর বিচরণ নাই।
খালিদ বলেন, সত্তরের নির্বাচনের আগে সবাই নেতা ছিলেন। নির্বাচনে জনগণ বঙ্গবন্ধুকেই তাদের নেতা বানিয়েছেন। সে ম্যান্ডেট নিয়েই তিনি বলেছিলেন, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব; এদেশকে মুক্ত কর ছাড়ব। আমরা সত্যিই মুক্ত হয়েছিলাম। আমাদের চলচ্চিত্র মুক্ত হয়েছিল। চলচ্চিত্র যেন সুস্থ ধারায় চলে সে ব্যবস্থাও করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। সেই হত্যার মধ্যে শিশুরা বাদ যায়নি, গর্ভবতী মায়েরা বাদ যায়নি। সেই হত্যাকাণ্ডে একজন অভিনেতাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন সাংস্কৃতিক কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। একজন খেলোয়াড়কে হত্যা করা হয়েছে। একজন গৃহবধুকে হত্যা করা হয়েছে। এ রকম পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটেনি। এ হত্যাকাণ্ড মূলত একটি ব্যক্তি বা পরিবারকে হত্যা করা নয়; এটা মূলত বাংলাদেশকেই হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। পঁচাত্তরে পরে প্রথম নকল ছবি দোস্ত-দুশমন নির্মাণ করা হয়। কীভাবে দুস্ত দুশমন হয়ে যায়, আমরা দেখেছি- পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর। এ ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি ছবির নাম হয়েছে, বার গুণ্ডা তের পাণ্ডা। এদিকেই সংস্কৃতিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আসলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টেই হত্যা করা হয়েছিল।
বিএনপি সময়ে সিনেমায় অশ্লীলতা ও সেসময়ের সেন্সরবোর্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এসবের চেয়েও বড় অপরাধ হয়েছে যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। তার চেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে যখন চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুকে খাঁটো করে দেখানো হয়। আরো বড় অপরাধ হচ্ছে যখন একজন খলনায়ককে নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সব থেকে অশালীন হচ্ছে যারা মুক্তিযুদ্ধকে চলচ্চিত্রে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে।
দেশের প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে সাংস্কৃতিক খাতে বিনিয়োগ করতে হবে জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশকে ধরে রাখতে হলে আমাদের সংস্কৃতিতে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। নাহলে আমরা যেই পদ্মাসেতুর কথা বলছি, আমরা যে অর্থনীতির কথা বলছি, এ অর্থনীতি আমাদের ধরে রাখা যাবেনা। সংস্কৃতির এ বিকাশটা যদি সঠিক ধারায় না থাকে, সঠিক পথে না যায়… এই শিল্পে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। পদ্মাসেতুতে আমরা যেভাবে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি, ঠিক একই ধরনের বিনিয়োগ এখানে থাকতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সংস্কৃতিকে ধারণ করেন। যেভাবে বাংলাদেশকে তিনি ধারণ করেন। যেভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী সামগ্রিক ও সমান উন্নয়নে বিশ্বাস করেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বাচসাস সভাপতি ফাল্গুনী হামিদের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য সচিব কামরুন্নাহার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা মৌসুমী, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু, সহ-সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনুপম হায়াৎ, প্রধান আলোচক ছিলেন বাচসাস’র সাবেক সভাপতি রফিকুজ্জামান।