আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের চার শতাধিক সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের মধ্যে ভারতীয় সংস্থা রয়েছে ১৯টি। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এসব সংস্থা রাশিয়াকে সেই সব পণ্য সরবরাহ করছে, যেগুলো যুদ্ধ ও শান্তি উভয় সময়েই কাজে লাগে। দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য ওই সব পণ্য ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়া ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ বাইডেন প্রশাসনের।
এর আগেও যে কোনো কোনো ভারতীয় সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র সজাগ করে দেয়নি, তা নয়। কারও কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এবার এক সঙ্গে ১৯টি সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা অস্বাভাবিক ধরনের বৃদ্ধি বলে মনে করা হচ্ছে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে যেসব সংস্থার মালিক বা সে দেশের সম্পদ ব্যবহারের অধিকারী, সেগুলো কোনোভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের সম্পদের অধিকার তারা সাময়িকভাবে হারাবে। তাদের সঙ্গে কোনো রকমে লেনদেনও করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কেউও ওই সংস্থার সঙ্গে কোনো রকমে ব্যবসায়িক আদান–প্রদান করতে পারবে না।
গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাপী ৪০০ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় চারটি ভারতীয় সংস্থার নামও রয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার কয়েকটি দেশের কয়েকশ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা ভারতীয় সংস্থাগুলোর একটি হলো ‘অ্যাসেন্ড অ্যাভিয়েশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’। তারা ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে রাশিয়া-ভিত্তিক সংস্থাগুলোতে ৭০০টিরও বেশি চালান পাঠিয়েছে। এসব চালানে দুই লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ‘বিশেষ প্রযুক্তি’ আইটেম ছিল। ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে উৎপাদিত বিমানের উপাদানও।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা আরেকটি ভারতভিত্তিক সংস্থা ‘মাস্ক ট্রান্স’। তারা ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রাশিয়া-ভিত্তিক এস ৭ ইঞ্জিনিয়ারিং এলএলসিকে ৩০০,০০০ ডলারেরও বেশি মূল্যের বিমানের উপাদানের মতো ‘বিশেষ প্রযুক্তি’ এইটেম সরবরাহের সঙ্গে জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্র ‘টিএসএমডি গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের এরেকটি ভারত-ভিত্তিক সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। তারা রাশিয়াভিত্তিক সংস্থাগুলোতে কমপক্ষে ৪৩০০০০ ডলার মূল্যের ‘বিশেষ প্রযুক্তি’ আইটেম পাঠিয়েছে।
এছাড়া ‘ফুত্রেভো’ নামক ভারত-ভিত্তিক আরেকটি সংস্থা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে। রাশিয়াভিত্তিক বিশেষ প্রযুক্তি কেন্দ্রের সাথে ১.৪ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের ‘বিশেষ প্রযুক্তি’ আইটেম সরবরাহের সাথে জড়িত এই প্রতিষ্ঠান।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় কয়েক ডজন চীনা, হংকং, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড ও অন্যান্য দেশের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরাও আছেন।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না নিলেও বাণিজ্যিক খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জোরাল প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি রাশিয়াকে সহায়তা দেওয়া তৃতীয় কোনো দেশকেও রেহাই দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। এই উদ্দেশ্যে সম্প্রতি রাশিয়ার গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আর্কটিক এলএনজি-২ প্রকল্পে জড়িত থাকায় ভারতের দুই শিপিং কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।