আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ প্রতিটি দেশেই রমজান মাস নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি। তবে সবার উদ্দেশ্য এক তা হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পবিত্র মাসের তাৎপর্য মেনে চলা। ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল যে দেশে সেই সৌদিতে রমজান মাস উপলক্ষে নানা আয়োজন আর ইবাদতে মশগুল হন মুসলিমরা। বিভিন্ন দেশ থেকেও লাখ লাখ মুসলিম পবিত্র দুই মসজিদে রমজান পালন করতে যান।
সৌদি আরবে রমজান আসলেই শুরু হয় ঈদের আনন্দ। রমজানের চাঁদ দেখার পরই একে অপরকে শুভকামনা জানান বাসিন্দারা। শহরগুলো সাজে নতুন সাজে। বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড এবং পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন লেখা। ঘরবাড়ি সংস্কার এবং ধোয়ামোছা করা হয়।
দান-দক্ষিণার নীরব প্রতিযোগিতা চলে সৌদির বাসিন্দাদের মাঝে। অভাবীদের ঘরে ঘরে খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি পৌঁছে দেওয়া হয়। এভাবে পুরো রমজান জুড়ে সৌদি আরবের সমাজে চলতে থাকে কল্যাণ ও মহৎকর্মের নানামুখী আয়োজন ও প্রতিযোগিতা। সবাই নিজের দান গোপন করতে সচেষ্ট থাকেন।
রোজাদারকে ইফতার করানোর জন্য সৌদিদের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। ইফতার করানোর জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং মসজিদে মসজিদে স্থাপন করা হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষ তাঁবু। বছর জুড়ে যেসব ভিনদেশী শ্রমিকরা সৌদিদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন, রমজান মাসে এসব তাঁবুতে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। মেহমান হয়ে বসে থাকেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কর্মীরা। আর খাদেমের মতো তাদের সামনে ইফতার বিতরণের কাজ করেন সৌদিরা। রোজাদারের সেবার নিমিত্তে বহু তাঁবু ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক উদ্যোগে স্থাপন করা হয়। আরও মজার বিষয় হলো- কোন তাঁবু কে স্থাপন করেছেন তা জানার কোনো উপায় নেই। অনেক বেসরকারি এনজিও ট্রাফিক সিগনাল ও চেকপোস্টগুলোতে ইফতার বিতরণের ব্যবস্থা করেন।
মসজিদে নববীর আশপাশে ক্ষুধার্ত মানুষ যেমন লোভনীয় খাবারের দিকে ছুটে বেড়ায়, মদিনার মানুষেরা ঠিক সেভাবে ছুটোছুটি করেন রোজাদারকে নিজের দস্তরখানে বসানোর জন্য।
পবিত্র রমজান মাস এলে সৌদি আরবের দৈনন্দিনের রুটিনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। দিনের কোলাহল থাকে রাতভর। বেশিরভাগ লোক রমজানের রাতে ঘুমায় না। দোকান-পাট, শপিংমল, হোটেল-রোস্তোঁরাসহ অনেক অফিস-আদালতও সারা রাত খোলা থাকে। সৌদিরা রোজার সময় সাধারণত: ফজরের পর থেকে জোহর পর্যন্ত ঘুমায়। যেহেতু হাদিসে রমজানের ইবাদত-বন্দেগি করে কল্যাণ অর্জনের কথা বলা হয়েছে, সে হিসেবে বলা চলে, কল্যাণকামীরা জেগে থাকেন রাতে ইবাদতের জন্য।
সৌদি আরবে শেষ দশকে মসজিদগুলোতে তারাবির নামাজের পর দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে শুরু হয় কিয়ামুল লাইল। সাহরির পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে। গভীর রাতে কুরআনের আয়াত শুনলে মনে হয় যেন জান্নাতি সুর দুনিয়ার আলোড়িত হচ্ছে। ঈদের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত এমন জান্নাতি পরিবেশ বজায় থাকে।
আমাদের দেশে রমজান আসার আগেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি শুরু করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তবে সৌদি আরবের সুপার মার্কেটগুলোর দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্ন কোম্পানি ও সুপারমার্কেট নিত্যপণ্যে প্রচুর ছাড়ের ব্যবস্থা করে। যাতে সবাই তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য পবিত্র মাসে সহজে কিনতে পারে।
সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে শ্রমিকদের রমজান মাসে ডিউটি কমিয়ে দেওয়া হয়। এমনিতে সৌদিতে প্রতি মাসের বেতন-ভাতা মাস ফুরানোর আগেই ২৫ তারিখে পরিশোধ করা হয়। তবে রমজান মাসে তা আরও এক ধাপ এগিয়ে ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যেই বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়।
ইসলাম ধর্মের শুরু যেখানে, সেই সৌদি আরব এ মাহে রমজান ও ইফতার যে বিশেষভাবে উদযাপিত হবে তাতে কোন সন্দেহই নাই। সৌদিরা সাধারণত ইফতারের পর সেহরি পর্যন্ত জেগে থাকে। তাই সৌদি ইফতারের আয়োজনটাও হয় অনেক জাঁকজমক পূর্ণ। পুষ্টিকর খাবারে পরিপূর্ণ সৌদি ইফতারে থাকে উন্নত মানের খেজুর, ভিমতো (আঙ্গুর রসের শরবত), লাবান, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, তামিজ ( একধরনের রুটি), বোরাক ( মাংসের পিঠা), মানডি ( মুরগী ও ভাত দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার) অথবা ভেড়া/মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি খাবসা।
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে সৌদি আরব ও তার মিত্রদের। তবে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এই যুদ্ধ সাময়িক যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি জোট।
আল্লাহ বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য আর এর প্রতিদান আমিই দিবো’। এজন্য মুসলিমরা পবিত্র মাসে নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর পানাহ চান একমাত্র প্রভুর কাছে।