রানি এলিজাবেথের সাত দশক, অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিলেন প্রিন্স চার্লস

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিপতি হওয়ার কথা ছিল না তার। কিন্তু বাধ সাধে নিয়তি। তিনি অধিষ্ঠিত হন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে। রবিবার ৭০ বছর পূর্ণ হলো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনের।

ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস তার মা রানি এলিজাবেথ-এর সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্তিতে রবিবার আয়োজিত শ্রদ্ধা নিবেদন আয়োজনে নেতৃত্ব দেন। চার্লস বলেন যে এটি দেশটির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং দেশের প্রতি রানির অবদানকে উদযাপন করার একটি সুযোগ।

চার্লস শনিবার রানির প্রদত্ত বিবৃতির জন্যও রানীকে ধন্যবাদ জানান। সেখানে রানি বলেন, তিনি আশা করেন যে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে চার্লস যখন রাজা হবেন, তখন রাজার স্ত্রী হিসেবে ক্যামিলা তার ভূমিকা পালন করবেন।

চার্লস এক বিবৃতিতে বলেন, “আমার মায়ের প্রকাশ করা অভিলাষ কতটা সম্মানের, সে ব্যাপারে আমরা সম্যক অবগত।” তিনি আরও বলেন, “যখন আমরা একসাথে মহামান্য রানী এবং দেশের জনগণকে সেবা ও সমর্থন করার চেষ্টা করেছি, তখন আমার প্রিয় স্ত্রী সবসময়ই আমার পাশে আমার সমর্থক হিসেবে ছিল।”

“এই বছরের অভূতপূর্ব প্লাটিনাম জয়ন্তী রানীর কর্তব্য পালনকে উদযাপন করতে আমাদের সবাইকে আরও কাছে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। সামনের বছরগুলোতেও আমরা তারই দৃষ্টান্তে এগিয়ে যাব।”

গত ৭০ বছরে মণিমুক্তাখচিত মুকুট পরা আকর্ষণীয় তরুণী রানি থেকে সম্প্রতি জাতির পিতামহী হয়েছেন তিনি। দেখেছেন ব্রিটিশ উপনিবেশের পতন, বহু সংস্কৃতিবাদের আবির্ভাব, সন্ত্রাসবাদের উত্থান, ব্রেক্সিট নিয়ে দর কষাকষি এবং সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ অতিমারি। সদা পরিবর্তনশীল বিশ্বে তিনি থেকেছেন অবিচল- রাজনৈতিক কোন্দলের ঊর্ধ্বে থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রিটেনের স্বার্থ উপস্থাপন করেছেন। দেশের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন, ব্যর্থতায় দিয়েছেন সান্ত্বনা।

তার পুর্ববর্তী শাসকদের যেমন “দিগবিজয়ী উইলিয়াম”, “পুরোহিত এডওয়ার্ড” এবং “মহান আলফ্রেড”–এর মতো রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও রাজকীয় উপাধি পাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ইতিহাসবিদ হুগো ভাইকারস।

দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় পুত্রের জ্যেষ্ঠ কন্যা। ৯৫ বছর বয়সী রানীর জন্ম ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল। রাষ্ট্রীয় বাড়ি, আস্তাবলে ঘোড়া, পোষা কুকুর আর একজন উপযুক্ত স্বামী-এমনই একটা জাঁকজমকহীন তবে স্বাচ্ছন্দ্য জীবন হতে পারত তার।

অথচ এক দশকের মধ্যেই বদলে যায় পট। তার চাচা রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্রের এক তালাকপ্রাপ্ত নারী ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করতে রাজসিংহাসন ত্যাগ করেন। তখন রাজা হন দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ। ভবিষ্যৎ রানী হওয়ার পথ খুলে যায় ষষ্ঠ জর্জের জ্যেষ্ঠ কন্যার।

২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া চলচিত্র “দ্য কিংস স্পিচ” থেকে রাজা ষষ্ঠ জর্জের তোতলা হওয়ার কথা জানা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনে বোমা নিক্ষেপিত হলেও রাজধানী ছেড়ে যাননি এই সমাদৃত রাজা।

দেশ শাসনে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রাজপরিবার থেকে প্রথম নারি সদস্য হিসেবে ১৯৪৫ সালে অক্সিলিয়ারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসে যোগদান করেন তিনি। তার ২১তম জন্মদিনে তিনি দেশ এবং এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা দেশগুলো নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গের প্রতিজ্ঞা করেন।

১৯৫২ সালে অসুস্থ বাবাকে রেখে কমনওয়েলথ দেশগুলো সফরে বের হন তিনি। স্বামী প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে কেনিয়ায় অবস্থানকালে বাবার মৃত্যু সংবাদ শোনেন তিনি।

অনতিবিলম্বে সফর বাতিল করে লন্ডনে ফেরেন তিনি। কালেভদ্রে মুকুট এবং রাজদণ্ড হাতে দেখা গেলেও, বেশিরভাগ সময় চওড়া পাড়ের হ্যাট এবং সাধারণ ব্যাগ নিয়ে ঘোরেন তিনি।

সাত দশকের শাসনকালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অধীনে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী কাজ করেছেন এবং রানী যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ জন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।

বছরে একবার বাকিংহাম প্যালেস থেকে হাউস অব লর্ডসে সংসদের অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে যান রানী। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সন্মানে আয়োজন করেন রাজকীয় ভোজের।

১৯৫৬ সালে মিসর ব্রিটেনের কাছ থেকে সুয়েজ খাল কেড়ে নেয়। ১৯৮০ সালে হয় শ্রমিক বিদ্রোহ। ২০০৫ সালে লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলা হয়। তার দীর্ঘতম শাসনকালে সবকিছু প্রত্যক্ষ করেও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকেছেন অবিচল।

অতিমারির সময় স্বামী প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্যে আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতো কোভিড বিধিনিষেধ এবং শারীরিক দুরত্ব মেনে কালো রঙের মাস্ক পরে বসেছিলেন তিনি।

SHARE THIS ARTICLE