রাতের কোরআন তিলাওয়াতে অশেষ ফজিলত

মুফতি আব্দুল্লাহ আল ফুআদ: কোরআন ফজিলতপূর্ণ গ্রন্থ। এর বিশুদ্ধ তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। প্রতিটি হরফ তিলাওয়াতের বিনিময়ে সর্বনিম্ন দশটি নেকি পাওয়া যায়। শুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত জানা মুমিন নর-নারীরা এ ইবাদতটি করতে পারে খুব সহজেই।

দিন-রাতের যেকোনো অবসরে বরকতময় কোরআনের এই তিলাওয়াত মুমিনের আমলনামাকে সমৃদ্ধ করে। হরফপ্রতি দশ নেকি ছাড়াও দিন-রাতের বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট কিছু আয়াত ও সুরার তিলাওয়াতে রয়েছে বিশেষ ফজিলত। এ লেখায় রাত্রিকালীন কয়েকটি আয়াত ও সুরা পাঠের ফজিলত উল্লেখ করা হলো।

তিনবার ইখলাস পাঠে পূর্ণ কোরআনের সওয়াব

পবিত্র কোরআনের সহজ ও ছোট সুরাগুলোর একটি সুরা ইখলাস। এই সুরা পাঠকারীকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। একবার এই সুরা তিলাওয়াত করলে এক- তৃতীয়াংশ কোরআন পাঠের সওয়াব পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) একবার সাহাবিদের বলেন, তোমরা কি এক রাতে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? মহানবী (সা.) তখন বলেন, সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৫)

দুই আয়াতে সারা রাত ইবাদতের সওয়াব

সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থগুলোতেও এই দুটি আয়াত উল্লেখ থাকার কথা জানা যায়। আবু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, সুরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দুটি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ দুটি আয়াত যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৪০০৮)

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, অর্থাৎ এই দুটি আয়াত সারা রাত ইবাদতের সওয়াব প্রাপ্তিতে যথেষ্ট।

আয়াতুল কুরসি পাঠে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। ’ (বুখারি, হাদিস: ২৩১১)

পরকালে সুপারিশ করবে সুরা মুলক

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১)

হাদিসে পাওয়া যায়, রাসুল (সা.) এই সুরা না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯২)

অভাব দূর করে সুরা ওয়াকিয়া

সুরা ওয়াকিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসিরের কিতাবে অন্তিম রোগশয্যায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কথোপকথন এসেছে। উসমান (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনো উপবাস থাকবে না। ’ (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন : ৮/১০৬; সাফয়াতুত তাফাসির ৩/৩০৪; ইবনে কাসির ৪/২৮১)

‘তিন কুল’ পাঠে শয়তানের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা

মুআজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে নামাজ পড়ার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বলেন, বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, কী বলব? তিনি বলেন, তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সুরা ইখলাস, সুরা নাস ও ফালাক পড়বে। এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২)

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব পুরো শরীরে তিনবার দুই হাত বোলাতেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

যত বেশি তিলাওয়াত তত বেশি মর্যাদা

রাতে কোরআন তিলাওয়াতের আয়াতসংখ্যার পরিমাণ অনুযায়ী তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াত করে সে গাফেল বলে গণ্য হবে না, আর যে ব্যক্তি ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করে সে আনুগত্যশীল বলে গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করে তার জন্য সওয়াবের ভাণ্ডার লেখা হবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪০০)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সর্বদা কোরআন তিলাওয়াতের তাওফিক দান করুন।

SHARE THIS ARTICLE