আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ হিজরি চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস ‘শাবান’ মাহে রমজানের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। এ মাস বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ। হিজরতের দেড় বছর পর পূর্বতন কিবলা ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা বা ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’-এর পরিবর্তে মক্কা শরিফের মসজিদুল হারাম তথা খানায়ে কাবা তথা কাবা শরিফ কিবলা হিসেবে ঘোষিত ও নির্ধারিত হয় এই শাবান মাসেই। তাই শাবান মাস একদিকে যেমন মুসলিম স্বাতন্ত্র্য ও ইসলামি ঐক্যের মাস, অন্যদিকে তেমনি কাবাকেন্দ্রিক মুসলিম জাতীয়তা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়ার মাস।
আরবি এ মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আশ শাবানুল মুআজজম’ অর্থ মহান শাবান মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত করতেন। ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, রজব আল্লাহ তাআলার মাস, শাবান নবীজি (সা.)-এর মাস, রমজান হলো উম্মতের মাস। রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমি কর্ষণ করা, শাবান মাসে আরও বেশি ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপন করা, রমজান মাসে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল ঘরে তোলা হয়।
রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত অসাধারণ আয়াতটি এ মাসেই অবতীর্ণ হয়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নবীজি (সা.)-এর প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ নবীজি (সা.)-এর জন্য রহমত কামনা করেন; হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৫৬)।
তাই শাবান মাস হলো নবীজি (সা.)–এর প্রতি অগাধ ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং প্রেম-ভালোবাসা প্রদর্শনের মাস এবং মাহে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের মাস।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসে এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ, প্রথম খণ্ড: ২৫৯, শুআবুল ইমান, বায়হাকি,৩: ৩৭৫)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে ১০টি নফল রোজা রাখতেন এবং শাবান মাসে ২০টি নফল রোজা রাখতেন। নবীজি রমজানে পূর্ণ মাস ফরজ রোজা ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি শাবান মাসেই নফল নামাজ, নফল রোজা ও নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি। শব মানে রাত, বারাআত মানে মুক্তি; শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি শবে বরাত নামেই সমধিক পরিচিত। এ রাতে ইবাদত করা ও দিনে রোজা রাখা সুন্নত।
তদুপরি বছরব্যাপী প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার সুন্নাত শাবান মাসে মজবুতভাবে পালন করা উচিত। অধিকন্তু, প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের নফল রোজাও রয়েছে। মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখে রয়েছে নফল রোজা। এ ছাড়া কোনো সময় ও দিন-তারিখ নির্ধারণ ছাড়া যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করা যায়, তা করা উচিত। আর বরকতময় মাহে রমজানের প্রস্তুতি স্বরূপ শাবান মাসে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল নামাজ-রোজা ও আমল করাও প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য।