আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিদায় এক প্রকার নিশ্চিত। দেশটির ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা ভোটে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিরোধীপক্ষের প্রয়োজন ১৭২ ভোট। এরই মধ্যে ১৭৭ ভোট নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা। বাকি ছিল শুধু পাকিস্তানের আইনপ্রণেতাদের আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটি। গতকালই তা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত হওয়ায় প্রক্রিয়াটি আরেকটু দীর্ঘায়িত হলো। অধিবেশন পুনরায় শুরু হবে আগামী রোববার।
প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘায়িত করে তুলেছে রহস্যময় এক চিঠির আবির্ভাব। চিঠিটিকেই এখন দেখা হচ্ছে ইমরান খান সরকারের একমাত্র লাইফলাইন হিসেবে। ইমরান খানের দাবি, তাকে উত্খাত করতে ষড়যন্ত্র করছে বিদেশীরা। তারই প্রমাণ রয়েছে চিঠিটিতে। সরাসরি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সম্প্রচারিত সেশন অথবা পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে এ চিঠি উপস্থাপন করবেন তিনি। তবে এ ধরনের অধিবেশনের কোনো সময় এখন পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা, চিঠিটি সামনে আসার পর পার্টির বিদ্রোহী নেতা ও পক্ষত্যাগী শরিকরা তাকে উত্খাতের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবেন।
তিনদিন বিরতির পর গতকাল পুনরায় শুরু হয় পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন। তবে এ অধিবেশন খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। স্থানীয় সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টায় এ অধিবেশন শুরু হয়। এর পর পরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বাবর আওয়ান তা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব আনেন। তবে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
এরপর ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর ঘোষণা দেন। এ সময় তত্ক্ষণাৎ অনাস্থা ভোট আয়োজনের জোর দাবি জানাতে থাকেন পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা। ‘গো ইমরান গো’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এ সময় বিরোধীপক্ষের আচরণকে ‘লঘু’ আখ্যা দিয়ে অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দেন কাসিম সুরি।
এর আগে গত ২৮ মার্চ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের এক লিখিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ। সেদিনই তা পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য অনুমোদন পায়।
এর আগে বুধবার রহস্যময় চিঠিটির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনার জন্য একটি জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠক আহ্বান করেন ইমরান খান। এতে আকস্মিক দলবদল করে বিরোধীপক্ষে যোগ দেয়া দুই শরিক মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) ও বালুচিস্তান আওয়ামি পার্টির (বিএপি) প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা সাড়া দেননি। এছাড়া ইমরান খান এদিন নির্বাচিত কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানান। তাদের তিনি জানিয়েছেন, আলোচিত চিঠিতে বিদেশী এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার পাকিস্তানের প্রতি হুমকি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষা ব্যবহারের প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া ইমরানকে উত্খাতে অনাস্থা প্রস্তাব ব্যর্থ হলে পাকিস্তানকে এর পরিণাম ভুগতে হবে বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
চিঠিটিতে বিদেশী ওই কর্মকর্তার সঙ্গে পাকিস্তানি এক কূটনীতিকের আলোচনার বিবরণ রয়েছে। এতে বিদেশী ওই কর্মকর্তা পাকিস্তানি কূটনীতিককে জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো খুশি নয়। তারা এ বিষয়ে পাকিস্তানের বিপরীত অবস্থান প্রত্যাশা করে।
একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ইমরান খানের রাশিয়া ভ্রমণের সিদ্ধান্ত তার একারই, পাকিস্তানি প্রশাসনের নয়। এর বিপরীতে পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট আরো অনেকের যৌথ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই ইমরান খান রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন।
শাহবাজ শরীফ অনাস্থা ভোটের লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়ার কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় উল্লিখিত বিদেশী কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমাদের মোটেও খুশি করতে পারেনি। শিগগিরই পাকিস্তানের পার্লামেন্টে একটি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপিত হবে। এটি যদি সফল হয়, তাহলে পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। অন্যথায় পাকিস্তানকে মারাত্মক পরিণতি ভুগতে হবে। আমরাও পরবর্তী সময়ে কোনো যোগাযোগ করব কিনা, সে বিষয়ে অনাস্থা ভোটের পরই সিদ্ধান্ত হবে।