মাহমুদ আহমদ: আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের ৮ম রোজা সুস্থতার সাথে অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।
রমজান মাস আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি বড় নেয়ামত। আমাদের উচিত হবে, অবশিষ্ট এ দিনগুলোতে ইবাদতের কোন সুযোগকে যেন হাত ছাড়া না করি।
মুমিন বা মুত্তাকি হওয়ার প্রধান মাধ্যম হলো রোজা। রোজা রাখা বা উপবাস-ব্রত পালনের মধ্যে অনেক পুণ্য নিহীত আছে। গাছে যখন ফুল ফুটে তখন অনেক মৌমাছিকে দেখা যায় ফুল থেকে রস সংগ্রহ করে মৌচাকে মধু তৈরি করতে। এটি মৌমাছির নিত্যদিনের কাজ। যেখানেই ফুলের সন্ধান পায় সেখানেই তারা ছুটে যায়।
অনুরূপভাবে মুমিন মুত্তাকিরাও যেখানে কল্যাণকর কিছু পায় সেখান থেকে তা সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। রমজানের এমন অনেক দিক রয়েছে যা পালনের মাধ্যমে আমরা বিশেষ কল্যাণ লাভ করতে পারি।
এই রমজানের মাধ্যমে আমরা যদি নিজেদের জীবনে পবিত্র পরিবর্তন ঘটাতে পারি তাহলে অবশ্যই আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে গ্রহণ করে নিবেন।
বংশ বা আভিজাত্যে কিছু যায় আসে না, মূল হচ্ছে নেক আমল। এই রমজানে আমরা যেন আমাদের আমলের পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারি। এটি আল্লাহতায়ালার অপার কৃপা যে, তিনি আমাদেরকে রহমতের দশক অতিবাহিত করে মাগফিরাতের দশকেরও শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে। আল্লাহ চাহে তো একদিন পরেই নাজাতের দশকে প্রবেশ করব, ইনশাল্লাহ।
মানুষ যদি ভাবে তাহলে দেখবে যে, আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহরাজির কোন শেষ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যারা আমার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে পুরো চেষ্টা-সাধনা করে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথের দিকে আসার সুযোগ দেই’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)।
এখানে আল্লাহপাক এটাই বলছেন, যারা আল্লাহতায়ালার দিকে আসার চেষ্টা করে, তিনি তাদেরকে তার দিকে আসার সুযোগ করে দেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিকে আসার পথগুলোর মধ্যে একটি পথ হল রমজানের রোজা। রোজা আমাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।
আল্লাহতায়ালা এ মাসে একজন মুমিনের জন্য ইবাদত ও কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ নিবদ্ধ করাকে আবশ্যক করেছেন এবং তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যেহেতু এ মাসটি অত্যন্ত বরকতের মাস, তাই একজন মুমিনের স্মরণ রাখা উচিত, ছোট খাটো রোগ-ব্যধি ও দুর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে, সুযোগের অন্যায় ব্যবহার করে রোজা পরিত্যাগ করা উচিত নয়।
রমজানের আধ্যাত্মিক পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে পুণ্যকর্মের মাধ্যমে জান্নাতে যত বেশি সংখ্যক দরজা দিয়ে প্রবেশ করা সম্ভব মানুষের তাতে প্রবেশের চেষ্টা করা উচিৎ। পূণ্যকর্মের মাধ্যমে আমাদেরকে সেই সকল উচ্চতায় পৌঁছার চেষ্টা করতে হবে যেখানে শয়তান পৌঁছতে পারে না। রমজানের দিনগুলোতে ইবাদতের মান উচ্চ থেকে উচ্চতর করতে থাকা উচিত, সদকা-খয়রাতে আমাদেরকে অগ্রগামী হতে হবে, কেননা আমাদেরকে মহানবী (সা.)-এর উত্তম জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে হবে।
তিনি যেভাবে পবিত্র মাহে রমজানকে অতিবাহিত করেছেন ঠিক সেভাবেই আমাদেরকে রমজান অতিবাহিত করার চেষ্টা করতে হবে।
আমাদেরকে সেই রোজা রাখা উচিত, যা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের উঠাবসা, চলাফেরা, সর্বোপরি আমাদের প্রতিটি কথা ও কাজ দ্বারা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম হবে এবং আমাদের এসব পুণ্য আমল আল্লাহর সাথে মিলিত করবে। তাই আমরা যদি পরিপূর্ণ নিষ্ঠার সাথে রোজা রাখি তাহলে এই রোজা আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য করবে।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে আরো অধিকহারে পুণ্যকর্ম করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট,