মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা যাচাই-বাছাই ও সংশোধনের পর নতুন করে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।ওবায়দুল কাদের বলেন, “এ বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে এবং এ বিষয়টি আমাদের নেত্রী এরইমধ্যে জানেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।“মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ভুল সংশোধনের আশ্বাস দেওয়অ হয়েছে। আমাদের নেত্রীও তাদের যাচাই বাছাই করে… এখানে যেন ভুলভ্রান্তি না থাকে, ভুলভ্রান্তি থাকলে সংশোধন করে তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছেন।”
বিজয় দিবসের আগের দিন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ ওই তালিকা প্রকাশ করে।মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সরকারের কাছে বিভিন্ন মহল থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রকাশের দাবি করা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে।কিন্তু প্রথম দফায় এই তালিকা প্রকাশের পর বরিশাল, বরগুনা, রাজশাহী, বগুড়া ও ঝালকাঠি জেলার মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও একাত্তরের আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজনের নাম দেখে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ কর্মসূচিও দেওয়া হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা এসব ভুল দ্রুত সংশোধন করে নতুন তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। আর এই ভুলের পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে আসা এই সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, দালাল আইনের আওয়তায় তালিকাভুক্ত রাজাকারদের গেজেট অনুসরণ করা হলে এই বিভ্রান্তি তৈরি হত না। রাজাকারের এই তালিকা প্রকাশের আগে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা ছিল জরুরি। এই প্রেক্ষাপটে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একাত্তরে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না, এমন কারো নাম সরকারের প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় এসে থাকলে তা বাদ দেওয়া হবে।তবে ভুলের দায় অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেছেন, “এই তালিকাটি ১৯৭১ সালে করা। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করেছি।”অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা সরবরাহ করার সময় যেসব ব্যক্তির নাম-মামলা প্রত্যাহার হয়েছিল, সে বিষয়ে ‘নোট’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই সব ‘নোট’ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই নোটগুলো বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী তালিকা আবার প্রকাশ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলছেন, মন্ত্রণালয় যেহেতু বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে, যাচাই বাছাইয়ের অঙ্গীকার করেছে, সেহেতু এ নিয়ে আর কোনো ‘প্রশ্ন থাকার কথা নয়’।