আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ এক সময় ছিল মাছ ধরার গ্রাম। এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে চীনের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে। ক্রমবর্ধমানভাবে অর্থ দিয়েও পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে শহরটি। চলতি বছর প্রযুক্তি কেন্দ্রটি প্রথমবারের মতো বিলিয়নেয়ারের বসবাসে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ শহর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ককে হটিয়ে বেইজিং ও সাংহাইয়ের পরের অবস্থানে এখন শেনজেন।
সাংহাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের একটি বার্ষিক র্যাংকিং হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিলিয়নেয়ারের বসবাস বেইজিংয়ে। চীনের রাজধানীতে ১৪৪ জন ধনকুবেরের আবাস। এর পরের অবস্থানে সাংহাই। চীনের আর্থিক কেন্দ্রটিতে ১২১ জন বিলিয়নেয়ার বসবাস করেন। ১১৩ জন বিলিয়নেয়ার নিয়ে প্রথমবারের মতো তৃতীয় শীর্ষ শহর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে শেনজেন। গত বছরের তালিকার তুলনায় বর্তমানে শেনজেনে বিলিনেয়ার বেড়েছে আটজন। যেখানে অবস্থান হারানো নিউইয়র্কের বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ১১০। এছাড়া ১০১ জন বিলিনেয়ার নিয়ে পঞ্চম স্থানে লন্ডন।
হুরুন রিপোর্টের চেয়ারম্যান ও প্রধান গবেষক রুপার্ট হুগওয়ার্ফ বলেন, শেনজেনের চিত্র বাকি বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। যদিও এ তালিকায় শহরগুলো ওঠানামা করতে পারে। তবে শেনজেনে বিলিয়নেয়ারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা একটি মেগাট্রেন্ডকে প্রতিফলিত করে। আগামী বছরগুলোয় শহরটি আরো তরুণ উদ্যোক্তাকে আকৃষ্ট করবে। তালিকাটি শেনজেন কোথায় থেকে বর্তমান অবস্থানে এসেছে এবং কোথায় চলে যাচ্ছে, তার একটি সূচক তুলে ধরেছে।
শেনজেনের এ উত্থানের শুরুটা ১৯৮০ সালে। সে সময় তত্কালীন রাষ্ট্রনায়ক দেং শিয়াওপিংয়ের অধীনে দেশের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শেনজেনকে চীনের প্রথম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছিল। এটি শহরটিকে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টায় বাজার পুঁজিবাদ নিয়ে পরীক্ষা চালানোর সুযোগ করে দেয়। শেনজেনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৯৭৯ সালে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার থেকে ২০২১ সালে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে। আজ শহরটি চীনের বৃহত্তম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আবাসস্থল। এগুলোর মধ্যে হুয়াওয়ে ও টেনসেন্টের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট অন্তর্ভুক্ত। শহরটির প্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সেখানে স্থানান্তরিত হতে অনুপ্রাণিত করছে।
স্থানীয় সরকারের তথ্যানুসারে, গত বছর শেনজেনে ২ হাজার ৫০০টি নতুন উচ্চপ্রযুক্তি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ নিয়ে শহরটিতে মোট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এটি চীনের বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলেরও একটি অংশ। একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক এ কেন্দ্রের লক্ষ্য হংকং ও ম্যাকাওয়ের পাশাপাশি গুয়াংডং প্রদেশের অন্যান্য আটটি শহরের সঙ্গে শেনজেনকে সংযুক্ত করা।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেং চেন বলেন, উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানানোর পরিবেশ শেনেজেনের এ গতিবেগে সহায়তা করেছে। চীনের অন্যান্য সুপার সিটি বা প্রথম সারির শহরগুলোর তুলনায় শেনজেনের জনসংখ্যার কাঠামো এখনো খুব কম বয়সী। এ বিষয়টিও শহরটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে সহায়তা করেছে।
এছাড়া শেনজেনের সরকারি কর্মকর্তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের শীর্ষ প্রতিভাবানদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রচুর সম্পদ ও আর্থিক নীতি সহায়তা দিয়ে চলেছে। তবে কভিড-১৯ মহামারী চীনের অন্য শহরগুলোর মতো শেনজেনকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিশেষত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটি দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করছে। সরকারের জিরো-টলারেন্স নীতি সীমান্ত বন্ধ, গণপরীক্ষা ও কঠোর লকডাউনে শেনজেনের কারখানাগুলো বন্ধের মুখে পড়ে।
হুরুন রিপোর্ট অনুসারে, ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮১। এ সংখ্যা গত বছরের তালিকার চেয়ে ১৫৩ জন বেড়েছে। পাশাপাশি তাদের মোট সম্পদ ৪ শতাংশ বেড়ে ১৫ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে চীনে ১ হাজার ১৩৩ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৭১৬ জন বিলিয়নেয়ারের বসবাস। ২০১৬ সালে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে চীন। তবে দেশটির বিলিয়নেয়াররা গত বছর কঠোর আঘাত পেয়েছে। বিভিন্ন খাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপের কারণে গত বছর দেশটি ১৬০ জন বিলিয়নেয়ার হারিয়েছে।